যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্স মওসুম শুরু ২৮ জানুয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের আয়-ব্যয়ের বিবরণী বা ব্যক্তিগত ট্যাক্স রিটার্নের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি থেকে, জরিমানা ছাড়া ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ট্যাক্স রিটার্ন করা যাবে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2019, 04:11 AM
Updated : 27 Jan 2019, 04:11 AM

এবারের ট্যাক্স আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। স্বল্প আয়ের লোকজনের মতো উচ্চ আয়ের লোকজনও লাভবান হবেন। তবে এবার কড়াকড়ি হয়েছে বিদেশে বিনিয়োজিত অর্থের ব্যাপারে। ১০ হাজার ডলারের বেশি বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র, ফিক্সড ডিপজিট, ওয়েজ আর্নার বন্ড, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ, কোম্পানি অথবা ব্যাংকের শেয়ার কেনা, বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা থেকে আয়) থাকলেই তা ট্যাক্সের বিবরণীতে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন নিউ ইয়র্কে দুই সিপিএ (সার্টিফাইড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট) রফিকুল ইসলাম ও ইয়াকুব এ খান।

তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ নিয়েছেন কিংবা গ্রিনকার্ড রয়েছে এমন সবার বাংলাদেশে যদি বিনিয়োগ, সঞ্চয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাপার্টমেন্ট থাকে, তাহলে সে তথ্য যথাযথভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। সে অর্থের পরিমাণ যদি ১০ হাজার ডলার অথবা তার বেশি হয়, তাহলে এটি বাধ্যতামূলক। প্রতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এ তথ্য অনলাইনেও নির্দিষ্ট একটি ফরমে দেয়া যায়।

সিপিএ রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ রীতি চালু হয়েছে ফ্যাটকা (ফরেইন অ্যাকাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লাইয়েন্স অ্যাক্স) এর মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে যারা বিনিয়োগ করেছেন অথবা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপজিট করেছেন বা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন, তাদেরকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে ট্যাক্স রিটার্নের সময় সবকিছু উল্লেখ করতে হবে। অন্যথায় জেল-জরিমানাসহ নানা ঝামেলার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সব অর্থ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাজেয়াপ্ত করার এখতিয়ারও দিয়েছে ওই বিধি।”

সিপিএ ইয়াকুব এ খান বলেন, “বাংলাদেশে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তারাও এ আইনের আওতায়। অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের সব তথ্য জানাতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। এটি অমান্য করা চলবে না। লাভ বা সুদের পরিমাণও জানাতে হবে। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া স্থাবর সম্পত্তি ফ্যাটকার আওতায় নয়। তবে ওই সম্পত্তির ওপর থেকে আয় হলে যেমন, ভাড়া, সুদ, লভ্যাংশ ইত্যাদি ধরনের আয় যদি থাকে তা ইনকাম ট্যাক্সে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিটিজেন এবং গ্রিনকার্ডধারীর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার জন বাংলাদেশে নিয়মিত বাস করছেন। এদের মধ্যে সরকারী আমলা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিকও রয়েছেন।

সিপিএ রফিকুল ইসলাম জানান, ফ্যাটকা নতুন কোন বিধি নয়, অনেক পুরনো। তবে বাংলাদেশ এ বিধিতে বছর চারেক আগে স্বাক্ষর করায় তা বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জন্য খড়গ হিসেবে বিরাজ করছে। এ আইন অমান্যকারীর উচ্চ হারে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের বিধি রয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সিটিজেনশিপ বা গ্রিনকার্ড কেড়ে নেয়ার হুমকিও রয়েছে।

সিপিএ রফিকুল আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ব্যবসায়ী ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে মহাবিপদে পড়েন। এর মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি কারাবাস করছেন। আবার অনেকে জামিনে মুক্তি পেলেও মোটা অংকের জরিমানার ঝামেলায় দিনাতিপাত করছেন। এসব ব্যক্তিরা ফেডারেল গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন।

তথ্য গোপন না করে সঠিকভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ নির্ভুল তথ্য দিয়ে ট্যাক্স রিটার্নের পরামর্শ দিয়ে ইয়াকুব এ খান বলেন,  “অন্যথায় অডিটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। অডিটে কোন অনিয়ম ধরা পড়লে পেনাল্টিসহ অন্যান্য কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে। আইআরএস এর অডিট থেকে রেহাই পেতে সবারই সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন করা উচিত।”

তবে অডিট আসলে ঘাবড়ে না গিয়ে অভিজ্ঞ সার্টিফাইড প্রফেশনালের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সিপিএ ইয়াকুব এ খান বলেন, “ট্যাক্স সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে পরামর্শের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা।”

উভয় সিপিএ অভিন্ন ভাষায় জানান, ট্রাম্পের কারণে গরিবরা ট্যাক্সের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। আগে ১৭ বছরের কম বয়েসি প্রত্যেক সন্তানের জন্য এক হাজার ডলার করে পাওয়া যেত। এবার পাবেন দুই হাজার ডলার করে। আগে বয়সের সীমা ছিল ১৬ বছরের নীচে, এবার করা হয়েছে ১৭ বছরের নীচে।

এছাড়াও, ১৭ বছরের অধিক বয়েসি পোষ্য যেমন সন্তান, মা-বাবা, শ্বশুড়-শাশুরি, ভাই-বোন ইত্যাদির জন্য ৫০০ ডলার করে দেয়া হবে স্বল্প আয়ের আমেরিকানদের। তবে এসব অতিরিক্ত পোষ্যদের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকতে হবে। একইসাথে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।

বাংলাদেশে থাকা মা-বাবা, ভাই-বোন, বয়স্ক সন্তানদের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকলেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই সুবিধা নেন, তাহলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন সিপিএ রফিক।

শাটডাউনের কারণে অনেকে বিলম্বে চেক পাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এখন আর সে আশঙ্কা নেই। ফেডারেল, স্টেট ও সিটির দেওয়া চেক যথাসময়েই সংশ্লিষ্টরা পাবেন বলে সিপিএ রফিক ও ইয়াকুব খান উল্লেখ করেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!