একমাস বেওয়ারিশ থাকার পর প্রবাসীর লাশ এলো দেশে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির খালিফা মেডিকেল সিটির হিমঘরে দিনের পর দিন লাশটা বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে ছিল। এভাবে পড়ে থাকতে থাকতে একসময় বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 09:50 AM
Updated : 7 Sept 2019, 09:50 AM

এদিকে বাংলাদেশে নিহতের দরিদ্র পরিবারের অবিরাম আহাজারিতে এই নিখোঁজ তরুণটির অনুসন্ধান শুরু হয় এবং পাওয়াও যায় প্রবাসের হাসপাতালের লাশঘরে।

সন্ধান পাওয়ার পর তা প্রবাসে বৃহত্তর সিলেটের সংগঠন ‘জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের’ দৃষ্টিগোচরে আনা হলে সংগঠনের উদ্যোগে আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়।

পরে আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের উদ্যোগে গত ২৯ অগাস্ট হতভাগা সেই রেমিটেন্স-সৈনিক আজাদের লাশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সরকারি খরচে দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠানো হয়।

আজাদ-কাহনের শেষ এখানেই হতে পারতো আর দু-দশটা দুর্ঘটনার মতো। কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের দীর্ঘতর বিচারিক প্রক্রিয়ায় ঘটনাটি একসময় ভুলে যেতেন সবাই। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যটিকে হারিয়ে একদিকে শোকার্ত

নিহত আজাদ মিয়া (৩১)

পরিবারের সদস্যরা কি শোকের ভার সামলাবেন না অর্থকষ্টের ভার এটা ভাবার কেউ থাকা তো দূরের কথা। কিন্তু না এখানে তা হলো না।

দুঃস্থ প্রবাসী পরিবারের পাশে প্রবাসী সংগঠন:

সদ্য গঠিত বৃহত্তর সিলেটের সংগঠন ‘জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, সংযুক্ত আরব আমিরাত’ নিহত পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়ালো আবারো। আর তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বড়চেগ গ্রামের মৃত মো. উস্তার মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আজাদ মিয়ার (৩১) মায়ের হাতে তুলে দিলেন দেড় লাখ টাকার একটি চেক ও নগদ আরও পঞ্চাশ হাজার টাকার অনুদান।

সংগঠনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বেলাল উদ্দীন, আহ্বায়ক শাহেদ নূর, সদস্য সচিব সাজেদুর রহমান সাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের সংগঠন আজাদের পরিবারের পুনর্বাসনে আরো সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি সিলেটের ছাড়াও বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনও অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি প্রবাসী সংগঠন এভাবে দুঃস্থ প্রবাসী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ালে প্রবাসীদের অসহায়ত্ব কমতো।

কিভাবে হয়েছিলো প্রবাসী প্রান্তিক শ্রমিকটির মৃত্যু:

আজাদ মিয়ার পাসপোর্ট

গত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃ্হত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ। ভিসা বন্ধের এই জটিল সময়ে  মৌলভীবাজারের আজাদ ভাগ্য বদলের আশায় এ বছরের গোড়ার দিকে ভ্রমণ ভিসায় আমিরাত আসেন।

এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হলে জমি-জিরেত ভিটে-বাড়ি বন্ধক রেখে সর্বস্বান্ত হয়ে আনা প্রায় ৫ লাখ টাকায় আমিরাতের আজমানের একটি বিল্ডিং মেইন্টেনেন্স কোম্পানি থেকে ইনভেস্টর ভিসা কেনেন। নামে কোম্পানির পার্টনার বা ইনভেস্টর হলেও এখানে তার কাজ অনেক ভাগ্যাহত প্রবাসীর মতো প্রান্তিক শ্রমিকের।

আজাদ মিয়ার মা ও পরিবার

ঘটনার দিন গত ২৫ জুলাই তিনি কাজ করছিলেন আবুধাবির গ্রিন সিটি আল আইনের আল খাতামে একটি নির্মাণ সাইটে। এসময় সাইটের জন্য আনা ক্যারাভানের চাপায় পড়ে  সাইটেই তার মৃত্যু হয়। এরপর প্রায় একমাস লাশটি অযত্নে দূর প্রবাসের লাশঘরে পড়ে থাকে। অধরা হয় ভাগ্য বদলের এক মরিয়া প্রয়াস।

প্রতিটি প্রবাসীর লাশ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর দাবি:

প্রতিটি প্রবাসীর লাশ সরকারি খরচে দেশে পাঠানো এবং আজাদসহ কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রবাসীরা সরকার ও দূতাবাসের কার্যকর সহযোগিতা চেয়েছেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!