নিউ ইয়র্কে ফোবানার সংবাদ সম্মেলনে হট্টগোল

উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) এর এক পক্ষের সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তুমুল হট্টগোল হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2019, 01:56 PM
Updated : 29 Oct 2019, 01:56 PM

স্থানীয় সময় রোববার নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে ফোবানা কনভেনশনের একপক্ষের হোস্ট হওয়ার নির্বাচনে পরাজিত দলের লোকজন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন।

এবছর নিজেদের মধ্যে বিভক্ত ফোবানা দুইটি সম্মেলন করে। লেবার ডে উইকেন্ড (৩০ আগস্ট-১ সেপ্টেম্বর) এ ফোবানার এ অংশের কনভেনশন হয় নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যারিয়ট হোটেলে। একইসময়ে অপর অংশের কনভেনশন হয় ৩০ মাইল দূর লং আইল্যান্ডে নাসাউ কলিসিয়ামে।

নাসাউতে ফোবানা কনভেনশনের শেষদিন সন্ধ্যায় ২০২১ এর হোস্ট নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩৫তম কনভেনশনের জন্যে হোস্ট হিসেবে জয়ী হয়েছে (৩০ ভোটে) ‘আমেরিকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি’।

সেই অনুযায়ী ডিসিতে ফিরে গিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। অপরদিকে, ওই ভোটে পরাজিতরা নানা অভিযোগে পক্ষ ত্যাগ করে ফোবানার ‘মোহাম্মদ হোসেন-কাজী আজম’ গ্রুপের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতেই এসেছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।

তারা তাদের লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আজ আমাদের ফোবানার সাথে বিভ্রান্ত মানসিকতার নেতৃত্বাধীন অন্য একটি ফোবানার সৎ ও সচেতন অংশের সংযুক্তি ফোবানার ইতিহাসে আরো একটি মাইলফলকের সংযোজন। আমরা বিশ্বাস করি এই কাঙ্ক্ষিত সংযুক্তি ঐক্যবদ্ধ ফোবানাকে আরো গতিময় করে এর লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা শরাফত হোসেন বাবু, আবু সরকার, শেখ সেলিম এবং করিম সালাহউদ্দিনসহ অনেকেই সমস্বরে জানান যে, ভোটের সময়েই তারা প্রতিবাদ করেছেন। এসময় ওই ভোট-কক্ষের বাইরে অপেক্ষমান ছিলেন এমন সাংবাদিকরা জানান যে, এই দাবি সত্য নয়। ভোটের সময় কেউই কোন উচ্চবাচ্য বাইরে করেননি, এমনকি ওই ভোটের ফলাফল বর্জনের তথ্যও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

সাংবাদিকদের এ কথায় তারা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলে সংবাদ সম্মেলন একযোগে বর্জনের হুমকি দেন সাংবাদিকরা। এ অবস্থায় বিব্রত স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি, সাবেক চেয়ারম্যানসহ সকলেই প্রকাশ্যে দু:খ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। সাংবাদিকরা প্রত্যাবর্তন করেন সংবাদ সম্মেলনে।

কমিউনিটির সামগ্রিক উন্নয়নে সাংবাদিকদের অপরিসীম ভূমিকার প্রশংসা করেন গিয়াস আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্বে আরো অংশ নেন স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালু এবং আলী ইমাম, হোস্ট কমিটির চেয়ারপার্সন গিয়াস আহমেদ, ৩৩তম ফোবানা কনভেনশনের সদস্য-সচিব ফিরোজ আহমেদ, যুগ্ম সদস্য-সচিব তাজুল ইমাম, নিশান রহিম, কাজী এলিন, হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, কানাডায় আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় ৩৪তম ফোবানা কনভেনশনের আহ্বায়ক তৌফিক এজাজ, শরিফউল্লাহ, ফোবানায় বিলুপ্ত এনএবিসির কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা ফোবানার আবু রুমি এবং মোহাম্মদ কাজল।

আগামী বছর ফোবানার অপর অংশের কনভেনশন হবে টেক্সাসে। ফোবানার মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের প্রত্যয়ে ১৯৮৭ সালে এই কনভেনশনের যাত্রা শুরু হলেও ৮৫ শতাংশ সময়েই বিভক্তির অবতারণা হয়েছে। এখনও লাগাতারভাবে বিভক্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফোবানা কনভেনশন। এজন্যে প্রবাসীদের বড় একটি অংশ ব্রীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে ফোবানার প্রতি। অথচ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখের অধিক বাংলাদেশীর ৮০ শতাংশ এ দুটি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় মূলধারার প্রশাসনে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হবার পথ সুগম হয়েছে।

কিন্তু অনৈক্য বিরাজিত থাকায় সে প্রত্যাশার কিয়দংশও পূরণ হয়নি। মা-বাবা-অভিভাবকদের বিভক্তি-বিবাদের প্রেক্ষিতে প্রবাসে জন্মগ্রহণকারী প্রজন্মও ক্রমান্বয়ে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

এই সংবাদ সম্মেলনের পরই ফোবানার অপর অংশের পক্ষ থেকে নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে। ‘লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট ও নাসাউ কলোসিয়াম এর ফোবানা নেতাদের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন’ এর ব্যানারে নিউইয়র্কে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে এক বিবৃতিতে ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান শাহ হালিম, ভাইস চেয়ারম্যান ও মিডিয়া সাব-কমিটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আহসান চৌধুরী।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এক শ্রেণির লোক ফোবানার নাম ভাঙ্গিয়ে ফোবানার সুনাম ক্ষুণ্ণের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।” নেতারা বলেন, “ফোবানার কার্যকরী কমিটির কোনও সদস্য বা নাসাউ কলোসিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক কমিটির কোন নেতৃবৃন্দ এই অবৈধ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেননি। কিছুসংখ্যক লোক নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ফোবানার বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এই সুবিধাবাদী মহলের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘নাসাউ কলোসিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩৩তম ফোবানায় নির্বাচনে হেরে গিয়ে একটি চিহ্নিত মহল ফোবানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই মহলের কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বর্তমানে এই সুবিধাভোগী ও ফোবানার সুনাম ক্ষুণ্ণকারী মহলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন বিবেচনাধীন রয়েছে।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!