সুখি মানুষের দেশ ডেনমার্ক

'সুখ তুমি কী, বড় জানতে ইচ্ছে করে' - রুনা লায়লার কণ্ঠে এই গানটি কে শুনেন নি বলেন তো? সেই ছোটবেলা থেকেই 'সুখ' নিয়ে আমার জানার আগ্রহ কম ছিল না। তাই ঘুরতে ঘুরতে সুখের দেশে বেড়াতে গেলাম, দেখে এলাম সুখি দেশ আর দেশের মানুষ!

দেবাশিস সরকার, অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2019, 03:39 PM
Updated : 27 May 2019, 03:39 PM

যদিও সুখ একটি আপেক্ষিক বিষয় তারপরেও অনেক মানদণ্ডেই আপনি ইউরোপের দেশ ডেনমার্ককে সুখি দেশ বলতে পারবেন। তাই তো বছর বছর আমরা পত্রিকার পাতায় দেখি বিশ্বের প্রথম দশটি সুখি দেশের মধ্যে ডেনমার্ক হচ্ছে প্রথম সারির দেশ।  

ডেনমার্ক হচ্ছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার একটি দেশ যেখানে অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে। পরিচ্ছন্ন দেশটির রাজধানী কোপেনহেগেন। এই দেশে প্রায় ৬০ লাখ লোকের বসবাস। এখান থেকে খুব কাছেই সুইডেন।

ইউরোপে আপনি একটু পরিকল্পনা করে চললে খুব সহজেই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। কিছু বাস সার্ভিস আছে যেগুলো প্রতি মাসে অল্প টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশে বেড়াতে নিয়ে যায়।  অনলাইনে সার্চ দিয়েই আপনি এরকম সার্ভিস খুঁজে নিতে পারবেন।  ওইসব এজেন্সি আপনার খাবার, থাকা আর বেড়ানোর ব্যবস্থা করবে। ২-৩ টা বাস একসাথে ছাড়ে। এইভাবে ভ্রমণ করাটা অনেক সহজ এবং আরামদায়ক। সবচেয়ে বড় কথা, চিন্তামুক্তভাবে বেড়ানো যায় আর অল্প সময়ে অনেক জায়গা বেড়ানো যায়। তো আমি ওদের মাধ্যমেই ৩টা দেশ বেড়িয়েছি। মূলত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকেই বেশিরভাগ পর্যটক বেড়াতে যায় এই সার্ভিস নিয়ে। গাইডও দেখলাম একজন ভারতীয়।

ডেনমার্কে অনেক হারবার বা পোতাশ্রয় রয়েছে। সারি সারি ছোট নৌকা, জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে পানির উপর। তাছাড়া বাড়িগুলোও অদ্ভুত সুন্দর করে রঙ করা। আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন আর দেখবেন বিভিন্ন রঙের বাড়ি। সেই সব বাড়ির রং আবার সাথে থাকা দ্বীপের পানিতে ঢেউয়ের সাথে ভাসতে থাকে যা দেখতে অসাধারণ লাগে। আর দ্বীপের পাশে বসে ডেনিশ খাবারের মজাই আলাদা। প্রচুর সি-ফুড পাওয়া যায়।  আমি শামুক, মুরগি, সামুদ্রিক মাছ, আলু আর সালাদ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম।

কোপেনহেগেন গিয়ে রাজবাড়িতে না গেলে হয়? আমালিয়ানবর্গ প্যালেস যেখানে প্রায় সব পর্যটক বেড়াতে যায়। রয়েল বা রাজার গার্ডগুলো যখন তাদের ডিউটি টাইম পরিবর্তন করে তখন সেটা দেখার মতো একটা বিষয় হয়ে যায়। এই ধরুন, প্যারেড করে, অদ্ভুত ভঙ্গিমায় দায়িত্ব নেন তারা। মানুষ লাইন ধরে এই সবই দেখে। এটা খালি কোপেনহেগেনে না, ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন- বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গেও দেখেছি। বরাবরের মতোই গার্ড এর সাথে কিছু ছবি নিয়ে নিলাম।

লিটল মারমেইড হচ্ছে ব্রোঞ্চের তৈরি শত বছরের পুরনো একটি বহুল জনপ্রিয় ভাস্কর্য। পাথরের উপর বসে থাকা এক নারী যে কিনা এক প্রিন্সের প্রেমে মজেছে! মূল ভূখণ্ড থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে করে আমি তা দেখতে গিয়েছিলাম। কত মানুষ যে এখানে আসে আর ছবি তোলে, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর। লিটল মারমেইড দেখার স্মৃতি কি আর ভুলে থাকা যায়? তা দেখেইতো এতদিন ডেনমার্ককে চিনে এসেছি।

অসাধারণ একটা ব্রিজ রয়েছে, যা দিয়ে কোপেনহেগেন থেকে সুইডেনে যাওয়া যায়। এটি দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার ব্রিজ। একপাশ দিয়ে সাগরের উপর দিয়ে যেতে যেতে অন্য পাশে সাগরের তল দেশ দিয়ে চলে যাবেন আরেক দেশে। এই অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ।

ডেনমার্কের লোকজন সাইকেল চালাতে ভালোবাসে। তাইতো শহরের সব জায়গায় সাইকেলের ছড়াছড়ি। এজন্যই তো এই দেশে মানুষ অনেক স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে।

ডেনিশ অপেরা হাউস পৃথিবীর বিখ্যাত একটি স্থাপনা। ৪১ হাজার স্কয়ার মিটার আয়তনের এই অপেরা হাউস। সিটিং ক্যাপাসিটি প্রায় ১৮ শ। চারিদিকে পানি আর মাঝখানে এই অপেরা হাউস। রাতের বেলা দেখতে অসাধারণ লাগে।

পৃথিবীখ্যাত ‘দ্য রয়েল লাইব্রেরি’ এই কোপেনহেগেনে। এই লাইব্রেরিতে অনেক পুরনো এবং ঐতিহাসিক দলিলপত্রাদি এবং ১৭ শতক থেকে ডেনমার্কে প্রিন্ট হওয়া সব কাজের সংগ্রহ আছে।  

কোপেনহেগ চিড়িয়াখানা হচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো চিড়িয়াখানাগুলোর একটি। এটি ১৮৫৯ সালে প্রথম চালু করা হয়। এখানে প্রায় ৩ হাজার প্রাণী আছে। ‘দ্য ন্যাশনাল পার্ক’ এও অসাধারণ সব দৃশ্য, সমুদ্রের বাতাসের ছোঁয়া উপভোগ করার জন্য ঘুরে আসতে পারেন।

মেরিটাইম মিউজিয়াম দেখে আসতে পারেন। মাটির অনেক গভীরে এই মিউজিয়ামে আপনি ডেনিশদের মেরিটাইম এর ইতিহাস দেখে আসতে পারবেন।

সুখের দেশে সব কিছুই কেমন যেন সুখি সুখি লাগে। সাথে খাঁটি অক্সিজেনও মেলে।

লেখক: পর্যটক ও গবেষক

ইমেইল: debashisemp@gmail.com

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!