‘আগামী’র সম্মাননা পেলেন শারমিন আহমদ ও ফারহানা হানিপ

শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান এবং নারী ক্ষমতায়নে নিরন্তরভাবে কর্মরত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই নারীকে সম্মাননা দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি ও ভার্জিনিয়াভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘আগামী’-র সাউথইস্ট চ্যাপ্টার।

শনিবার ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ায় লী সেন্টারের রিচার্ড কোফম্যান অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শিক্ষাবিদ ও লেখক শারমিন আহমদ রিপি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি মালিকানাধীন সর্ববৃহৎ আইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘পিপল এন টেক’ এর প্রেসিডেন্ট, নারী উদ্যোক্তা ফারহানা হানিপের হাতে বিপুল করতালির মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আফসান খান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ‘আগামী’ সাউথইস্ট চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আফসান খান, সংগঠনের অন্যতম ফাউন্ডার ও অ্যাডভাইজার, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান পারভেজ, মার্কেটিং ডিরেক্টটর ফারহানা জামান মৌ।

সম্মাননাপ্রাপ্ত দুই নারী ব্যক্তিত্ব শারমিন আহমদ রিপি ও ফারহানা হানিপও এসময় নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবং কল্যাণমূলক কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ে থাকার আহ্বান জানান। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘পিপল এন টেক’ এর প্রতিষ্ঠাতা- সিইও প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ।

সংস্থাটির তহবিল সংগ্রহ উপলক্ষে এদিন একইসাথে অনুষ্ঠিত কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন ব্যান্ডদল ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, ক্রোনেজ ও আনিলা নাজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল এনআরবি কানেক্ট টিভি।

ফারহানা হানিপকে সম্মাননা ক্রেস্ট দিচ্ছেন ‘আগামী’ সাউথইস্ট চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আফসান খান।

শিক্ষাবিদ শারমিন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারি প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দীনের বড় মেয়ে। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বিভিন্ন ইন্সটিটিউট ও সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় দু’দশক ধরে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান নিয়ে ২০১৪ সালে তার লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটি বিভিন্ন মহলে প্রশংসা পেয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফারহানা হানিপ। নারীকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে সামাজিক ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখা ফারহানা হানিপের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি ‘পিপল এন টেক ফাউন্ডেশন’ এর আওতায় ‘ফিমেল ইন আইটি’ বা এফআইটি প্রজেক্টের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রায় ৩ হাজার নারীকে আইটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ পিপল এন টেকের প্রতিষ্ঠাতা। পিপল এন টেক এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জনকে আইটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের উন্নত বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করেছে, যাদের বেশির ভাগই আগে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অড জব’ করতেন। এখন তারা বার্ষিক ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ডলার বেতনে মার্কিন আইটি সেক্টরে চাকরি করছেন। অনেকে বেশ কটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বও দিচ্ছেন।

অপরদিকে, বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদানে ভূমিকা রেখে চলেছে ‘আগামী’। ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি চ্যাপ্টার রয়েছে। সেগুলো হলো ক্যালিফোর্নিয়া চ্যাপ্টার, ২০১২ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত আগামী নর্থইস্ট চ্যাপ্টার, ২০১৪ সালে ডিসি ও ভার্জিনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত আগামী সাউথইস্ট চ্যাপ্টার এবং ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আগামী ক্যারোলিনা চ্যাপ্টার।

সংগঠনের তিনজন উদ্যোক্তা হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাবু রহমান ও মাহমুদুল হাসান এবং নর্থ ক্যারোলাইনার সাবির মজুমদার।

এই চারটি চ্যাপ্টারে দুইশ-রও বেশি স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তারা আগামী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের ৩০টি স্কুলে এ পর্যন্ত ১২ হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে শিক্ষাদানে সহায়তা করেছেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [e-mail]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!