হ্রদ আর পাহাড়ের রাজ্য মালয়েশিয়ার সাবাহ

মালয়েশিয়াতে বেড়াতে যাওয়া এখন আর স্বপ্ন নয়। খুব সহজেই মানুষ এই দেশে যেতে পারছে। মালয়েশিয়া আমাদের দেশ থেকে খুব দূরের কোন দেশ নয়, বরং খুঁজলে দেখা যাবে পরিবার বা কাছের কোন আত্মীয় মালয়েশিয়ায় থাকে। আর এখন তো অনেকেই 'সেকেন্ড হোম' হিসেবে মালয়েশিয়ায় নিজেদের ঘর বানিয়ে ফেলছে।

দেবাশিস সরকার,  অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2019, 04:03 PM
Updated : 29 August 2019, 04:04 PM

সে যাই হোক, মালয়েশিয়া অনেক সুন্দর আর বসবাসের উপযোগী বলেই মানুষ সেখানে ভিড় করছে। তাছাড়া প্রকৃতিগতভাবে মালয়েশিয়া অসাধারণ সুন্দর একটি দেশ। বহুমুখী সংস্কৃতির এই দেশে মানুষজন শান্তিতে বসবাস করছে। একটা দেশ অল্প সময়ে কিভাবে উন্নত হয় সেটা মনে হয় চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

বাংলাদেশিদের অনেকেই এখন কিছু টাকা জমিয়ে মালয়েশিয়া ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভ্রমণে সহায়তা করে তারা সহজেই বিভিন্ন ভ্রমণ প্যাকেজ এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা দলকে এই দেশে বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। প্রতি বছর আমরা যেমন অনেক রেমিটেন্স পাই মালয়েশিয়া থেকে তেমনি এখন আবার কিছু টাকা দিয়েও আসছি বেড়াতে গিয়ে।

আপনারা কুয়ালালামপুর, পুত্রাজায়া এইসব দৃষ্টিনন্দন জায়গার কথা যত না শুনেছেন ঠিক তেমনি খুব অল্প শুনেছেন অদ্ভুত সুন্দর জায়গা মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্য সম্পর্কে। আজ আপনাদের সেই জায়গায় নিয়ে যাবো।

সাবাহ হচ্ছে মালয়েশিয়ার ১৩টি রাজ্যের একটি যার রাজধানীর নাম হচ্ছে কোটাকিনাবালু। এটি পূর্ব মালয়েশিয়াতে অবস্থিত। মালয়েশিয়া থেকে বিমানে করে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে যাওয়া যাবে। 

সাবাহতে ৪ হাজার মিটারের বেশি উঁচু বিখ্যাত পর্বত কোনাবালুর দেখা মেলে। এটিই মূলত পর্যটন বিকাশের একটা বড় কারণ। আর সেটার নাম অনুযায়ী এই রাজ্যের রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে। অনেকেই এখানে সূর্যাস্ত দেখার জন্য আসেন।

এখানে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি রেইন ফরেস্ট আছে। তাছাড়া ওরাংওটাং, বানর এবং বন্য হাতির দেখাও পাবেন বনে জঙ্গলে।

দ্বীপ ঘেরা সাবাহতে নীল পানির দিকে তাকালে সাদা বালু পর্যন্ত দেখা যায়। সীমাহীন আনন্দ হয় দেখে। রাজ্যের রাজধানী থেকে সহজেই বিভিন্ন সাথে ছোট ছোট দ্বীপে যাওয়া যায়। তবে জনবসতি অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত। দলবেঁধে বেড়ানোই ভালো।

কোটাকিনাবালুতে অনেক ফিলিপিন আর ইন্দোনেশিয়ার মানুষজনের দেখা মেলে। বেশিরভাগই নাকি অবৈধভাবে এখানে থাকে। তাদের বাসস্থানের জায়গা দেখেই আমার তাই মনে হয়েছিল, অনেকটা বস্তির মত আর জনবহুল। তবে স্থানীয় মার্কেটগুলোতে তাদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছিল। চীন দেশের অনেক মানুষ এখানে থাকে। একটা জায়গা রীতিমতো ‘চায়না টাউন’ নামেই পরিচিত। বেড়াতে গিয়ে লতা পাতা, নুডলস আর মুরগির মাংসের স্যুপ খেয়ে নিলাম।

ছোট বড় অনেক নৌকা আর ট্রলার দিয়ে এই দ্বীপে অনেক মাছ ধরা হয়। দেখলাম অনেক লোকজন এই কাজের সাথে যুক্ত।

একদিন বিকেলে হোটেল থেকে লেইক এর পাশ দিয়ে হাঁটছি তো দেখতে পেলাম রাস্তায় রীতিমতো বিছানা সাজিয়ে গ্রাহকদেরকে ম্যাসাজ করছে। খুবই সস্তায় এই সেবা নেওয়া যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সন্ধ্যাবেলা সাদা ভূত রাস্তায় লম্বা হয়ে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে আছে আর কিছু মেয়ে তাদেরকে পেটাচ্ছে!

লেইকের পারে সারিবদ্ধভাবে খাবারের দোকান সাজিয়ে রাখা আছে। ঘুরতে ঘুরতে লেকের পারে বসেই রাতের খাবার খেয়ে নিলাম সামুদ্রিক মাছ আর সবজি দিয়ে। পরদিন ফেরার পালা, মন কিছুটা খারাপ লাগলেও রাতের সাবাহ দেখতে দেখতে হোটেলে ফেরত গেলাম।

লেখক: পর্যটক ও গবেষক

ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক

ইমেইল : debashisemp@gmail.com

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!