যদিও পরিসংখ্যান বলে পৃথিবীতে ধনী মানুষদের সংখ্যা অনেক কম, কিন্তু পৃথিবীর বেশিরভাগ জিনিসই তারা নিজেদের দখলে রাখে আর মনে মনে পরিকল্পনা আটতে থাকে কিভাবে সেটাকে আরো বাড়ানো যায়। এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করতে করতে একসময় তাদের প্রাণবায়ু শরীর ত্যাগ করে শুন্যে মিলিয়ে যায়।
এই ধনী মানুষগুলো কোনভাবেই সুখী হতে পারে না। সবসময়ই একটা না একটা অপূর্ণতা তাদের গ্রাস করে রাখে, তাই চাইলেও তারা নিজেদেরকে সুখী মানুষের তালিকায় রাখতে পারে না। অবশ্য বাইরে ভাব দেখিয়ে বেড়ায় তারা তাদের জীবন নিয়ে অনেক সুখী। বছরান্তে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো, রুটিন করে দাতব্য কাজে অর্থ নিয়োগ করে নিজেদের সম্পদ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার একটা বৃথা চেষ্টা সবসময়ই এ সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকে।
তাদের জীবনের প্রত্যেকটা উপকরণই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের হতে হবে। এখানে অবশ্য একটা কথা বলে রাখা দরকার। যারা একটু উঠতি ধনী তাদের মধ্যে এই প্রবণতাটা বেশি। যারা ইতোমধ্যে ধনী হয়ে গেছে বা কয়েক পুরুষ ধরে ধনী তাদের মধ্যে একটা তেলতেলে ভাব চলে আসে। তারা তখন আর ব্র্যান্ড নিয়ে মাথা ঘামায় না। তখন সাধারণ ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার করাটাই তাদের জন্য বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও গরীব মানুষদের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এমনই একটা ঐতিহ্যবাহী সুবিধার কথা আমরা আজ জানবো। অস্ট্রেলিয়ার প্রায় প্রত্যেকটা সবার্বেই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতি শনিবারে একটা বাজার বসে যেটাকে অস্ট্রেলিয়ানদের ভাষায় বলে ‘স্যাটারডে মার্কেট’। সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুর অবধি চালু থাকে এ বাজার।
স্যাটারডে মার্কেটে বাগান করার সরঞ্জাম থেকে বাগানের বাহারি ফুলের চারাও পাবেন। আছে পাখপাখালি, সেখানে পাখি থেকে শুরু করে হাঁস মুরগি সবই পাওয়া যায়। আছে কাপড় চোপড়ের অনেক দোকান। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দের জামা কাপড় কিনতে পারেন বেশ সস্তায়। এখানে পুরোনো জামা কাপড়ের পাশাপাশি নতুন জামাকাপড়ও পাওয়া যায়। বালিশ, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে বেডরুমের সব রকমের আসবাবপত্রও পাওয়া যায়।
পাখ-পাখালির দোকান থেকে একবার আমাদের বাড়িওয়ালা নাজমুল ভাই দুটো মোরগ কিনে নিয়ে এসেছিলো উনার নাতনি জেইনা এবং জাহিয়ার জন্য। তারাই প্রতিদিন সকালে ডেকে আমাদের ঘুম ভাঙাতো যতদিন উনাদের বাসাতে ছিলো। আর বাচ্চারা থেকে শুরু করে আমরা সবাই সে দুটোকে নিয়ে অনেক মজা করতাম। আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে সন্ধ্যা ভাবি বলতেন- আচ্ছা ইয়াকুব, বলতো মোরগ কিনে এনে কে সবচেয়ে খুশি হয়েছে? উত্তরে আমি বলেছিলাম- জাহিয়া, কারণ বয়সে জাহিয়াই সবচেয়ে ছোট। কিন্তু ভাবি বললেন- তোমার ভাই সবচেয়ে খুশি হয়েছে। তখন আমার মনে পড়ে গেলো নাজমুল ভাইয়ের শৈশব কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে নরসিংদীর পাচঁদোনাতে। উনার নানা বাড়িতে যেখানে বাড়িভর্তি হাঁসমুরগি খেলা করতো সারাক্ষণ।
এছাড়া খুব সস্তায় অনেকগুলো প্রাণির সাথে একটা টানা গাড়ি কিনে নিয়ে এসেছিলাম। সেই হাতি, জিরাফ এবং গোরিলাগুলো দিয়ে সে সারাক্ষণই খেলে বেড়াতে লাগলো। তাই স্যাটারডে মার্কেট তার শৈশবের অংশ হয়ে গেলো। যখন বড় হয়ে সে এইসব ছবি দেখবে তখন আশাকরি অনেক খুশিই হবে। কারণ সাধারণ দোকান থেকে এগুলো কেনার সামর্থ্য তখনও আমাদের তৈরি হয়নি।
মিন্টো স্যাটারডে মার্কেটে আমি একটা জিনিস দেখেছিলাম যেটা না বললেই নয়। সেটা হচ্ছে এখানে সস্তায় গলফ খেলার সব সরঞ্জাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের শুধু ধনী মানুষেরা গলফ খেলে, তাই ভাবছিলাম একদিন গলফ খেলার সরঞ্জাম কিনে নিয়ে আসবো। স্যাটারডে মার্কেটের পাশেই থাকে বিশাল কারপার্ক। এছাড়াও আপনি পাশের রাস্তায় গাড়ি রাখতে পারেন। তাই গাড়ি পার্কিং নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার দরকার নেই।
তবে কোন কিছু কেনার আগে দামাদামি করার অভ্যাসটা থাকা জরুরি। আর কোন কিছু কেনার আগে একটু যাচাই-বাছাই করে নেয়াই ভালো। অবশ্য বিক্রেতা আপনাকে আগে থেকেই বলে দেবে যদি কোন ত্রুটি থাকে।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |