বাসায়, কেমন আছেন?
ভালা, আফনার লগে একটা খানি খাইতাম ছাইরাম! বাক্কা দিন দেখা হয় না। আসলে কথাও অইল, দেখাও অইলনানি!
ফোনের অই পারে ছিলেন আবুধাবি প্রবাসী ভাই সাজেদুর রহমান সাচ্চু। কিছু কিছু ভাই-ব্রাদার আছেন যারা আনকন্ডিশনালি আপনাকে ভালবাসেন, ভালবাসতে যেয়ে আপনার মত-পথ ভিন্ন হলেও তাকে থোড়াই কেয়ার করে আপনার কাজ, লেখালেখি, আপনার নীতি-নৈতিকতাকে তারা মন থেকে ভালবেসে ফেলেন।
কোথাও গেলেন আর সেখানে দেখা হয়ে গেল ভাইটির সঙ্গে, তখন তিনি আপনাকে তার বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এমন সব বিশেষণ প্রয়োগ করবেন যার যোগ্য আপনি নন। এই ভালবাসাগুলো কেনা যায় না, তাকে কোন ব্যারোমিটারে মাপা যায় না, আর তাইতো তা কেবল আপনাকে ঋণী করে রাখে। সাচ্চু এমনই একজন সিলেটি ভাই আমার।
একজন দক্ষ ও ভাল সংগঠক তিনি। কিংমেকারও। নিজে কোন পদ-পদবির ধার না ধেরে নেতার জন্ম দেন। দলবল নিয়ে থাকেন, থাকতে পছন্দ করেন। আজ অবধি কখনো একা তাকে দেখিনি। আর সবসময় যে কোন আড্ডার মধ্যমনি এই ভাইটি। অসম্ভব পজিটিভ মানুষ।
ফোন দেয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে আসবেন বললেন, এলেনও। আমারও উইকেন্ড ছিলো। চললাম তার ফোর হুইলারে। আমি চাইছিলাম কোন বাংলাদেশি হোটেলে ভর্তা-ভাজি দিয়ে খাই, বাঙাল বলে কথা! কিন্তু তিনি তা শুনলেন না, শুনলেনই না। উনার ইচ্ছে আবুধাবি সালাম স্ট্রিটের ইন্ডিয়ান প্যালেস হোটেলে খাবেন আমাকে নিয়ে, একটাই দোহাই সব সময় তো আর এসবে খাওয়া হয় না!
মধ্যাহ্ন ভোজের সময়, এই পিক-আওয়ারে পার্কিং স্পেস পাওয়াটা ভালোই মুশকিল। মনে মনে চাইছিলাম একটা পার্কিং এর স্পেসও না থাকুক, কিন্তু সেদিন একটা চক্কর শেষের আগেই মিলে গেল তা।
আমি এ ধরণের হোটেলে খুব জরুরি কোন উপলক্ষ ছাড়া খেতে চাই না। কারণ ভারতীয় দরবার বা প্যালেস নামধারী এ হোটেলগুলো গলাকাটায় ভারি ওস্তাদ। এখানে খাবারও সবসময় রিচ হয়ে থাকে। হোটেলের প্রবেশমুখে এয়ার ইন্ডিয়ার হস্টেসদের মতো সুহাসিনী, বিনয়ের অবতার ললনাকে দেখে বুঝলাম, ফান্দে পড়ে গেছি।
পেতলের ডিশে করে প্রন-বিরিয়ানি আর হামুরের চেয়েও দুর্লভ প্রজাতির একটা সি ফিশের বোনলেস ফিলে ফ্রাই (মাছ যত দুর্লভ প্রজাতির হয়, দাম তার ততোই গগনচুম্বী হয়) আর কিছু ভুংভাং রাইতা মাইতা। সাচ্চুর ইচ্ছে আরো কিছু নেবে। আমি স্টপ করলাম।
ধারণা করুন তো কতো বিল আসতে পারে, কতো? আমাদের দুজনের খাবারের বিল এসেছে ২২০ দিরহাম। আমাকে পেমেন্টের আশপাশেও আসতে দিলেন না ভাই। আমি ভেবেছি ৮০ থেকে ম্যাক্সিমাম ১০০ দিরহাম হতে পারে বিল। বিল পেয়ে আক্কেল গুড়ুম। কিন্তু আমার হোস্ট ‘খানি’ খাওয়াতে পেরেই হ্যাপি।
আমার এবার আটকে থাকা দম ফেলার জন্য সমুদ্রতীরের ‘কর্নিশ লেক পার্কে’ যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। বললাম, ভাই একটু ওদিকটায় চলেন। উনি গাড়ি ঘোরালেন। মনে মনে ভাবছিলাম আমরা যারা সোশ্যাল ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত, এসব আমাদের মানায় না, আমাদের প্রান্তিক প্রবাসীদের অনেকেই কষ্টে আছেন, ২০ দিরহামে লাঞ্চ সেরে অই ২০০ দিরহাম তাদের কারো হাতে তুলে দিলে তার একমাস নিশ্চিন্তে চলে যেতো। এই প্রবাসে কে আছে তার খোঁজ নেওয়ার?
মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়ে ফেরার পথে ঘটলো আরেক কাণ্ড। ভাই তার ফোর হুইলার স্টার্ট দিয়ে বললেন, বাপপি ভাই মোবাইলটা দেন। দিলাম। এরপর বললেন গাড়িতে ওঠেন। বললাম, কেন কী হবে? উনি বললেন, ছবি নেবেন, মানে আমি স্টিয়ারিং হুইলে থাকব আর সে ছবি ওঠানো হবে। আমি বললাম, আরে নারে ভাই, এই ছবি আমি তুলব না আমার তো ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই।
কিছুক্ষণ পীড়াপীড়ি চললো...হাহাহা... আমি কিন্তু এই দারুণ সহজ আচরণ খুব ভালবাসি। যেমন ধরুন কারো জীবনে সখ ছিলো অ্যাটর্নি হবেন কিংবা পাইলট, হতে পারেননি...এমন অনেকেই সুযোগ পেলে সেই অ্যাটর্নির গাউনে কিংবা সেই পাইলটের ক্যাপে নিজের একটা ছবি তুলে রাখবেন আর আড়ে-আবডালে সেই বেশে নিজেকে দেখে নয়ন জুড়োবেন।
তবে এই কাজ সবাইকে দিয়ে হয় না, আমিও পারি না, তাই তাকে সরি বলতেই হলো। আমার সাদা চায়ে আর ভাইয়ের সুলেমানি দিয়ে শেষ হলো আমাদের একটি ভিন্ন ধরণের লাঞ্চের অভিজ্ঞতা। এরপর খালিফা স্ট্রিটে আমাকে ড্রপ করে ভাই চলে গেলেন তার ঠিকানায়।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |