নিউ ইয়র্কে ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

নিউ ইয়র্কে ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে।

প্রিয় সাহা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2019, 02:37 PM
Updated : 5 May 2019, 02:37 PM

দেশের গান ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে, লক্ষ মুক্তি সেনা…’ কামরুজ্জামান বকুলের কণ্ঠে এই দরদী গানটি দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মিলনায়তন জুড়ে তখন অদ্ভূত এক পরিবেশ।

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের 'মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১'  বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি একই সাথে ছিল আবেগঘন ও উৎসবমুখর। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান এন্টারটেইনমেন্ট। 

২০১৮ সালের ১১ মে ফ্লোরিডার সময় অনুযায়ী বিকাল ৪টা ১৪ মিনিটে মহাকাশে উড়ে যায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই ১’। বাংলাদেশে তখন শুক্রবার শেষ হয়ে শনিবারে পড়েছে। ক্ষণ রাত ২টা ১৪ মিনিট। ঐতিহাসিক সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি হতে চলেছে। সেই উপলক্ষকে সামনে রেখে, নিউ ইয়র্কে এমন আয়োজন করা হলো। 

চলতি বছর অমর একুশে বইমেলায় আদিত্য প্রকাশ এনেছিল ‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১’। তখন বইটি নিয়ে ঢাকায় উৎসব হয়েছিল। এবার নিউ ইয়র্কে হয়ে গেল চমৎকার একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠান।

এতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফ হোসেন, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। সহযোগিতা করেছেন পিপল এন টেক এর প্রধান আবু হানিপ।

ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম খান মিরাজ, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, নিনি ওয়াহেদ, শহীদ পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নূর, উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মালেক, কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ আলী বাবুল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুব্রত বিশ্বাস, জাতিসংঘ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. নূরএলাহি মিনা, সঙ্গীত শিল্পী শাহ মাহবুব, কামরুজ্জামান বকুল, বাচিক শিল্পী গোপন সাহা, নজরুল কবিরসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্খি।

নাইজেরিয়া থেকে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় তিনি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

লিখিত বাণীতে তিনি বলেন, ‘ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে এমন গর্বিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৫৭ নম্বরে নিজেদের নাম লেখায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে সম্পৃক্ত এই স্যাটেলাইট সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে’।

এ নিয়ে বই লেখায় শামীম আল আমিনকে অভিনন্দন জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বইটিকে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “ভবিষ্যতে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় এই বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এতে করে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের গৌরব সম্পর্কে জানতে পারবে। ”

জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফ হোসেন বলেন, “একজন সাংবাদিক হিসেবে শামীম আল আমিন একটি ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের সংবাদ সংগ্রহের কাজ করেই কেবল থেমে থাকেননি, তা নিয়ে বই লিখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।”

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে বইটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মত দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বইটির জন্যে লেখককে ধন্যবাদ জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “জাতির জনকের নামাঙ্কিত স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের সময়ও নানান অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। কিন্তু সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সবাই জবাব পেয়েছে। এখনও স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা নিয়ে কোন কোন মহল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে।”

তাদেরকে রুখে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ এখন নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক। দেশে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, হয়তো একদিন বাংলাদেশ নিজেই এমন স্যাটেলাইট বানিয়ে মহাকাশে পাঠাতে পারবে।”

সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণর ঘটনাকে বাংলাদেশের বড় একটি বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বইটি জুড়ে যে আনন্দ উদযাপন রয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।” 

লেখক শামীম আল আমিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ইতিহাস গড়া সেই দিনে কেনেডি স্পেস সেন্টারে উপস্থিত থাকতে পারাটা ছিল ভীষণ সৌভাগ্যের। আর সেই ঘটনাপ্রবাহ লিখে রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে হওয়ায় বইটি লেখা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এক ধরণের জাগরণ তৈরি করাই লেখার উদ্দেশ্য। যাতে নিজেদের গৌরব সম্পর্কে তরুণেরা জেনে নিজেরাও ভালো কাজে উদ্যোগী হয়।” 

সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকির প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে দুটি কবিতা আবৃত্তি করে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যান গোপন সাহা। শেষে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শাহ মাহমুব যখন ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তে তুমি…’ গানটি শুরু করেন, তখন মিলনায়তনের সবাই দাঁড়িয়ে গানের সঙ্গে সুর মেলান। অনুষ্ঠানস্থলে থাকা সবাই তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। যেন ফিরে যান প্রিয় বাংলাদেশে। 

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!