বলছিলাম প্রকৃতির অনন্য নিদর্শন 'রেইনবো মাউন্টেইন' বা 'রঙধনু পর্বতে'র কথা। মাত্র ক'বছর আগে জেনেছিলাম এর কথা। চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশের 'গানসু' প্রদেশে 'ঝাংইয়ে' শহরে অবস্থিত 'ছি-লিয়েন' পর্বতশ্রেণি। এই পর্বতশ্রেণির পাদদেশে বিশাল এলাকা জুড়ে আছে অপেক্ষাকৃত কম উঁচু কিন্তু বিস্তৃত আরেক ধরনের বিশেষ পর্বতশ্রেণি। এই বিশেষ ধরনের পর্বতশ্রেণির বৈশিষ্ট্য হলো এর অনিন্দ্যসুন্দর রঙিন রূপ। কী রঙের পর্বত এগুলো? উত্তর হবে, কী রঙের নয়?
রঙধনুর সাত রঙই এখানে উপস্থিত! চোখধাঁধানো রূপ-সৌন্দর্যের আঁধার এই পর্বতশ্রেণির প্রায় পঞ্চাশ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে 'ঝাংইয়ে দান-সিয়া ন্যাশনাল জিওপার্ক'। বৈশ্বিক পর্যটকদের কাছে এই জিওপার্কের প্রতি আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। আর চীনে এটাকে এখন অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক স্থান বলে ধরা হয়।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে এই বিশেষধরনের পর্বতশ্রেণির সুচনা হয়েছিল ২৪ মিলিয়ন বছর আগে। বিশেষ ধরনের 'স্যান্ড-স্টোন' জমা হতে হতে আর কালের বিবর্তনে বাতাস, পানি ইত্যাদির প্রভাবে রঙিন এই পর্বতশ্রেণি তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি আমার যেতে হয়েছিল 'গানসু প্রদেশের রাজধানী 'লানঝৌ' শহরে। সেখান থেকে সৌভাগ্য হয়েছিল 'ঝাংইয়ে দান-সিয়া ন্যাশনাল জিওপার্ক' বা 'রঙধনু পর্বত' ভ্রমণের। সাধারনত সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময়ে আকাশ পরিষ্কার থাকলে রঙগুলো বেশি ফুটে ওঠে। আমরা গিয়েছিলাম প্রখর রোদে। তার উপর আমার হাতে ছিল সাধারণ মানের মুঠোফোন ক্যামেরা। তাই সুন্দর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। আর ইন্টারনেটে যেসব ছবি পাওয়া যায়, সেগুলোর 'কালার কন্ট্রাস্ট' দেখে মনে হয়েছে এডিট করা। আমার মনে হয়েছে এই পর্বতের গায়ে এই অনিন্দ্যসুন্দর রঙের খেলা আর বিচিত্র পর্বতাকৃতির সৌন্দর্য শুধু চোখের দেখা আর মনের মধ্যে গেঁথে ফেলার ব্যাপার। ক্যামেরার সাধ্য নেই, এই সৌন্দর্যের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে।
চীনকে যারা পর্যটনের তালিকায় রাখেন তারা ঘুরে আসতে পারেন গানসু'র 'রেইনবো মাউন্টেইন' বা 'রঙধনু পর্বত' থেকে। 'লানঝৌ' শহরের সাথে উড়োজাহাজের আসা-যাওয়া আছে চীনের প্রায় সব বিমানবন্দরের সাথে। 'লানঝৌ' থেকে দ্রুতগামী রেলে চার ঘণ্টা লাগবে ঝাংইয়ে পৌঁছাতে। সেখান থেকে সারাদিন বাস আসা-যাওয়া করে 'ঝাংইয়ে দান-সিয়া ন্যাশনাল জিওপার্ক' পর্যটন স্পটে। আমি নিশ্চিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের 'ঝাংইয়ে দান-সিয়া ন্যাশনাল জিওপার্ক' বা 'রঙধনু পর্বত' এর রঙিন সৌন্দর্য খুবই ভালো লাগবে।
ছবিগুলো আমার অতি সাধারন মুঠোফোন ক্যামেরায় তোলা।
ধন্যবাদ মোজাহিদ আর মেজবাহকে (সাউথওয়েস্ট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র) আমার ভ্রমণসঙ্গী হওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ আরিফ আর শাকিলকে (লানঝৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক) ভ্রমণ পরিকল্পনায় সহযোগিতা আর লানঝৌতে আতিথেয়তার জন্য।
লেখক পরিচিতি: চীনের লুঝৌ এর সাউথওয়েস্ট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা ও অধ্যাপনা করছেন।