শেখ হাসিনার প্রশংসায় নিউ ইয়র্ক পুলিশের উপ-প্রধান

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের উপ-প্রধান চার্লস স্কোল।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2019, 02:51 PM
Updated : 26 Jan 2019, 03:14 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট ভবন মিলনায়তনে দুই বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

চার্লস স্কোল বলেন, “শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সফল নারী নেত্রী। তিনি নারী ক্ষমতায়নের প্রতিভূ। তার মতো বিশ্বনেতার গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।”

চার দশক ধরে নিউ ইয়র্ক পুলিশের এই অফিসার একইসাথে ব্রুকলিন সাউথ পেট্রোল বরোর নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন।

 ‘সাহসী ও বিচক্ষণতাপূর্ণ কাজে সারা আমেরিকায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী’ বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অফিসার সাইদ আলীকে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।

ক্রেস্ট হাতে সাহসী পুলিশ অফিসার সাঈদ আলী এবং ক্যাপ্টেন খন্দকার আব্দুল্লাহ্‌ এর সাথে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেমস ও নীলের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার সময় চার্লস স্কোল বলেন, “৩৬ বছর বয়স্ক সাঈদ আলী দায়িত্ব পালনে যে অসীম সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন, তা এই সিটির পুলিশ বাহিনীর ইমেজকে অনেক মহিমান্বিত করেছে। একইসাথে এই সিটিকে সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠ একটি সিটিতে পরিণত করতে বাংলাদেশিদের কর্মনিষ্ঠারও প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। সাঈদ আলী হচ্ছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের হিরো।“

অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক পুলিশে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি অফিসার খন্দকার আব্দুল্লাহকেও বাংলাদেশ কন্সুলেট থেকে সম্মান জানানো হয়।

ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহকে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ‘রাইজিং স্টার’ অভিহিত করে পুলিশ উপ-প্রধান স্কোল বলেন, “আব্দুল্লাহ ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম বাংলাদেশি হলেও কর্মগুণে তিনি একদিন নিউ ইয়র্ক পুলিশের নেতৃত্ব গ্রহণেও সক্ষম হবেন। কারণ এ দেশে কর্মনিষ্ঠার মর্যাদা সব সময় দেওয়া হচ্ছে। আব্দুল্লাহর মতো হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পুলিশ অফিসার নিউ ইয়র্ক সিটির নিরাপত্তায় অশেষ অবদান রেখে চলেছেন।’

বড় দিনের ঠিক আগ দিয়ে ২২ ডিসেম্বর রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির পাতাল ট্রেনের ইস্ট ব্রডওয়ে স্টেশনে এক যুবতীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালাচ্ছিল পাঁচ দুর্বৃত্ত। সাঈদ আলী তখন টহল পুলিশ হিসেবে সেখানে নিযুক্ত ছিলেন।

নেশাগ্রস্ত ওই পাঁচ যুবককে তিনি বাধা দিলে তারা পাল্টা সাঈদের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। সাঈদ ঠাণ্ডা মাথায় আত্মরক্ষার্থে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করেই হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাদের দমাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে লাথি দিয়ে স্টেশনের মেঝেতে ফেলে দেন। আর এ দৃশ্য সেলফোনে এক যাত্রী ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত হয়।

সম্বর্ধিত দুই পুলিশ অফিসারের সাথে কন্সুলেট এবং মিশনের কর্মকর্তারা।

পরে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো সাঈদ আলীর প্রশংসার সময় তার জন্মগ্রহণকারী দেশের নাম উল্লেখ করলে ঘটনাটির ব্যাপ্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে। নিউ ইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। ফেইসবুকে পোস্ট করা ওই সংক্ষিপ্ত ভিডিও ফুটেজটি ৫২ লাখ আমেরিকান দেখেছেন।

বাংলাদেশের এই অভিবাসীকে সম্মান জানানোর এ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ‘অদম্য বাংলাদেশ’ লেখা পোস্টারে ছিল শেখ হাসিনার অভিবাদনের একটি ছবি। সেই ছবি দেখিয়েই উপ-প্রধান চার্লস স্কোল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার অভিমত জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, “আমার প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিসহ সারা বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ এবং সাঈদ আলীর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হবে। তারা উভয়ের মেধা ও জ্ঞানের সৌকর্ষে উজ্জীবিত হয়ে বহির্বিশ্বে স্ব স্ব দেশ ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।”

“নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশন এবং প্রশাসনে অনেক বাংলাদেশি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করছেন। বাঙালি প্রজন্ম ভালো ফলাফল দেখাচ্ছে। এসব মেধাবীদের পুরস্কৃত করা উচিত, তাহলে অন্যরা উৎসাহিত হবেন।”

অনুষ্ঠানের আয়োজক কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে দুই পুলিশ অফিসারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “কন্সুলেটের এই মিলনায়তনে প্রতিদিন শতশত প্রবাসীসহ ভিনদেশীকে আমরা সেবা দিয়ে থাকি। আজ এ ঘরেই এমন সফল দুজন বাংলাদেশি আমেরিকানকে আমরা সম্মান জানালাম যারা শুধু আমেরিকারই নয়, বাংলাদেশের জন্যও সমান গর্বের। যদি আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেঁচে থাকতেন, বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার পাশাপাশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রবাসীদের এমন অব্যাহত সাফল্য দেখে নিশ্চয়ই মুগ্ধ হতেন।“

বক্তব্য দিচ্ছেন উপ-প্রধান পুলিশ অফিসার চার্লস স্কোল। 

সাদিয়া ফয়জুননেসা এ সময় নিউ ইয়র্ক সিটির পৃলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, “তারা যেন অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আমেরিকা তথা সারা বিশ্ব এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনার চলমান কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখেন সেই প্রত্যাশা করি।”

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মেধাবি বাঙালিদের সম্মান জানানোর এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি অফিসারদের সংগঠন ‘বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’ (বাপা) এর সভাপতি সুজাত খান ও সেক্রেটারি হুমায়ূন কবীরও ছিলেন।

এদিকে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য সিনেটর ক্রিস এ ব্রাউন ২২ জানুয়ারি এক পত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য জয়ী হওয়ায় তার রাজ্যের জনসাধারণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

পত্রে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ পরস্পরের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব শান্তি, সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার ব্যানারে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষের সাথে আমেরিকানদেরও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সে আলোকে নতুন সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করবে।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!