মাউই: স্বর্গের কাছাকাছি কোথাও

হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কোথাও চলে যাওয়া আমার পুরনো অভ্যাস। এক কাজের সপ্তাহে চিন্তা করলাম হাওয়াই যাবো।

ফারহানাআহমেদ লিসা, ক্যালিফোর্নিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2019, 04:48 AM
Updated : 24 Jan 2019, 04:48 AM

রওনা হলাম। স্যানডিয়াগো থেকে ছয় ঘণ্টা লাগে। প্লেনে না ঘুমাতে পেরে কাহিল অবস্থা, যা আমি কখনই পারি না। ‘মাউই’ হাওয়াই এর দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ, সেখানে পা দিতেই মন খুশি হয়ে গেলো। নামতেই ‘আলোহা’ বলে কড়ির মালা দিয়ে গেলো লোকাল মানুষ। রেন্ট করা গাড়ি নিয়ে হোটেলে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেলো।

উঠলাম শেরাটন বাই দা রকে। চেক ইন করতেই সবাই পেলাম অর্কিডের মালা, আর রুমে গিয়ে প্লুমেরিয়া, অনেকটা কাঠগোলাপের মতো। ছোটবেলায় শিউলি ফুল না পেলে এটা দিয়ে মালা গাঁথতাম। নিচে নামলাম খেতে। ওরা বললো, সূর্য ডোবার কাছাকাছি সময় বিচে চলে যেও। জিজ্ঞেস করলাম কেনো? বললো, গিয়েই দেখনা, এ রিসোর্টের স্পেশালিটি ওটা।

হোটেল থেকে হেঁটে গিয়েই সমুদ্র। ঘন নীল আর ঘন সবুজ পানি। দূরে সাগরের ওই পারে আরেকটা শহর। কালো পাহাড়ের উপর একটা ছেলে দেখি কি এক অজানা ভাষায় গান গাইলো। তারপর লাফ দিলো পানিতে। তার মতো আরও কয়েকজন। সূর্য ডুবে যাচ্ছে, মানুষ প্যাডেল বোট, স্নরকেলিং করে তীরে চলে আসছে। পানির কতো যে রং, ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো।’ বাচ্চারা পানিতে নামি নামি করছে দেখে ফিরে আসতে হলো রুমে। বারান্দা দিয়ে সাগরের সব রং দেখতে দেখতে ভুলেই গেলাম প্রায় দুইদিন ঘুমাইনি!

পরদিন সকালে স্নরকেলিং গিয়ার নিলাম সবাই। চারদিকে এতো ফুল আর খুব মিষ্টি গন্ধ। পানিতে নেমেই মেয়ে আর তার বাবা শুধু দূরে গিয়ে স্নরকেলিং করতে চায়। তিনটা বিশাল কাছিমের কাছ থেকে তারা সরছেই না। এক পর্যায়ে কাছিমকে সি উইড খাওয়াতে গিয়ে বকা খেলো আরেক টুরিস্টের। আমি আর আমার ছেলে মাছ আর কাছিম দেখা শেষে পারে বসে রইলাম নন-অ্যালকোহোলিক পিনাকোলাডা আর মন্গো জুস হাতে। এখানে খাবারে নারকেল আর আনারসের ব্যবহার বেশি।

বিকালে বের হলাম শপিং-এ। আমি আর আমার মেয়ে ম্যাচিং ড্রেস আর বাবা ছেলের শার্ট কিনলাম, অনেক ফুলের গয়না কিনলাম, মাথায় ফুল কোন পাশে লাগাতে হবে ওরা বলে দিলো। কাছের বন্ধুদের জন্য নীল ফুলের গয়না শুধু নিলাম। নীল যে আমার প্রিয় রং ওরা তা জানে। কিনবো কিনবো করে কেনো যেনো কোরাল কিনলাম না। দাম বেশি মনে হচ্ছিল ছোট্ট কোরালের।

ডিনারে গেলাম এ রিসোর্টের ওপেন একটা রেস্টুরেন্টে। মেয়েকে নাচতে ডাকলো। পাঠিয়ে দিলাম মামনিকে। ওর হুলা হুলা নাচ এত মজা লেগেছে।

পরদিন রাত তিনটায় উঠে রওনা হলাম হালিয়াকালা, উঁচু এক জায়গা থেকে সূর্য উদয় দেখবো বলে। ১০ হাজার ফিট উঁচু, যেখানে মেঘের মাঝ থেকে সূর্য উঠে। হোটেল থেকে ওরা বলে দিলো ওদের কমফোর্টার নিয়ে যেতে। এত ঠাণ্ডা ভোরবেলায়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমার বর ড্রাইভ করছে। জিপিএস কাজ করছেনা সবসময়। ম্যাপ দেখে রোড সাইন দেখে পৌঁছে গেলাম।

লেখক

গাড়ি পার্ক করে শত শত মানুষের সঙ্গে কমফোর্টার গায়ে অল্প হেঁটে পৌঁছে গেলাম পাহাড় চূড়ায়। আমি কি মেঘ ছুঁয়ে আছি? একটু পরেই সূর্য উদয় দেখলাম। সাথে ড্রাম আর কি এক অজানা ভাষার গান। পুরো শহরটা নতুন লালচে আলোয় দেখে এবার ফেরার পালা। পথে রাস্তার পাশে ডাব আর কুড়িয়ে পেয়ারা খেতে খুব মজা লেগেছে। বাকি দিনটা অনেকগুলো বিচে ঘুরলাম। একেকটা বিচের একেক রং, কোথাও আকাশ এসে মিশে গেছে পানির সঙ্গে। একটা বিচে নেমে দেখি বহু কোরাল পড়ে আছে। কুড়িয়ে নিলাম একটা।

পরদিন রোড টু হানা রওনা হলাম। ইচ্ছা ছিল সবগুলো ঝরনা, বাগান আর শহর দেখে ফিরব। কিন্তু পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছোট্ট একটা গাড়ি চালাতে হয়, দুপুর পর্যন্ত গিয়ে দুটা ঝরনা দেখতে আর সাহস হলো না। সাগরের পাশে সি ফুড রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। পুরাটা রেস্টুরেন্ট অর্কিড দিয়ে সাজানো। ঘন নীল পানি আর আকাশ। এটা স্বপ্নরাজ্য। পরদিন ফিরে এলাম বাসায়। মাহালু মাউই। টিল নেক্সট টাইম....।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!