কোরিয়ার গুয়াংজুতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি উৎসবে বাংলাদেশ

গুয়াংজু ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (জিআইসি) কোরিয়ার গুয়াংজুর বিদেশি কমিউনিটির কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শহরের সমস্ত আন্তর্জাতিক কমিউনিটির মধ্যে সেতুবন্ধন হয়ে কাজ করে থাকে।

মো. হাসানুল বান্না, কোরিয়ার গুয়াংজু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2019, 08:27 AM
Updated : 2 June 2019, 08:27 AM

ভাষা শিক্ষণ, আন্তর্জাতিক বিষয়ে সেমিনার, বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা, আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে তাদের নিজ নিজ উৎসবে সবরকম সহায়তা করাসহ তাদের উপস্থিতি আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে জিআইসি এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

গুয়াংজু শহরের স্থানীয় কোরিয়ান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এখানকার সব উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অন্যতম বহুল প্রত্যাশিত উৎসব হল ‘গুয়াংজু আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ডে’ বা (জিআইসি ডে)।

প্রতি বছর মে মাসে জিআইসি গুয়াংজু শহরে অবস্থারত পৃথিবীর নানা দেশের আন্তর্জাতিক কমিউনিটিদের নিয়ে পালন করে থাকে ‘গুয়াংজু আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ডে’। এই দিনে একসাথে স্থানীয় কোরিয়ান এবং বিদেশিরা নিজেদের সংস্কৃতির চর্চা ও উৎযাপন করতে পারে। অতি জনপ্রিয় এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো ‘কালচারাল এবং ফুড বুথ’।

যেখানে দেখা মেলে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, হরেক রকমের দেশীয় খাবার, ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ আরও অনেক অজানা ঐতিহ্যবাহী দেশজ জিনিসপত্র। এই একটি দিনের জন্য গুয়াংজুতে অবস্থিত বিদেশিরা অপেক্ষায় থাকে। 

পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই বছর ২৬ মে ‘গুয়াংজু আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ডে’ উৎসবটি পালিত শহরের প্রাণকেন্দ্র এশিয়ান কালচারাল সেন্টারের(এসিসি) প্রথম প্লাজায়। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, যেখানে দুই হাজারেরও বেশি অতিথি ও দর্শক সমাগম ঘটে। স্থানীয় কোরিয়ানসহ প্রায় ২১ দেশের ৬০টি কালচারাল ও ফুড বুথ স্থান পায় এই উৎসবের মূল পর্বে।

অন্যান্য বারের ন্যায় এবারেও গুয়াংজু বাংলাদেশ কমিউনিটি তাদের কালচারাল ও ফুড বুথ নিয়ে উপস্থিত ছিল এই উৎসবে। উৎসবের সবচেয়ে সুন্দর বুথ হিসাবে সবার কাছে সমাদৃত হয় এবং ‘বেস্ট বুথ ডেকোরেশন’ ক্যাটাগরিতে দুই বুথের জন্যই প্রথম পুরস্কার লাভ করে।

এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের সাথে খাবার স্টলের জন্য আরও পুরস্কার পায় মালয়েশিয়া এবং সংস্কৃতি স্টলের জন্য পেরু, রোমানিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পুরস্কার পায়। এছাড়াও ‘বেস্ট ফুড বুথ’ ক্যাটাগরিতে ভারত প্রথম পুরস্কার লাভ করে।

বাংলাদেশি খাবার স্টলে রাখা হয়ে ছিল সমুচা, সিঙ্গাড়া, সবজি রোল, চিকেন রোল, পরটা চিকেন, লাচ্ছিসহ বাহারি সব বাঙালি খাবার। সংস্কৃতি স্টল সাজান হয়েছিল নকশিকাঁথা, জামদানি শাড়ি, ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ রিকশা, পিতলের নৌকা, ঘোড়া, রাজু ভাস্কর্য এর ছোট প্রতিকৃতি দিয়ে। এর সাথে ছিল মেহেদী দিয়ে হাত রাঙানো, যা ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় যা কোরিয়ানদের খুব বিমোহিত করে। বাঙালি পোশাক পরিহিত কিছু সুপরিচিত বাঙালির আতিথেয়তা এবং লাল-সবুজের পতাকার সাথে সত্যিই যেন ফুটে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ।

বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পর্ব ও রাফেল ড্র। কোরিয়ান ঐতিহ্যবাহী মিউজিক সামুলনরি দিয়ে শুরু সাংস্কৃতিক পর্ব এবং আরও অংশ নেয় আফ্রিকান মিউজিক পারফর্ম গ্রুপ(আনাফু), গুয়াংজু পারফর্ম প্রজেক্ট(জিপিপি), ড্রিমার্স, গিটার ক্লাব(মক্সরি) ও পেরুভিয়ান গ্রুপ। এদের মনমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাইকে বিমোহিত করে।

সবশেষে র‌্যাফেল ড্র এবং পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী এই উৎসব।

কৃতজ্ঞতা: তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কারিনা প্রান্নাত এবং গ্রুপ ছবি দিয়েছেন কিম ইয়ুন কিওং (জিআইসি)

লেখক পরিচিতি: পিএইচডি শিক্ষার্থী, ফটোনিক ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস ল্যাবরেটরি, দক্ষিণ কোরিয়া।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!