পানির শহর ভেনিস

ভাবছেন এ কেমন কথা, পানি দিয়ে কি কেউ শহর বানায়? ঠিক তা না, তবে পুরো শহর পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে।

দেবাশিস সরকার, অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2019, 10:36 AM
Updated : 7 May 2019, 10:36 AM

তাই আপনি যদি এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যেতে চান তাহলে পানির উপর দিয়েই যেতে হবে। যদিও হাঁটার জন্য সরু রাস্তা আছে কিন্তু সেটাও সীমিত। তাই নৌকা বা পানির ট্যাক্সি হচ্ছে যাতায়াতের বাহন। এতক্ষণ যে শহরের কথা বললাম সেটা হচ্ছে ইতালির ভেনিস।

ভেনিসের নৌকায় চড়ে যদি ভ্রমণ করা না যায় তাহলে কি ভ্রমণ পিপাসা মেটে বলুন? আমাদের দেশেও তো অনেক নদী আছে, আছে খালবিল।নৌকারও ঘাটতি নেই কোথাও। কিন্তু ভেনিসের নৌকার সাজসজ্জাই যেন আলাদা। খালের মমতায় আটকে যাওয়া এই ভেনিসে নৌকা ভাড়া করে আপনি ভেনিসের বাসাবাড়ির অলিগলিতে ঢুকে পড়তে পারেন।

ভেনিসের এই নৌকাগুলোর নাম গন্ডালা, যা সরু এবং লম্বা আকৃতির। ভেনিসের সাথে এই গন্ডোলার এক ধরণের আত্মিক সম্পর্ক আছে। একটা ছাড়া আরেকটা যেন সৌন্দর্যহীন। ভেনিস হচ্ছে একটা দ্বীপ শহর যা কিনা একশ আঠারোটা ছোটদ্বীপের সমষ্টি। এখানে প্রায় চারশ এর বেশি ব্রিজ রয়েছে একটা খাল থেকে আরেকটা খালে যেতে। চারশ চৌদ্দ বর্গকিলোমিটারের মতো জায়গা এবং আড়াই লক্ষের কিছু বেশি মানুষের বাস এই ভেনিসে।আড্রিয়াটিক সাগর পারে এই ভেনিস।

ভেনিসের নীল পানিতে যেন জাদু আছে, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক ভেনিস ভ্রমণ করে থাকেন।কত সিনেমাতে যে ভেনিসকে দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রিয়ালতো ব্রিজ গ্রান্ড ক্যানালকে সংযুক্ত করা প্রথম ব্রিজ। প্রথম দিকে এটি কাঠের তৈরি ছিল, কিন্তু ভেঙে যাওয়াতে পরে ১৫৯১ সালে পাথর দিয়ে এটা নির্মাণ করা হয়। সবাই এইখানে এসে ছবি তুলে, গল্প করে।একটা ছোট ব্রিজ কত ইতিহাস আর আনন্দের জায়গা।

ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর বাংলা ভাষায় কথা বলা শুনছি। অনেক বাংলাদেশি ফুটপাথে হকারি মাল বিক্রি করছে। সেলফি স্টিকের ব্যবসা দেখলাম অনেক জনপ্রিয়। এই থেকেই বুঝা যায় যে মানুষ বেড়াতে এসে কি পরিমান ছবি তুলে।

হঠাৎ একজন বাংলাদেশি ভাই ফুল বিক্রি করতে এগিয়ে আসলেন। পরিচয় দিয়ে কথা বললাম, কিন্তু কথা বলতে বলতে আমার অনেক খারাপ লাগছিলো। অনেক কষ্ট করে ইতালি এসেও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারছেন না। পুলিশ এসে ফুটপাতের দোকানগুলো তুলে দিচ্ছে, আবার একটু পর সেই দোকান আবার বসে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশের ফুটপাথের কথা। তবে ভেনিসের রাস্তা ধরে হাঁটলে দেখবেন অনেক বাংলাদেশি ভাইবোন রেস্তোরাঁতে কাজ করে যাচ্ছেন। খারাপ লাগলে কিছুক্ষণ বাংলাভাষায় কথা বলে নিতে পারেন।

সেন্ট মার্ক স্কয়ার ভেনিসের আরেকটা জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। আমি গিয়ে দেখি সেখানে অনেক মানুষের সমাগম। অদ্ভুত সুন্দর এই স্কয়ারে এ অনেক রেস্তোরাঁ আছে, সাথে লাইভ সঙ্গীতের আয়োজন। হাতে কিছু খাবার নিয়ে ছিটিয়ে দিলে সুন্দর সুন্দর কবুতরগুলো যেন আনন্দে দর্শনার্থীরদের হাতে এসে বসে থাকে। বেল টাওয়ারের উঁচুতে উঠে আপনি ভেনিসের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারবেন।

অনেক মজার জিনিসের দোকান আছে এই ভেনিসে। এন্টিক থেকে শুরু করে কি নেই এখানে! মুখোশ তার মধ্যে অন্যতম। সুভেনিয়র এর দোকান থেকে একটা গন্ডালা কিনে নিলাম আর দোকানিকে বলে মুখোশ পরে কয়েকটা ছবি নিয়েনিলাম। খালি মানুষ না কুকুরের মুখেও মুখোশের দেখা পেলাম!

ভেনিসের স্থানীয় লোকজন পর্যটকদের নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত। এতে তাদের ব্যক্তিগত জীবন ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। তাছাড়া ভেনিসবাসীকে নিয়মিত বন্যার পানির জ্বালা সহ্য করতে হয়।

বেড়াতে বেড়াতে এক জায়গায় বসে কিছক্ষণ বিশ্রাম করে নিলাম। সাথে ইতালিয়ান পিজ্জাও খেয়ে নিলাম।

সন্ধ্যায় ভেনিসের ছোট ছোট রাস্তায় জলে উঠা আলো রং নীল পানিতে যখন বিচ্ছুরিত হয়, সেই সৌন্দর্য পাশে রেখে ভেনিসের রাস্তা ধরে হাঁটার অভিজ্ঞতা কি কখনো ভুলে থাকা থাকা যায়?

ভেনিস আমার মন কেড়েছে আজীবনের জন্য।

লেখক: পর্যটক ও গবেষক

ইমেইল: debashisemp@gmail.com

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!