নিহত ১২ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে সম্মান জানালো জাতিসংঘ

গত বছর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত ১২ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে সম্মান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2019, 11:06 AM
Updated : 26 May 2019, 10:16 AM

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্বের ২৭ দেশের ১১৯ জন নিহত শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা, শান্তি রক্ষা’ স্লোগানে এ দিবসে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিদের কাছে এ পদক দেন। বাংলাদেশের পক্ষে এ পদক নেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

মরণোত্তর ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ পাওয়া বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা হলেন-  সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক আরজান হাওলাদার ও সৈনিক মো. রিপুল মিয়া, মালি মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক মোহাম্মদ রায়হান আলী, ল্যান্স কর্পোরাল মোহাম্মাদ আক্তার হোসেন ও সৈনিক মোহাম্মদ রাসেদুজ্জামান, কঙ্গো মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মো. জানে আলম ও সাউথ সুদান মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সৈনিক মো. মতিয়ার রহমান, সৈনিক মো. মঞ্জুর আলী, ল্যান্স কর্পোরাল মো. মিজানুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আশরাফ সিদ্দিকী।

বক্তব্য দিচ্ছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনীতিক, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাসহ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কর্মরত বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসব পদক নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহাসচিব গুতেরেজ কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষী কর্মীদের স্মরণে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে অবস্থিত ‘পিসকিপার্স মেমোরিয়াল সাইটে’ ফুল দেন।

অ্যান্তোনিও গুতেরেজ বলেন, “আজ আমরা ১১৯ জন অসম-সাহসী পুরুষ ও নারীকে সম্মান জানাচ্ছি যাঁরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে নিরাপদ রাখার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে তা উজ্জ্বীবিত রাখার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব বীর শান্তিরক্ষীরা অমলিন স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড এর সঙ্গে আত্মদানকারী এসব শান্তিরক্ষীদের নামাঙ্কিত মরণোত্তর এ পদক দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদেরকে সারা জীবনের জন্য আমাদের হৃদয়ে ও স্মৃতিতে গভীর মমতায় প্রোথিত করে রাখলাম।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া ও অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে। এর আগে শান্তিরক্ষীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ। জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৬০০ শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৪৬ জন শান্তিরক্ষী মারা গেছেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!