শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চান রাষ্ট্রদূত মাসুদ

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণে জাতিসংঘ সদরদপ্তর, সদস্য রাষ্ট্র ও শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা বিনির্মাণের উপর জোর দিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2019, 10:32 AM
Updated : 9 May 2019, 10:32 AM

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ‘শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বিনির্মাণ’ শিরোনামে এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা জানান তিনি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার আয়োজনে এতে উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রসহ ৬০টিরও বেশি দেশ এতে অংশ নেয়।

এতে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “শান্তিরক্ষীরা বহুমুখী ও জটিল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে কাজ করে থাকেন। আর এজন্যই এ ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।”

শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বিনির্মাণের এ আলোচনায় স্থায়ী প্রতিনিধি তিনটি বিষয়ের কথা জানান। এগুলো হলো- প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকার, অংশীদারিত্ব ও অনুশীলন।

প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বিশেষ করে যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহার রোধে শান্তিরক্ষীদের পদায়নপূর্বক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া এ বিষয়ে তিনি ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’ (বিপসট) এর অধীনে নেওয়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যেমন ‘পোটেনশিয়াল অবজারভার অ্যান্ড স্টাফ অফিসার্স কোর্স’, ‘ওয়ারেন্ট অফিসার অ্যান্ড নন-কমিশন্ড অফিসার্স পিস সাপোর্ট অপারেশন কোর্স’, ‘কন্টিনজেন্ট মেম্বার কোর্স’, ‘ইমপ্রোভাইজড্ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি) এবং আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার বিষয়ক প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করেন।

এ কোর্সগুলো ‘জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কারিকুলাম’ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয় এবং জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের ‘সমন্বিত প্রশিক্ষণ সার্ভিস’ এর সর্বশেষ নীতি ও দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়।

অংশীদারিত্ব বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড ও জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গৃহীত ও গৃহীতব্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদাহরণ দেন। যেমন- প্রশিক্ষকদের জন্য আইইডি প্রশিক্ষণ, অপারেশনাল প্রস্তুতি অর্জন বিষয়ক সেমিনার এবং আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য ‘বেসামরিক কর্মীদের ব্যাপকভিত্তিক সুরক্ষা’ বিষয়ক কোর্স।

অনুশীলনের ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রতিনিধি জাতিসংঘের অন্যান্য মিশনের অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন এবং মিশনগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশমালা গ্রহণের উপর জোর দেন যাতে মানবাধিকার, শান্তিরক্ষী ও বেসামরিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে বাস্তবভিত্তিক বিষয়গুলোকে আমলে নেওয়া যায়।

যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো-টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যে কোনো ধরণের যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিও তিনি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান।

এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতা প্রতিরোধে গঠিত ‘সার্কেল অব লিডারশিপ’ এর একজন সদস্য বলে জানান তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের শান্তি ও নিরাপত্তা সংস্কার পদক্ষেপ, অ্যাকশন অন পিসকিপিং অ্যাজেন্ডা, জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের লিঙ্গসমতা কৌশল ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিশ্রুতির প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নানা সাফল্য তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘে দেওয়া প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে নারী শান্তিরক্ষীর পদায়ন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে জানান। ২০১৮ সালে নারী শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৫ম স্থান অধিকার করেছে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!