হাউজ অব কমন্সে ‘জনমত’-এর সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সূচনা

ব্রিটেনের প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় বাংলা সাপ্তাহিক জনমত-এর সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব শুরু হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউজ অব কমন্সে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।

বিপুল সংখ্যক এমপি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটি ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে জনমত প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তির ক্ষণ উদযাপন করা হয়।

যুক্তরাজ্য তথা ইউরোপের অভিবাসী জনগোষ্ঠীর অগ্রযাত্রায় ‘আলোকবর্তিকা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসায় জনমত পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অতিথিরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে হাউজ অব কমন্সের কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) রুমে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানের হোস্ট ছিলেন নারী ও সমতা বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী ডন বাটলার।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মিনিস্টার মার্ক ফিল্ড বলেন,  “৫০ বছর ধরে জনমত এর অবিশ্বাস ভ্রমণ এখন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। জনমত এর যখন শুরু, তখন বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এখানকার বাঙালি কমিউনিটি ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনেও জনমত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক দিনকে দিন আরো শক্তিশালী হবে।”

জনমত-এর সুবর্ণ জয়ন্তীতে সন্তোষ জানিয়ে এটি যেন শতাব্দী ছুঁতে পারে সেজন্য শুভ কামনা জানান তিনি।

বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, যখন একটি নতুন দেশের জন্ম-আন্দোলনের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন বিলাত প্রবাসী চার ছাত্র প্রকাশ করেন জনমত। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জনমত-এর যাত্রা শুরুর পর থেকে গত ৫০ বছরের পথ চলায় অনেক সংকটের মুখোমুখি হলেও কখনো একটিবারের জন্যও বন্ধ হয়নি এর প্রকাশনা।

ছায়া মন্ত্রী ডন বাটলার বলেন, “ব্রিটেনে অভিবাসী কমিউনিটির মুখপত্র হিসেবে জনমত-এর ৫০ বছর এবং এর সাফল্যগাঁথায় আমি ভীষণভাবে গর্বিত। আজ এখানে বিপুল সংখ্যক অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতে পেরে এবং জনমত এর বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বটির হোস্ট হতে পেরে আমি আনন্দিত।”

জনমত-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে আগতদের স্বাগত জানান জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন। জনমত ও কমিউনিটির মধ্যকার মেলবন্ধন তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন জনমত-এর অন্যতম কর্ণধার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জুনেদ চৌধুরী।

১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জনমত প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং সাবেক প্রধান সম্পাদক আনিস আহমদ সবাইকে এই পত্রিকার শুরুর দিকের গল্প শোনান।

তিনি বলেন, “জনমত আজ অর্ধশতক পালন করছে দেখে আমি আবেগ আপ্লুত। আমি বিশ্বাস করি, পাঠক ও কমিউনিটির জন্য এটি একটি মাইলফলক। আজকের এই উৎসবে আমি থাকতে পারব, এটা ছিলো আমার ভাবনারও অতীত।

“জনমত তার যাত্রাকে আরও সুসংহত করতে ডিজিটাল মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে দেখে আমি খুবই আনন্দিত। হয়ত সময়ের সাথে এই আত্মীকরণ জনমতকে আরও ৫০ বছর পথচলার সামর্থ্য দেবে।”

অন্যদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার কূটনীতিক আনোয়ার চৌধুরী, বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো’র এমপি রুশনারা আলী, পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজের এমপি জিম ফিৎজপ্যাট্রিক, এলিং সাউথহলের এমপি ভিরেন্দ্র শর্মা, সাটন অ্যান্ড চেহামের কনজারভেটিভ এমপি পল স্কালি, ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউকেবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার এমবিই, ব্রেন্ট কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলর পারভেজ আহমেদ, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডন-এর সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।

জনমত এর ৫০ বছর পূর্তিতে এর সাথে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানান বক্তারা। আগামী প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক প্রকাশনার শতবর্ষ পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

জনমত-এর সম্পাদক মোহাম্মদ নবাব উদ্দিন বলেন, “আমাদের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে উদযাপন করার সাথে সাথে আমরা প্রযুক্তিয়ানের দিকে সুসংহত যাত্রা শুরু করছি। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার, এদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার এবং বাংলার সাথে সাথে ইরেজিতে কথা বলে, তাদেরও পাঠক হিসেবে জনমত- এর পরিবারে শামিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএ) ইন্টারন্যাশনাল কমিটির ভাইস চেয়ার এবং জনমত এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, “খবর ও খবরের পেছনের খবর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে বহুমুখী সাংবাদিকতাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। জনমত এর শক্তি হচ্ছে এর বিশাল পাঠক সমাজ, যারা যুগ যুগ ধরে জনমতকে তাদের বুকের গভীরে জায়গা দিয়ে রেখেছেন। জনমতকে বৈশ্বিক সংবাদ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিয়েছি।”

জনমত-এর বর্তমান কর্ণধার তরুণ ব্যবসায়ী জুনেদ চৌধুরী উপস্থিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, “নিজে বাংলা পড়তে বা লিখতে না জানলেও পাঠক হিসেবে জনমতের সাথে আমার বাবা-মার যে আত্মিক সম্পর্ক, সেটাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এর হাল ধরতে। আমরা সবাই যদি সহযোগিতা অব্যাহত রাখি তাহলে ‘জনগণের জনমত’ আরো অনেক পথ এগিয়ে যেতে পারবে স্বাচ্ছন্দ্যে।”

তিনি বলেন, “জনমত আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখা অনেক কঠিন কাজ। তবে কমিউনিটি বিশেষ করে ব্যবসায়ী কমিউনিটি যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে জনমতকে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।”

অনুষ্ঠানে জনমত-এর ৫০ বছরের সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি অনলাইনে জনমত ডটকম এবং জনমত টিভির যাত্রা শুরুসহ বছরব্যাপী উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে বক্তব্য রাখেন ‘জনমত উৎসব’-এর প্রধান সমন্বয়ক মাহবুব রহমান।

তিনি বলেন, “জনমত শুরু থেকেই ছিল বাংলার সাথে, বাঙালির প্রাণে। আজ থেকে জনমত এর নতুন শ্লোগান হচ্ছে ‘শতাব্দী ছুঁয়ে যাবার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায়’। এই শ্লোগানকে সামনে রেখে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জনমত এর ৫০ বছরের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে বিশাল আকারে ‘জনমত উৎসব’ এর আয়োজন করা হবে।

“এছাড়া বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটেও আয়োজিত হবে জনমত উৎসব। জনমত এর ইহিতাস, বাঙালি কমিউনিটিতে এই সাপ্তাহিকের অবদান এবং ৫০ বছরের মাইলফলকে পৌঁছানোর পথে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো ঘিরে গ্রন্থিত হবে জনমত-এর সকল আয়োজন।”

এই ‘জনমত উৎসব’কে ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের অংশ হিসেবে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও অনুষ্ঠানে ব্যক্ত করা হয়।

অনুষ্ঠানে বহু মানুষের জীবন আর সময়ের উত্থান-পতনের গল্পকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়া জনমত এর দুর্দান্ত ৫০ এর মাইলফলকের অংশীদার হতে কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [e-mail]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!