জাতিসংঘে দেশের ‘মর্যাদা রক্ষার’ অঙ্গিকার কূটনীতিকদের

গত বছর দেশে ঘটে যাওয়া নানা আলোচিত ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘মর্যাদা রক্ষার’ অঙ্গিকার করেছেন কূটনীতিকরা।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 05:58 AM
Updated : 23 Jan 2019, 05:58 AM

প্রতি বছরের মতো এবারও জাতিসংঘে নতুন বছর ২০১৯ কে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন।

মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি নূরএলাহি মিনার সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।      

তিনি বলেন, “নতুন বছরেও জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জনমত আরো সুসংহত করতে বাংলাদেশকে সোচ্চার থাকতে হবে। এটিই হচ্ছে এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে সরব থাকবে বাংলাদেশ। বিগত দিনগুলোতে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বিচক্ষণ কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আরো উর্ধ্বে উঠাতে বাংলাদেশ মিশন তার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।”

কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা

রাষ্ট্রদূত মাসুদ তার বক্তব্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, সাফল্যের বিভিন্ন দিক, নতুন বছর ২০১৯ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের যে সব বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে এবং যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু, এসডিজি বাস্তবায়ন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ মিশনের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও অর্জনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, “সাধারণ অধিবেশন ও নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের এ নিরন্তর, কৌশলী ও দ্বিমুখী আউটরিচ শুধু নিউ ইয়র্কেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলো এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে এজন্য কাজে লাগিয়েছি। জেনেভাতে মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের উপর একটি রেজ্যুলেশন বিপুল ভোটে গৃহীত হয়েছে। জেনেভাতে আমাদের স্থায়ী মিশন এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এজন্যই রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘে এতটা আলোচিত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেগোসিয়েশন পরিচালনার মাধ্যমে সহমত আনয়ন বহুপাক্ষিক কূটনীতির একটি অন্যতম মর্যাদাকর কিন্তু কঠিন কাজ। প্রতিবছর অল্প কিছুসংখ্যক দেশকে জাতিসংঘে তাদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদ বা ইকোসক এর প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব দেয়। এটিকে জাতিসংঘের ভাষায় ‘ফ্যাসিলিটেশন’ বলে। আমরা এবছর এরকম তিনটি রেজুল্যুশন বা ঘোষণাপত্র ফ্যাসিলিটেশন এর দায়িত্ব পেয়েছি এবং সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। এটি জাতিসংঘে আমাদের দক্ষতার স্বীকৃতি।”

তারেক মো. আরিফুল ইসলাম

বাংলাদেশ গত বছর জাতিসংঘের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় নির্বাচিত হয়েছে। সেগুলো হলো- হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ২০১৯-২০২১ মেয়াদে, কমিশন অব স্টাটাস অব উইমেন-এ ২০১৯-২০২২ মেয়াদে এবং ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন এর নির্বাহী বোর্ডে ২০১৯-২০২১ মেয়াদে। এটি বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে একটি দায়িত্ববান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উপর বিশ্বসম্প্রদায়ের আস্থারই প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।

গত বছর প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থরক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানিয়ে বক্তব্য দেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

কনস্যুলেটের স্থায়ী ভবন ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ কেনার জন্য নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের তাগিদের কথা জানিয়ে সাদিয়া বলেন, “বহুজাতিক এ সমাজ তথা বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউ ইয়র্কে ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এভাবেই সমৃদ্ধির পথে ধাবমান বাংলাদেশকে মার্কিন সমাজে আরো সমাদৃত করার লক্ষ্যে নতুন বছরে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।”

কনসাল জেনারেল জানান, গত এক বছরে ফি’র বিনিময়ে ৩০ হাজার প্রবাসীকে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। এ খাতে আয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এর বাইরেও শত শত সার্ভিস দেওয়া হয় কোনো ধরনের ফি ছাড়াই।

অনুষ্ঠানে মিশন ও কনসুলেটের কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- এম মনোয়ার হোসেন, সঞ্চিতা হক, নিরুপম দেবনাথ, তৌফিকুর রহমান, ইকবাল আব্দুল হারুন, নূর ই আলম, হুমায়ূন কবীর, আসিফ রহমান, আয়েশা হক ও শামীম হোসেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!