ভালো নেই সৌদি প্রবাসীরা 

দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত সৌদি আরবে আছেন টাঙ্গাইলের সামসুদ্দিন। পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। থাকেন রাজধানী রিয়াদের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হারাতে।

শেখ লিয়াকত আহমেদ, সৌদি আরব থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2019, 03:37 PM
Updated : 19 Sept 2019, 03:37 PM

নিয়মিত কাজ করেন একটি লেবার সাপ্লাই কোম্পানির মাধ্যমে। কিন্তু নিয়মিত বেতন পান না। দুই-তিন মাস পরে একবার বেতন পান তাও আবার মাঝে মধ্যে সেটিও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। শুধু সামসুদ্দিন নয় এমন অবস্থা এখন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের । 

সৌদি আরবে কেমন আছেন- জিজ্ঞেস করা হলে সামসুদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, “সৌদি আরবে মনে হয় আর থাকা যাবেনা। নিয়মিত কাজ করলেও নিয়মিত বেতন পাইনা। নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত বছর ইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট) দেশ থেকে সুদে টাকা এনে রিনিউ করেছিলাম প্রায় ১১ হাজার সৌদি রিয়াল (দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ) দিয়ে। সেই দেনার টাকা এখনও শোধ করতে পারি নাই।” 

তিনি জানান, এখন আবার ইকামা নবায়ন করতে প্রায় ১৫ হাজার রিয়াল চেয়েছে ‘কফিল’ বা স্পন্সর। এই পরিমান অর্থ জোগার করা একেবারেই অসম্ভব।

এখন কী করবেন জানতে চাইলে  সামসুদ্দিন বলেন, “ইকামা রিনিউ না করলে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়, এমন কি জেলেও যেতে হয়। এর থেকে দেশে ফিরে যাওয়াই ভালো।” 

সৌদি আরবে অর্থনৈতিক মন্দা ও ইকামার ফি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে সৌদি সরকার। যার কারনে অধিকাংশ শ্রমিকরা তাদের ইকামা নবায়ন করতে পারছে না। বর্তমানে এক বছরের জন্য একজন শ্রমিকের ইকামা নবায়ন করতে সর্বসাকুল্যে প্রায় ১৫-১৬ হাজার রিয়াল ( ১ রিয়াল ২২ টাকার সমপরিমাণ) খরচ হয়। যা একজন শ্রমিকের জন্য একেবারেই অসম্ভব। 

এদিকে নিয়মিত কাজ এবং বেতন নেই, আবার ইকামা তৈরি করতে এই বিপুল অংকের টাকা জোগাড় করা দুরূহ হয়ে পরেছে। যার কারণে অধিকাংশ সৌদি প্রবাসীরাই অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। আর অবৈধ প্রবাসীদের ধরতে স্থানীয় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায়  পুলিশের ধরপাকড় একটু বেশি। ইকামার মেয়াদ না থাকলেই পুলিশ ধরে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। একরকম আতঙ্কের মধ্যে প্রতিটি দিন কাটাচ্ছে প্রবাসীরা। 

এর মধ্যেও নতুন ভিসায় সৌদি আরবে আসছেন অনেক বাংলাদেশি কর্মী। ভালো বেতনের কথা বলে মোটা অংকের টাকার বিনিময় কিছু অসাধু দালাল চক্র কর্মীদের নিয়ে এসে ইকামা ও কাজ না দিয়ে মাসের পর মাস অর্ধহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করছেন। 

এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “আগে ফ্রি ভিসার দাম সাত থেকে আট লাখ টাকা হলেও মানুষ আগ্রহ করে সৌদি আরবে আসতো, কাজও ছিল, ভালো বেতন ছিল ইকামা ফি কম ছিল। আর এখন ভিসার দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা হলেও লোক আসতে চায় না। কাজ নাই, বেতন নাই, আকামা ফি আকাশচুম্বি।“ 

দেশ এখন অনেক এগিয়েছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বেড়েছে। এতো টাকা দিয়ে সৌদি আরবে না এসে ওই টাকা দিয়ে দেশে কিছু করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

বিভিন্ন কারণে সৌদি আরবের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে সৌদি সরকার প্রতিটি সেক্টরে শতভাগ নিজেদের নাগরিকদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে চাইছেন। ফলে বহু বিদেশি শ্রমিক তাদের চাকরি হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এমতবস্থায় অভিবাসন বিশেজ্ঞদের মতে, অদক্ষ বা আধাদক্ষ হয়ে সৌদিতে আসার দিন শেষ। সময় এখন দক্ষ শ্রমিকদের। তাই জেনে শুনে দক্ষ হয়ে আসলে কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনিভাবে বাড়বে রেমিটেন্স প্রবাহ।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!