চকলেট এর দেশে

আমরা গত বছরের ক্রিসমাসের ছুটিতে একটা ঝটিকা সফর করে আসলাম ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্ন থেকে। ঝটিকা সফর বলছি কারণ, প্রথমে যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও পরে আমার বরের অফিস প্রোগ্রাম থাকার কারণে আর যাবনা বলেই ঠিক করলাম।

সুস্মিতা পাল জেমী, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2019, 02:22 PM
Updated : 27 April 2019, 02:22 PM

ছুটিতে যাওয়ার ১ সপ্তাহ আগে একদিন আমার বর বললেন যে, অফিসে ম্যানেজ করেছেন, আমরা যাবো মেলবোর্ন। সেই অনুযায়ী সাথে সাথে প্লেনের টিকেটও কেটে ফেলা হল আমাদের ৩জনের। আমাদের পারিবারিক এক বন্ধু ও তার পরিবার থাকেন মেলবোর্ন শহরে। তাদেরও জানিয়ে দিলাম আমরা আসছি। তারা সহ বেড়াবো। তারাও আমাদের মতো বেড়াতে খুব পছন্দ করেন, তাই আমরা আর এত গুগল সার্চ করলাম না।

আমাদের বেড়ানোর দায়িত্ব তাদের হাতেই দেওয়া হল। দেখতে দেখতে যাওয়ার দিন চলে আসলো। ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ছিল আমাদের ফ্লাইট। দুপুরে দেড়টার দিকে পৌঁছে গেলাম মেলবোর্ন এয়ারপোর্ট। উনারা এসে আমাদের নিয়ে গেলেন। আমার কাছে সিডনি থেকে অনেকটা মডার্ন শহর মনে হল মেলবোর্ন শহর। অনেক নতুন বড় বড় বিল্ডিং দেখা গেল। অনেক গোছানো একটা শহর।

৩১ ডিসেম্বর আমরা রাতে মেলবোর্ন সিটিতে ফায়ার ওয়ার্ক দেখলাম ও থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করলাম। পয়লা জানুয়ারি ২০১৯ আমরা ফিলিপ আইল্যান্ড যাওয়ার প্ল্যান করলাম। সেই অনুযায়ী আমরা সকাল ১০টার দিকে রওয়ানা দিলাম। নির্মলদাদা যার বাসায় আমরা ছিলাম এবং যার হাতে ছিল আমাদের ঘোরানোর দায়িত্ব। তিনি বললেন যাওয়ার পথে পৃথিবীর  বিখ্যাত চকলেট ফ্যাক্টরি পড়বে, আমরা সেটাতে উঠবো, আরো একটা ওয়াইল্ড লাইফ জু তে যাব, তারপর ফিলিপ আইল্যান্ড।  প্রায় ২৫০ কিলোমিটার ড্রাইভ। তাই তাড়াতাড়ি আমাদের রওয়ানা দিতে হল।

আমরা যাওয়ার পথে উঠলাম ফিলিপ আইল্যান্ড চকলেট ফ্যাক্টরি  বা panny's amazing world of chocolate. দারুণ একটা জায়গা। প্রথমে ঢোকার পথে মনে হবে এটা শুধু একটা চকলেটের দোকান। কিন্তু এটার ভিতরে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য দারুণ বিস্ময়। প্রথমে দোকানটা ঘুরে দেখলাম। পাশে আছে কফি শফ। এরপরে কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কাটতে হয় কারখানার ভিতরে যাওয়ার জন্য। ভিতরে যে একটা চকলেট কারখানা আছে বাহির থেকে তা বোঝার উপায় নেই।

আমরা কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কাটলাম। বড়দের টিকেট এর দাম হচ্ছে ১৭ ডলার। আর চার বছর থেকে চৌদ্দ বছরের জন্য ১১ ডলার। চার বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য ফ্রি। আমাদের টিকেট এর সাথে ফ্রি চকলেট দিল। এরপরে ভিতরে ঢুকে আমাদের চোখ ছানাবড়া। চকলেট দিয়ে এত সুন্দর ডেকোরেশন করা যায় আমার ছিল না। প্রথমে আমরা দেখলাম চকলেট দিয়ে বানানো বড় শহর। বিরাট এলাকা জুড়ে বড় গ্লাসের শোকেসের ভিতরে সাজানো চকলেটের বাড়ি, চকলেটের গ্রাম, রেলপথ, বড় বিল্ডিং, রাস্তা, চকলেটের পেঙ্গুইন ইত্যাদি। তারপর বিভিন্ন স্বাদের চকলেটের নাম এবং ফ্লেভার নেওয়ার জন্য ছোট ছোট বয়াম সাজানো আছে। কত রকমের চকলেটের যে নাম এবং গন্ধ সব মনেও নেই। পুরোটা চকলেট দিয়ে বানানো-  "A statue of David"।

তারপর চকলেট বানানোর মেশিন সাজানো ছিল সব একসাথে। ছিল এক টন চকলেট চ্যালেঞ্জ। এক টনের চকলেট রাখা, সেটা নিচে থেকে উপরে তুলতে হবে,যা একসাথে বিশ জন অন্যদিকে দাঁড়ালেও তোলা যাবেনা। আরো ছিল চকলেট দিয়ে সাজানো ঘর (সেলফি রুম), যেখানে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে ছবি তুলতে পারবে। এরপরে বাইরে গিয়ে নিজের ইমেইল আইডি দিয়ে সাইন ইন করলে সেই ছবি ইমেইলে চলে আসবে।

দুই থেকে তিন ধরনের মেশিন রেখেছে নিজে চকলেট বানানোর জন্য। পছন্দ মতো ফ্লেভার দিয়ে নিজের চকলেট বানানো যায়। আমরা ২টা মেশিনে আমাদের নিজেদের জন্য চকলেট বানালাম। সব কিছু চলছে নিয়মমাফিক। কোনও শব্দ নেই শুধু চকলেট এর ঝরনার শব্দ ছাড়া। আর মেশিন এলাকায় দেখানো হচ্ছে কীভাবে চকলেট বানানো হয়, কীভাবে ফ্লেভার মেশানো হয় ইত্যাদি।

তারপর গেইম জোন। আমরা যখন টিকেট কাটি তখন টিকেট এর সাথে জন প্রতি ৪টা করে কাঠের বল দিয়েছিল। সেগুলো দিয়ে গেইমগুলো খেলতে হয়। জিতলে বলটা বেরিয়ে আসে। আর টিকেট পাঞ্চ করে খেলতে হয়। আমাদের তিন জনের বারোটা বল ছিল। আমরা সাতটা জিতলাম। সেটা অনেক আনন্দ নিয়ে খেললো আমার মেয়ে। এরপরে ছিল আরো বিস্ময়। বড় চকলেটের ঝরনা ছিল দেখার মতো। এটা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চকলেট এর ঝরনা। পাঁচ মিনিট পর পর চকলেট পড়ছিল বৃষ্টির মতো করে। যেন চকলেটের বৃষ্টি হচ্ছে। আরো অনেক কিছু দেখার আছে। আমাদের সময় কম বলে এসব দেখেই বেরিয়ে এলাম। বের হওয়ার পথে আমরা কাউন্টারে বল জমা দিলে আমাদের সাতটা বল চকলেট দিল।

আমরা বেরিয়ে আসলাম এক অপার আনন্দ নিয়ে। আমাদের চার বছরের মেয়ে যেমন আনন্দ করেছে তেমনি আমরা ও সমান উৎসাহে সময়টা কাটিয়েছি। যেটা দেখি সেটাতেই ছিল বিস্ময়। আমাদের সময় কিভাবে গিয়েছে আমরা বুঝতেই পারিনি। আমরা এক ঘণ্টার জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম এক অপার বিস্ময়কর চকলেটের রাজ্যে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!