টাইগারদের জন্য ভিনদেশিদের ভালোবাসা

সম্প্রতি শেষ হয়ে গেলো ক্রিকেট বিশ্বকাপের এবারের আসর। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে অনেক বেশি গর্ব অনুভব করি। সত্যি কথা বলতে বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের অন্যতম পরিচয় বাংলদেশের ক্রিকেট।

মো. ইয়াকুব আলী, অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 09:55 AM
Updated : 18 July 2019, 09:55 AM

বিদেশে যখন কারো সঙ্গে নতুন পরিচয় হয় তিনি যদি ক্রীড়ামোদী হন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বলে বসে তোমাদের দেশ ক্রিকেট খেলে। আর বর্তমান বিশ্বে খেলাধুলার খোঁজ-খবর রাখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অস্ট্রেলিয়া আসার পর থেকেই বহুবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। প্রথম বা সামান্য পরিচয়ের পর আমরা ক্রিকেট নিয়ে ঘণ্টারর পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশে জন্ম নেয়নি কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসে এমনই কিছু মানুষের গল্প আজ বলবো আপনাদের।

মিকের পুরো নাম মাইকেল মিকেলপ। মিকের সঙ্গে পরিচয় আমার বর্তমান কর্মস্থলে যোগ দেয়ার প্রথম দিন থেকেই। অস্ট্রেলিয়াতে কোন অফিসে নতুন কেউ কাজে যোগদান করলে তাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার রেওয়াজ আছে। তখন সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি সামান্য কথাবার্তাও হয়। সেই সূত্রেই মিকের সঙ্গে পরিচয়ের সময় জানতে পারলাম সে আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা।

আমাকেও জিজ্ঞেস করাতে আমি বললাম আমার নাম আলী। ইয়াকুব বললে ওদের উচ্চারণে সমস্যা হবে, তাই আলী নাম দিয়েই চালিয়ে দিলাম। আর আমার আগের অফিসেও আমাকে সবাই আলী বলেই চিনতো। তাই আর নতুন কর্মক্ষেত্রে এসে বদলায়নি। আমি বললাম আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের অফিসে সবাই মোটামুটি আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মানুষ। এর বাইরে কয়েকজন লেবানিজ আছেন আর একজন মাত্র আছে চীনা বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান। সেদিক দিয়ে বিচার করলে আমিই প্রথম মানুষ যার বাড়ি দক্ষিণ উপমহাদেশে অবস্থিত।

মিকের সঙ্গে পরিচয়ের পর দুপুরের খাবারের বিরতিতে আবারো আলাপ হলো। অফিসে দুপুরের খাবারের বিরতিতে রান্নাঘরে বসে খাবার সময় সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপের রেওয়াজ আছে। মিক জানতে চাইলো তুমি বাংলাদেশের কোন অংশে বসবাস করতে। আমি বললাম আমার জন্ম পল্লী অঞ্চলে হলেও আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই রাজধানী ঢাকাতে বড় হয়েছি। আমার চাকুরিও ছিলো সেখানেই, তাই বলতে পারো আমি ঢাকাতেই ছিলাম।

আমার উত্তরে শুনে দ্রুতই মোবাইলে গুগুল করে ঢাকার রাস্তার জ্যামের ছবি বের করে আমাকে দেখিয়ে বলল, ঢাকাতে তো দেখি অনেক গাড়িঘোড়া। আমি বললাম হ্যাঁ, আর ট্রাফিক জ্যামও অনেক বেশি। দিনের একটা বড় অংশ আমাদের নষ্ট হয়ে যায় রাস্তায়। তবে জ্যামেরও কিছু উপকারিতা আছে। মিক উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, যেমন?

আমি বললাম, গরীব মানুষেরা তখন ফেরি করে বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি করে।

নিউজিল্যান্ডের শেন ম্যাথিউ এবং লেখক

আমি বলেই চললাম। এই যে গরীব মানুষগুলো ফেরি করে বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি করে তারা মোটেও কিন্তু স্বচ্ছল নয়। তবে এতে তাদের সুখের কোন কমতি নেয়। তুমি কোন কিছু কিনলেও ভালো না কিনলেও ভালো। তুমি যদি শুধু একটু মুচকি হেসে ওদের সঙ্গে কথা বলো তাহলে দেখবে তারা তাদের হাড় জিরজিরে শরীর নিয়ে তোমাকে এমন একটা হাসি উপহার দিবে যেটা তুমি জীবনেও ভুলবে না।

আমার কথা শুনে আবারও গুগুল করে ঢাকার রাস্তার ভ্রামমাণ ফেরিওয়ালা এক কিশোরীর ছবি বের করে আমাকে দেখালো। সে একটা গাড়ির জানালার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক তোড়া টকটকে লাল গোলাপ আর মুখে এক চিলতে অপার্থিব হাসি। মিক কিশোরীর হাসিমাখা মুখ দেখে অভিভূত হয়ে গেলো। আমি বললাম আমরাই মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি যারা দারিদ্র এবং দুর্নীতিতে অনেক নিচে অবস্থান করেও সুখী দেশের তালিকায় অনেক উপরে অবস্থানা করে নিয়েছি। এর কারণ বাংলাদেশের এই সাধারণ মানুষগুলোর চাহিদা আসলেই অনেক সীমিত। আমার কথা ও বর্ণনা শুনে মিক তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে অবশ্যই একসময় বাংলাদেশ ভ্রমণে যাবে।

প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কোন না কোন কিছু নিয়ে আলাপ হয়। সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতহ্য থেকে শুরু করে আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস ঐতিহ্যও স্থান পায়। আমি সংক্ষেপে বাংলাদেশের ইতিহাস বললাম। মিকও আয়াল্যান্ডের ইতিহাস সংক্ষেপে বললো। আমি বললাম, ইংরেজরা ভারতবর্ষে গিয়েছিলো বাণিজ্য করতে। তারপর একসময় তারা সেখানকার শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয় এবং প্রায় দুশো বছর শোষণ করে।

আর ভারতবর্ষ ছেড়ে আসার সময় সবচেয়ে খারাপ কাজটা করে আসে। ভারতের প্রধান দুই ধর্মালম্বী হিন্দু এবং মুসলমানদের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করে দিয়ে আসে। অবশ্য সেখানে স্থানীয়দেরও ইন্ধন ছিলো। এছাড়া মানচিত্রগুলোও অনেক অদ্ভুত আকারের। একটা দেশের পেটের মধ্যে অন্য একটা দেশের অংশ রয়ে গেছে পূর্বের রাজার বা রাজ্যের অনুসারী বলে, এগুলোকে আমরা বলি ছিটমহল।

আমার কথা শুনে মিক বলল, একই কারণে আয়ারল্যান্ডের মানুষরাও ইংরেজদের অপছন্দ করে। তারা আমাদেরকেও প্রায় দুশো বছর শোষণ করেছে এবং অনেক রক্ত ঝরিয়েছে। আর যখনই কেউ একটু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে তখন তাকে ধরে বন্দি করেছে বা বন্দি হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেটার প্রতিবাদ হিসেবে আয়ারল্যান্ডের বেশিরভাগ মেয়েশিশুর নাম একসময় রাখা হতো ‘সির্সা’ যার ইংরেজি অর্থ হচ্ছে ‘স্বাধীনতা’।

একদিন মিক আমাকে একটা লিংক মেইল করে বলল, তুমি যেহেতু ইতিহাস নিয়ে পড়তে ভালোবাসো এখানে অনেক তথ্য পাবে আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস নিয়ে। আমি সেটা পরে মিককে বললাম, আসলেই তোমাদের ইতিহাসও অনেক বেশি মর্মান্তিক ও হৃদয়স্পর্শী। এরপর আমি নিজেই একদিন রোর বাংলার পাতায় আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের একটা সামগ্রিক চিত্র নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়লাম এবং মিকের সঙ্গে আলাপ করলাম। এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব দিনেদিনে অনেক মাত্রা পেয়েছে।

ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের আরেক সহকর্মী শেন ম্যাথিউ যাকে আমরা শোনি বলে ডাকি, নিয়মিত ক্রিকেট খেলা দেখেন। শোনি নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। শোনিকে বললাম, আমি দুটো দলের ক্রিকেট খেলার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। একটা হচ্ছে নিউজিল্যান্ড অন্যটা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুটো দলই আসলে ক্রিকেটের মূল্যবোধটা ধারণ করে যে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা।

শুনে শোনি আমার অস্ট্রেলিয় রিপোর্টিং বসকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, আর বলো না অজিদের স্লেজিংয়ের জ্বালায় ক্রিকেট তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। আমিও তাল দিয়ে বলি একদম ঠিক। এভাবেই হাসি ঠাট্টাতে আমাদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে নিয়মিত আনন্দ আড্ডা বসে।

কথা প্রসঙ্গে শোনি মিককে জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের দলতো ক্রিকেট ওর্য়াল্ডকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি বড় দলগুলোর নোংরা রাজনীতির কারণে। তুমি কোন দোল সাপোর্ট করবে? শুনে মিক নির্দ্বিধায় উত্তর দিলো, আমি বাংলাদেশকে সাপোর্ট করছি এবার। শুনে আমার বুকটা গর্বে ভরে গেলো। ইতোমধ্যে মিক আমার কাছ থেকে বাংলাদেশ দল, অধিনায়ক, অলরাউন্ডার, বোলার সবার খবর জেনেছে। তবে সে সবচেয়ে মজা পেয়েছে রুবেলের ঘটনায়। যখন জানলো রুবেলের প্রাক্তন প্রেমিকার নাম ‘হ্যাপি’। আমি যোগ করে বলেছিলাম, আমাকে একজন বলেছিলো আমি না কি ক্রিকেটার রুবেলের মতো দেখতে। শুনে মিক আমার দিকে তির্যক দৃষ্টি দিয়ে বলল, তাহলে এই ছিলো তোমার মনে। বিয়ের আগের প্রাক্তন প্রেমিকাকে ছেড়ে দিয়েছো। বলেই আমরা দুজন হেসে কুটিকুটি। শোনিও আমাদের সাথে যোগ দিয়ে বলল, ব্যাপার না আলী, এটা হতেই পারে। তখন আবারো হাসির রোল পরে গেলো।

এরপর আমি বাংলাদেশ থেকে জার্সি নিয়ে আসলাম শ্যালক প্রীতম আর অগ্নি আপুর মাধ্যমে। শ্যালক প্রীতম কিনে অগ্নি আপুর বারিধারার বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলো। আর অগ্নি আপু দেশ থেকে নিয়ে এসে সাউথ অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের অফিসের ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিয়েছে। যেদিন জার্সি আসলো মিক সেগুলো হাতে নিয়ে বলল, আমার সাইজ হবে না। তখন মনে হলো আসলেই তো আমি মিককে একটা জার্সি কিনে দিতেই পারতাম। আমি বললাম ভেবো না আমি জোগাড় করতেছি একটা তোমার জন্য। শুনে মিক বলল, আরে নাহ, আমি তোমারটা পরেই একটা পোজ দিয়ে দেবো। তুমি ছবি তুলে রেখো। আমি বললাম ঠিক আছে তাই সই। এরপর মিক আমার জার্সিটা পরে ভিক্টরি সাইন দেখিয়ে একটা ছবি তুলে ফেললো।

নেপালের অধিবাসী বিনোদ দাদার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো ট্রেনে। আমি মোবাইলে বাংলায় কথা বলছি শুনে উনি আমাকে চিনেছিলেন একজন বাংলাদেশি হিসেবে। কথা শেষ হবার পর আমার পাশে বসে থাকা বিনোদ দাদা আমাকে চমকে দিয়ে বলেছিলেন, দাদা ভালো আছেন। আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন, আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছিলাম বাংলাদেশ থেকে। তাই বাংলাটা পুরোপুরিই জানি।

এরপর আমাদের প্রায়ই দেখা সাক্ষাত হতো ট্রেনে। পরবর্তীতে আমার বাসের রুট বদলে যাওয়াতে দেখাটা আর সেইভাবে হয় না। কিন্তু ফেইসবুকে যোগাযোগটা আছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাকে নিয়মিত মেসেজ দেন। বিশেষ করে যেদিন বাংলাদেশের খেলা থাকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমার কাছে অনলাইনে খেলা দেখার কোন লিংক আছে কিনা।

বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিনোদ ওঝা

গতবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন কোয়াটার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় আমার চেয়ে বিনোদ দাদা বেশি দুঃখ পেয়েছিলেন। বারবার আম্পায়ারিংয়ের ভুলগুলো তুলে ধরছিলেন আর বলছিলেন ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা এটা এখন আর কেউ বিশ্বাস করবে না। সবখানেই কাইন্টামি শুরু হয়ে গেছে। এইবারও যতদিন বাংলাদেশ খেলেছে উনি খেলা শেষে আমাকে মেসেজ দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিজয়ী হলে উনি আমাকে কখনওই অভিনন্দন জানাতে ভুলেন না।

বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা উপলক্ষে উনি বললেন, দাদা এইবার গতবারের ক্ষতটা পুষিয়ে নিতে হবে। আমি বললাম সেটা খুবই সম্ভব। কারণ এইবারের দলটা আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত এবং দক্ষ। আশা করি বড় কোন অঘটন না ঘটলে একটা উপভোগ্য ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে। উনি বললেন, ইনশাল্লাহ সব ঠিকমতো হবে। দোয়া করি আপনারা বাংলাদেশ যেন জয় পায়। ইনশাল্লাহ, দোয়া এই শব্দগুলো উনি ঠিক আমাদের মতো করেই উচ্চারণ করেন। শুনে মনে হয় আমি যেন আমার ছোটবেলার কোন বন্ধুর সঙ্গেই আড্ডা দিচ্ছি।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচের আগের দিন মিক ও বিনোদ দাদা দুজনই আমাকে শুভকামনা জানালেন। বিনোদ দাদা তো বলেই বসলেন, ভাই এই ম্যাচটা আপনার সঙ্গে বসে দেখতে ইচ্ছে করছে। আপনি মিন্টো থেকে হার্স্টভিলে চলে আসেন, একসঙ্গে খেলা দেখি। উত্তরে আমি বললাম, তাহলে তো খুবই ভালো হতো। কিন্তু বাচ্চাদের রেখে আসাটাই মুশকিল। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর যথারীতি আমি খেলা না দেখে অনলাইনে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ওয়েবসাইটের লাইভ স্কোরে নজর রাখছিলাম। আর বিনোদ দাদা সময়ে সময়ে আমাকে খুদেবার্তা দিয়ে ম্যাচের ভুলগুলো জানিয়ে দিচ্ছিলো।

তামিম ক্যাচ ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে উনি খুদেবার্তা দিলেন, দাদা এভাবে ফিল্ডিং দিলে তো হবে না। আর রোহিত শর্মার ক্যাচ ফেলে দেয়া মানে হচ্ছে স্কোরবোর্ডে নির্ঘাত একটা বড় রানের পাহাড় যোগ হওয়া। আমিও উত্তর দিচ্ছিলাম। এইভাবে ফলো করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠে একবার স্কোর দেখলাম। সাব্বির আর সাইফ ব্যাট করছে। ভাবলাম এখনও আশা আছে। আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখলাম বাংলাদেশ হেরে গেছে। বিনোদ দাদা আমাকে আবারও খুদেবার্তা দিলেন, ব্যাপার না দাদা, ইনশআল্লাহ পরেরবার হবে। অফিসে আসার পর মিক বললো, সরি আলী। আমি মনে হয় বাংলাদেশের জার্সি না পড়লেই ভালো ছিলো। আমি বললাম, তুমি জার্সি পরার কারণে তো আর বাংলাদেশ হারেনি। তাই তোমার দুঃখিত হওয়ার কারণ নেই। হারজিত খেলারই অংশ আর আমি খুবই সহজভাবে এগুলোকে নিই।

ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে যেয়ে সেই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ নিজ দেশের এক একজন প্রতিনিধি। একটা দেশের মধ্যে ভালোমন্দ অনেক ব্যাপারই ঘটে। কিন্তু আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি বাইরের মানুষের কাছে ঠিক কিভাবে আপনার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশে আমার প্রথম চাকরিতে আমাদের ফিলিপিনো বসের কাছে একদিন দেশ নিয়ে, দেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক খারাপ মন্তব্য করেছিলাম। সেটা শুনে আমার বন্ধু শিবলী যাকে আমি পার্টনার বলে ডাকি সে বলেছিলো ইয়াকুব একটা দেশকে ছোট করতে কিছুই করা লাগে না। কিন্তু একটা দেশকে বিদেশিদের কাছে কখনওই ছোট করতে নেই। কারণ আমি তুমি এই সিস্টেমের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। তাই দেশকে ছোট করা মানে আসলে নিজেকেই ছোট করা। আর আমার তোমারই দায়িত্ব একটা ছোট অংশ হিসেবে দেশটাকে সংশোধন করার দায়ভার ঘাড়ে তুলে নেয়া। এরপর থেকে আমি বাইরের দেশের কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় খুবই সাবধান থাকি।

একটা দেশের মধ্যে সমসাময়িক অনেক কিছুই ঘটবে এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকেন না কেন সেটা আপনাকে স্পর্শ করবেই। আপনি সেই মোতাবেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যকে নিজের প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে পারেন। কিন্তু খারাপ জিনিসগুলোকে ট্রল করে আমরা কেন জানি নিজেদেরকে আরো নিচে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ একটা খারাপ কাজ আরো দশটা খারাপ কাজকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি ক্রিকেটের মতো বিষয়গুলো আবারও আমাদেরকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে। এক একজন ক্রিকেটার যেনো বাংলাদেশের এক একজন ব্র্যান্ড এম্বাসেডর।

আর বাংলদেশের ক্রিকেটারদের আচার ব্যবহার এখন পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বকে মুগ্ধ করেই চলেছে তাদের ভালো খেলা বা ভালো আচরণ দিয়ে। আশা করি ভবিষ্যতেও তাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং আরো বেশি শাণিত হবে। তখন মিক, শোনি ও বিনোদ দাদার মতো আরো অনেক বিদেশি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সমর্থন জানাবে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!