প্রবাসীর স্মৃতি: বুয়েটের আবাসিক হলে যেমন ছিলাম

বারোটা বছর পড়াশোনা করে একসময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিয়ে ফেললাম। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমাদের কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের পোদ্দার স্যার বলেছিলেন, তোরা সিঁড়ির দশটা ধাপ পার করে কলেজে ভর্তি হয়েছিস। তোদের সামনে এখন অনেকগুলো দরজা খোলা। তোদেরকেই বাছাই করতে হবে তোরা কোন দরজা দিয়ে ঢুকতে চাস।

মো. ইয়াকুব আলী, সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2019, 08:53 AM
Updated : 20 Oct 2019, 08:53 AM

এই কথার মানে ছিলো উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কেউ হবে ডাক্তার, কেউ হবে বিজ্ঞানি, কেউ হবে প্রকৌশলী আবার কেউ হবে নামকরা আর্টিস্ট। আর একটু ভুল করলেই পরে যেতে হবে সবার পিছনে আর সেখান থেকে ফিরে আসা আসলেই অনেক কঠিন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আর ফলাফল বের হবার আগের সময়টাকে কাজে লাগাতে বন্ধুরা সব ঢাকায় চলে গেলো, যার যার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোচিং করতে।

কিন্তু আমি থেকে গেলাম কুষ্টিয়ায়। বন্ধু শাহেদ প্রতি সপ্তাহে তার কোচিংয়ের শিটগুলো আমাকে ফটোকপি করে ডাকঘরের মাধ্যমে পাঠাতে শুরু করলো। আর এলাকার বড় ভাইয়েরা তাদের যত নোট আর বইপত্র ছিলো সবই আমাকে দিয়ে দিলো। এভাবে একসময় আমার হাতে একগাঁদা ভর্তি গাইড আর নোট এসে গেলো। এরপর একসময় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্সও পেয়ে গেলাম। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার তখনও ফলাফল বের হয়নি।

বাংলদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবাই চায় ডাক্তারি পড়তে, তাই সেই পনেরটা দিন আমাকে মোটামুটি পালিয়ে বেড়াতে হলো। কারণ আমি ডাক্তারি পড়তে চাই না। তার কারণ দুটো। এক- আমি মোটেও পড়ুয়া নই। দুই ডাক্তারি পড়তে গেলে শুধু পড়াশোনা করতে হবে, টিউশনির সুযোগ কম। কিন্তু আমাকে টিউশনি করে নিজের এবং ছোট দুইটা ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে হবে। তাই পনের দিনের মাথায় যখন হাবিব ভাইয়ের মাধ্যমে বুয়েটে চান্স পাওয়ার খবর পেলাম তখন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম।

আমার প্রাথমিকের পাঠ শুরু হয়েছিলো চরভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে পড়াশোনার কোনোই ধরাবাঁধা রুটিন বা চাপ ছিলো না। এরপর জগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেখানে আমার সামান্য পড়াশোনাতেই আমি ছেলেদের মধ্যে বরাবরই ক্লাসে দ্বিতীয় হতাম। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে বুঝতে পারলাম কুষ্টিয়াতে আমার অবস্থান কতটা নিচে।

যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হওয়াতে তেমন একটা ক্লাস করতে হতো না। সব পড়াশোনায় চলতো স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ে। ব্যাচে ব্যাচে পড়া আর নিজে নিজে সেগুলো তৈরি করা। পড়ার কোন বাড়তি চাপ বা রুটিন নেই। বুয়েটে ভর্তি হবার পর জীবনে প্রথমবারের মতো বুঝতে শিখলাম পড়াশোনা আসলেই অনেক কঠিন বিষয়। পড়াশোনাকে আয়ত্ত্ব করতে হলে কঠিন পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং রুটিন লাগে।

কলেজ পাশ করে এসে আমার মনে হলো আমাকে কেউ কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। রুটিন করে ক্লাস করা, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া, ব্যবহারিক ক্লাস করা। আমার জীবনটা মোটামুটি হাঁপিয়ে উঠেছিলো। মাঝে মধ্যে মনে হতো পড়াশোনা ফেলে পালিয়ে কুষ্টিয়া চলে যাই। চুলোয় যাক প্রকৌশলী হবার বাসনা। ঠিক তখনই আমাকে আপন করে নিলেন বুয়েটের বড় ভাইয়েরা। 

আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একান্নবর্তী পরিবারে মানুষ হয়েছিলাম। মা এবং দাদি সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন বলে আমাকে মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন আমার বড় মা মানে আমার দাদির মা। এছাড়াও সবসময় বাড়ি ভর্তি থাকতো একগাদা লোকজনে। সবার আদর স্নেহ পেয়ে শৈশবটা দারুণ কেটেছে একসময়। ঢাকা শহরে আমি তাই একটা একান্নবর্তী পরিবারের অভাব অনুভব করতাম। আমার সিট পড়লো ড. এম এ রশীদ হলে।

আমাদের ফ্লোরের একটা ট্র্যাডিশন ছিলো সেটা হচ্ছে নতুনদেরকে বরণ করে নেয়া, যেটাকে বাইরের মানুষ ‘র‌্যাগিং’ বলেই জানে। অবশ্য স্থাপত্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে নেয়ার জন্য আলাদাভাবে র‌্যাগ দেয়া হতো বলে শুনেছি। কিন্তু কখনও সামনাসামনি দেখিনি, তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে স্থাপত্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সিনিয়র জুনিয়র বন্ডিংটা ছিলো সবচেয়ে মজবুত। এর কারণ হিসেবে র‌্যাগিংটাকেই ক্রেডিট দেয়া হতো। যাই হোক, আমাদের ফ্লোরের কথায় ফিরে আসি।

একটা নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে ফ্লোরে আমরা যারা নতুন এসেছি তাদের সবাইকে কক্ষ নং ২০৩-এ ডেকে পাঠানো হলো রাত দশটার পর। কারণ টিউশনি করে ভাইয়াদের ফিরতে ফিরতে দশটা বেজে যায়। আমরা ভয়ে ভয়ে সেখানে উপস্থিত হলাম। গিয়ে দেখি সেখানে ফ্লোরের সবাই আগে থেকেই উপস্থিত। সেই কক্ষের সব দরজা জানালা বন্ধ। কক্ষের মাঝ বরাবর আমাদের জন্য চেয়ার রাখা। আর বাকিরা বসেছেন দুপাশের বিছানায়।

আমাদেরকে মাঝের চেয়ারগুলোতে বসতে বলা হলো। আমরা ভয়ে ভয়ে বসলাম। এরপর উনারা সবাই নিজেদের পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে বললেন আমাদের পরিচয় দিতে। পরিচয় পর্ব শেষ হলে শুরু হলো বারোয়ারি আড্ডা। আমাদের কোন পছন্দের মানুষ আছে কিনা? আমাদের কারো কোন স্পেশাল পরিচয় আছে কিনা। এমনই সব প্রশ্ন। আমরা এক একটা উত্তর দিই আর উনারা সেটা লুফে নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন এবং ফ্লোরের কার চরিত্রের সঙ্গে আমাদের মিলে যাচ্ছে সেটা বলে দেন।

আমরা অবাক হয়ে দেখলাম একদল দামাল ছেলে একে অপরের পিছনে লাগছে। আমাদের কথা মনে হয় বেমালুম ভুলেই যাচ্ছে। সবাই সবাইকে বাঁশ দিতেই যেন বেশি ব্যস্ত। আর সেই বাঁশ কখন যে কার দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝা মুশকিল। এখানে বাঁশ বলতে একজন অন্যজনকে পঁচানো বুঝানো হয়েছে। সব শেষে আমাদেরকে বলা হলো এই কক্ষের মধ্যে যা আলোচনা হলো তা এই কক্ষের মধ্যেই থাকবে, এর বাইরে যাবে না।

এরপর আগে থেকেই এনে রাখা মুড়ি-চানাচুর দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হলো। আমি তখনই বুঝে গেলাম কুষ্টিয়ায় আমার পরিবার ফেলে এসে আমি যেন আবারও একটা একান্নবর্তী পরিবার পেলাম। এরপর থেকেই আমরা অনেক সহজ হয়ে গেলাম সবার সঙ্গে। আর সবার নামও জেনে গেলাম। যে কোন সমস্যায় বড় ভাইয়েরা মা-বাবার স্থান আবার কখনওবা বন্ধুর জায়গা নিয়ে নিলো। ফ্লোরের কেউ একজন অসুস্থ, বাকি সবাই তার সেবায় উঠেপড়ে লেগে গেলো। কেউ মাথায় পানি ঢালছে, কেউবা ডাক্তার ডাকছে কেউবা ঔষুধ আনতে যাচ্ছে।

ফ্লোরের কারো জন্মদিন আসলেই সবাই মিলে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে তাস খেলা, সিনেমা দেখা আর গল্পের বই পড়া। বুয়েট জীবনের আমি যে পরিমাণ সিনেমা দেখেছি এবং গল্পের বই পড়েছি এরপরের পনের বছরেও আমি অতটা সিনেমা দেখা বা গল্পের বই পড়ার সুযোগ পাইনি। ফ্লোরের বড় ভাইয়েরা শুধু যে বিনোদনের ব্যাপারে সহযোগী ছিলেন তা নয়, তারা পড়াশোনার ব্যাপারেও অনেক সহযোগিতা করতেন।

আবরার ফাহাদ স্মরণে মোমবাতি মিছিলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বুয়েটে লেখাপড়ার নোটপত্রকে বলা হয় ‘চোথা’। বড় ভাইয়েরা তাদের পড়া শেষ হয়ে গেলে উনাদের সব চোথা আমাদেরকে বিনামূল্যে দিয়ে দিতেন। পড়াশোনায় কেউ খারাপ করলে তাকে বুদ্ধি দিতেন কোন বিষয় কিভাবে পড়লে ভালো করা যাবে। এমনকি কেউ পরীক্ষায় খারাপ করলে বকাও দিতেন। আমি দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় টার্মে একটা বিষয়ে ফেল করলাম। বড় ভাইয়েরা তেড়ে আসলেন। ওরে তুইতো আমাদের ফ্লোরের নাম ডুবিয়েছিস। নন-ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্টে কি কেউ ফেল করে না কিরে! এভাবেই চলতে থাকে আমাদের খুনসুটি।  

হল জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিলো আমাদের সম্মিলিত আড্ডা। একই আড্ডাতে সিনিয়র জুনিয়র সমানভাবে অংশগ্রহণ করতো। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে তারা সবাই একই ক্লাসের ছাত্র। কিন্তু বাস্তবে দেখা যেতো তাদের কেউ সবে বুয়েটে ভর্তি হয়েছে, আবার কেউ দুদিন পর বুয়েট ছেড়ে চলে যাবে। সবারই ভাষা এক। সবাই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বিজ্ঞ মতামত প্রকাশের পাশাপাশি একজন অন্যজনকে পঁচানি দিতেও ছাড় দিতেন না। কেউ সিনিয়র বলে কম পঁচানি আবার কেউ জুনিয়র বলে বেশি পঁচানি দিতে হবে এমন কোন নিয়ম ছিলো।

দিনের সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে রাতে সবাই হলে ফিরে আসার পর ফ্লোরের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুরু হতো আড্ডা। আবার হয়তোবা কেউ বারান্দার রেলিংয়ে চড়ে বসতো। টিভি রুমে, ডাইনিং রুমে সিনিয়র জুনিয়র মিলেমিশে চলাফেরা করছে। কোথাও কোন ঝগড়া বিবাদ নেই। হাতেগোনা দু’একজন এর ব্যতিক্রম ছিলো পুরো হলের মধ্যে। সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ঘটনা আমাদেরকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিলো। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং রুমে এক জুনিয়র এক সিনিয়রকে পানির জগটা এগিয়ে দিতে বলায় সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল গণ্ডগোল বেঁধে গিয়েছিলো। অন্য আর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিভি রুমে সিনিয়র জুনিয়র বসাকে কেন্দ্র করে একইরকম ঘটনা ঘটেছিলো। আমরা এগুলো শুনতাম আর অবাক হতাম।

হলে থাকতেই একইসঙ্গে আমরা পেয়েছিলাম অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা। আমাদের ফ্লোরে হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মেরই ছাত্র ছিলো। রোজার সময় আমরা সবাই টাকা দিয়ে রুটিন করে পলাশী বাজার থেকে ইফতারি কিনে আনতাম। সেখানে হিন্দু ছেলেরাও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতো। তারপর বিছানার উপর পলিথিন বিছিয়ে বিশাল একটা প্লাস্টিকের বাটিতে ইফতার মাখিয়ে সবাই মিলে সেই ইফতার খেতাম। ভোরে সেহরি খেতে উঠার সময় আমাদের পাশাপাশি হিন্দু ছেলেরাও আমাদের ডেকে তুলে দিতো সেহরি খাওয়ার জন্য। আবার সরস্বতী পূজার সময় আমরা সবাই মিলে টাকা দিয়ে মোমবাতি কিনে এনে ফ্লোরের বারান্দায় এবং রেলিংয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে উদযাপন করতাম।

আমাদের দুষ্টুমি মাত্রা ছাড়াতো কারেন্ট চলে গেলে। প্রতিদিন নিয়ম করে রাত বারোটার সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎ থাকতো না তখন আমাদের দুষ্টুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যেতো। এক হল অন্য হলকে একেবারে বাজখাঁই গলায় গালাগাল দেয়া শুরু হতো। যে ছেলেটা জীবনে একটা গালিও উচ্চারণ করেনি সেও সেই গালি দেয়ার উৎসবে অংশগ্রহণ করতো। এক হলের বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে অন্য হলকে যাচ্ছেতাই ভাষায় চলতো ভর্ৎসনা। বিদ্যুৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে আবার সবাই যার যার জায়গায় ফিরে যেতো। ব্যাপারটা একসময় এমন দাঁড়িয়ে গেলো। আমরা রাত হলেই অপেক্ষা করি কখন বিদ্যুৎ চলে যাবে আর আমরা গলাটা একটু শানিয়ে নিবো।

এছাড়াও কোন ব্যাচের র‍্যাগের মিছিলে বা লেভেল পূর্তির মিছিলে পানি দেয়া ছিলো অনেক বড় উৎসব। এই মিছিলগুলো সাধারণত রাতের বেলায় হতো। মিছিলগুলো হলের মাঝের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হলের বারান্দার কোনো থেকে বালতি, মগ, পলিথিনে ভরে পানি ঢালা হতো। আর এই উৎসবে যোগ দিতো সিনিয়র জুনিয়র সবাই। হলের সিনিয়রদের কাছ থেকে আমরা যে শুধুই দুষ্টুমি শিখতাম তাই না তাদের কাছ থেকেই পাঠ নিয়েছিলাম কিভাবে খুব সহজেই অপরিচিত কাউকে আপন করে নিতে হয়। আর সিনিয়র কারো সাথে দুষ্টুমি করার পাশাপাশি সম্মানও করতে হয়।

উনাদের সংস্পর্শেই মফস্বলের মেধাবী কিন্তু মুখচোরা ছেলেটা একসময় বাকপটু হয়ে যায়। বুয়েটের একাডেমিক কারিকুলামে ভয়াবহ রকমের সীমাবদ্ধতা আছে। আর সেটা হলো বাস্তবতা বিবর্জিত সিলেবাস। তাত্ত্বিকভাবে এক একজনকে ভালো প্রকৌশলী বানানো হলেও তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বাস্তবতার সংসর্গ থাকে না বললেই চলে। তাই পাশ করার পর কোথাও জবের ইন্টারভিউ দিতে গেলে একজন ছাত্র খাবি খাওয়া শুরু করে। হলের সিনিয়ররা এই জায়গাটাতে খুব বেশি সাহায্য করতেন। বিশেষ করে পাশ করার পর সবারই প্রথম চাকরি হতো হলের কোন সিনিয়র ভাইয়ের হাত ধরেই। আমার ক্ষেত্রে সবগুলো চাকরিই হয়েছিলো হলের সিনিয়র ভাইদের হাত ধরে।  

একজন মানুষের শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। এসময়ে মানুষ যা দেখে, যা শিখে সেটা জীবন চলার পথে সারাজীবন কাজে লাগায়। এসময়ের বন্ধুত্বও হয় অনেক পরিণত। তাই সেই বন্ধুত্ব টিকে থাকে আজীবন। আর এসময়ের স্মৃতিটাই ভবিষ্যত জীবনে চলার পাথেয়। আমি একটা কথা সবসময়ই বলি, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলো, কিন্তু হলে থাকলো না, সে সমুদ্রের বালুকাবেলায় হেঁটে বেড়ালো কিন্তু সমুদ্রের জলে অবগাহন করার যে আনন্দ সেটা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলো।

আমি খুবই হতাশ হই যখন ইদানিং খবরগুলো দেখি। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চেয়ে বুয়েটের অন্যন্য বৈশিষ্ট্য ছিলো এখানকার সিনিয়র জুনিয়রের ঈর্ষণীয় সম্পর্ক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও হয়তোবা পচন ধরেছে। কারণ কথায় আছে- আগুন যখন লাগে তখন ঘর, বসতি, দেবালয় কিছুই এড়ায় না। সারাদেশের মানুষের মূল্যবোধেই যেখানে ঘুণপোকা ধরেছে সেখানে বুয়েটের ছাত্ররা আর বাদ যাবে কেন! কারণ তারাও তো একই দেশের বাসিন্দা।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!