মিশিগানে চট্টলাবাসীর মেজবান অনুষ্ঠিত

ফার্সি শব্দ মেজবান কিম্বা চট্টগ্রামের 'মেজ্জান' মানেই সমুদ্র পাড়ের মানুষের বিশালতা। চট্টগ্রামের মানুষরা নিজ আনন্দ- বেদনা একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভালবাসে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2019, 02:25 PM
Updated : 5 Sept 2019, 02:25 PM

তাই কোনও উপলক্ষ পেলেই তারা মেজবানের আয়োজন করে। কোনো উপলক্ষকে কেন্দ্র করে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষকে খাওয়ানো হয়। এক কথায় বিশাল এক ভোজন-সমাবেশ।

সাত সমুদ্র আর তেরো নদী পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও চট্টলাবাসীর মেজবানিতে একরত্তি টান পরেনি। মুক্তিযোদ্ধা বাবু অনিমেষ বড়ুয়া অনেকটা গর্ব করেই বললেন ‘'কালামন্যা ধলামন্যা, আনের আদা জিরা ধন্যা, আর ন লাগে ইলিশ-ঘন্যা, গরু-খাসি বুটর ডাইলর, বদ্দা দেখা যায়-. মেজবানি খাতি আয়’।

প্রতি বছরের এবছরও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ওয়ারেন নগরীর হ্যালমিচ পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে আমেরিকায় বসবাসরত বৃহত্তর চট্রগ্রামবাসীর এক বিশাল মিলনমেলা এবং বার্ষিক বনভোজন। বনভোজন হলেও এ আয়োজন মিশিগানে বাংলাদেশিদের কাছে ‘মেজবান’ নামে পরিচিত।

মেজবান মানেই সবাই একদম কবজি ডুবিয়ে খাবে ও খাওয়াবে- অফুরন্ত খাবার। আর এ আয়োজনকে চট্টলাবাসীর উদারতার এক সুযোগ হিসেবেই দেখেন আয়োজকরা। তাই তো আয়োজকরাও তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেন যাতে কোনো অতিথি অসন্তুষ্ট হতে না পারেন। আর যারা চট্টগ্রামের খাবার-দাবারের প্রশংসা শুনেছেন বা খাবার খেয়েছেন তারা কিছুটা আন্দাজ করতেই পারছেন কীরকম উদরপূর্তির সম্ভাবনা থাকে। তবু খটকা একটু থেকেই যায়, তাই বলে মার্কিন মুল্লুকেও কী এতো আয়োজন সম্ভব?

মিশিগানে মেজবানে জড়ো হন সর্বস্তরের প্রবাসী।

মেজবান মানেই চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের মানুষ মানেই মেজবান! দোসরা সেপ্টেম্বর ছিল সরকারি ছুটির দিন। ফলে মেজবানের আয়োজনে মিশিগান এর সকল শ্রেণি, ধর্ম ও পেশাজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ‘চোখে পড়ার মত’ বললে ভুল হবে, এ উপস্থিতি দেখে চোখ ছানাবড়া। মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মেজবানির এ বিশলাতার সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের অনন্য নিদর্শন।

বাংলাদেশী অভিবাসী ছাড়াও শহরের মেয়র পদপ্রার্থী, পুলিশ কমিশনার, সরকারি অফিসের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় আমেরিকানদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

প্রবাসী চট্রগ্রামবাসীর এ আয়োজনে মেজবানি খাবারের পাশাপাশি ছিল বনভোজনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন, অতিথিদের জন্য ছিল চোখ ধাঁধানো সব পুরস্কার। দিনব্যাপী এ বনভোজনে ছিল বাচ্চাদের বিস্কুট দৌড় প্রতিযোগিতা, নারীদের বালিশ বদল, ছোট ও বড়দের দৌড় প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বৃহত্তর চট্রগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য একটি চমৎকার মিনিভ্যান গাড়ি পুরষ্কার।

তাছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সৌজন্যে ছিল বিশালকার ফ্লাট স্ক্রিন টিভি, ল্যাপটপ কম্পিউটার, আইপ্যাডসহ আরো অনেক আকর্ষণীয় পুরস্কার। এই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন মিশিগান এর বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আকতার।

বনভোজন আয়োজনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বৃহত্তর চট্রগ্রাম সমিতি, মিশিগান এর সভাপতি এস এম হাবিব উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক জাহেদ জিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন, সিনিয়র আহ্বায়ক মোহাম্মদ নুরল হক, আলহাজ্জ মোহাম্মদ ঈসা, রবিন, মোহাম্মদ আফতাব, মুহাম্মদ আজিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ নুরল আজিম, সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন, মাসুম চৌধুরী, আব্দুল মাবুদ, মাহবুবুল করিম সোহেল, মোহাম্মদ ইসলামুল হক, জমির উদ্দিন খান, পেয়ার আহম্মেদ, মোহাম্মদ শফিউল হক বাবুল, মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ আনিস, মাহফুজুর রহমান, খায়রুল আনাম, মোহাম্মদ আবুল হাশেম, রেজাউল করিম টিটু, মুরাদ চৌধুরী, হায়দার ওমর খান, আরাফাত রহমান, মোহাম্মদ আমির হোসেন, শাহরুখ চৌধুরী, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!