স্পেনের বার্সেলোনা ভ্রমণের গল্প

ইউরোপ ভ্রমণে যেমন আপনার ক্লান্তি লাগবে না, তেমনি যদি আপনাকে স্পেনের বার্সেলোনা ভ্রমণের কথা বলা হয় তাহলে আমার ধারণা আপনি কখনোই না বলতে পারবেন না। কারণ কী নেই বার্সেলোনায়? ফুটবলখেলাতে মেসি কিংবা রোনালদোকে দেখতে চান, বার্সেলোনা গেলেই দেখতে পাবেন।

দেবাশিস সরকার, অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2019, 05:00 AM
Updated : 18 Jan 2019, 05:03 AM

বিখ্যাত সি-বিচ, পাহাড়ে ঘেরা শহর, শত শত বছরের অসাধারণ শৈল্পিক কারুকার্যময় স্থাপনা, পেরা অলিম্পিকের স্মৃতি এবং সর্বোপরি অদ্ভুত সুন্দর একটা প্রদেশ হচ্ছে বার্সেলোনা। স্পেনের কাতালুনিয়া প্রদেশের রাজধানীএই বার্সেলোনা। স্পেনের মাদ্রিদের পর বার্সেলোনাই হচ্ছে বড় শহর। ভূমধ্যসাগর পারের বার্সেলোনাতে রোমান সাম্রাজ্যের নিদর্শনগুলো আজও স্পষ্ট চোখে পড়ে।

আমি বেলজিয়াম থেকে বাসে করে বার্সেলোনা গিয়েছিলাম। প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাগে বাসে যেতে। ভাবছেন এতো সময় কিভাবে সম্ভব বাসে বসে থাকা। কম খরচে আমার বার্সেলোনা দেখার শখ ২৪ ঘণ্টার কষ্টের চেয়ে অনেকবেশি ছিল। তবে ইউরোপে বাসে ভ্রমণ অনেকটাই আরামদায়ক। তাই আপনার খারাপ লাগবে না।

বার্সেলোনা গিয়ে উঠলাম আমার এক পাকিস্তানি বন্ধু ফয়সালের বাসায়। গিয়েই কিছুটা বিশ্রাম করে বেড়িয়ে পড়লাম রাতের শহর দেখতে। আসার পথে এশিয় দোকান থেকে নান আর মুরগির মাংস দিয়ে ডিনার করেনিলাম।

পরদিন সকালবেলা বের হয়ে গেলাম বার্সেলোনা দেখতে। যেহেতু অল্প সময় তাই সিটি ভ্রমণ বাসের সারাদিনের জন্য টিকেট কেটে ফেললাম। বাসে করে অল্প সময়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে ফেললাম।

বার্সেলোনা স্প্যানিশ লীগের বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব। ক্যাম্প নু স্টেডিয়াম যা একনামে সবাই চিনে এবং যেখানে একবার হলেও মানুষ খেলা দেখতে চায়। বার্সেলোনা ফুটবল দলের ঘর বলা চলে এ স্টেডিয়ামকে। আপনিভিতরে ঘুরেও দেখতে পারেন। ভাগ্য ভালো হলে খেলাও দেখে আসতে পারেন।

তাছাড়া এখানে আসল জার্সি কিনতে পারবেন। দাম একটু বেশি হলেও সংগ্রহ করার মতো জিনিস। আমরা বাংলাদেশ থেকে সারারাত জেগে বার্সেলোনার বিখ্যাত ফুটবল খেলার মাঠ ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়াম থেকে মেসিরগোল করা দেখি। কিন্তু যেখানে খেলা হয় সেই জায়গা কাছ থেকে দেখার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

বার্সেলোনা সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় মানুষের বেড়ানোটা সারাবছর লেগেই থাকে। কিন্তু বার্সেলোনার সমুদ্র যেনো একটু বেশিই সুন্দর। পায়ে হেঁটে বেশ কিছু পথ পাড়ি দিয়ে সি-বিচে যেয়ে নীল পানির সঙ্গে আনন্দে মেতেউঠার অভিজ্ঞতা জীবনের সম্পদ হয়ে উঠে।

পাহাড়ে ঘেরা এই বার্সেলোনা। মন্টজক আর তিবিদেবো পাহাড়ের ছায়ায় যেনো বার্সেলোনা দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ে পাহাড়ে বাসা বাড়ি, অফিস কিংবা স্থাপত্যশৈল্পী সবই যেন অসাধারণ। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দর্শনআপনার মনকে অনেক আন্দোলিত করে তুলবে।

কাসা বাতলে বা ড্রাগনের হাউস নামে বিখ্যাত বিল্ডিং এর কারুকার্য দেখলে আশ্চর্য না হওয়ার কোনো উপায় নেই। শত বছরের পুরনো এসব কারুকাজ শুধু বার্সেলোনাতেই পাবেন। ছোটবেলায় পাবলো পিকাসো এইখানেইথাকতেন এবং আর্ট স্কুলে পড়াশোনা করতেন। ঘুরে আসতে পারেন পিকাসো মিউজিয়াম থেকে।

রা ল্যাম্বলা স্ট্রিট হচ্ছে বার্সেলোনার বিখ্যাত পর্যটন রাস্তা। হাঁটতে যেমন ভালো লাগবে তেমনি বিভিন্ন ক্যাফেতে খাবার খেতেও ভালো লাগবে। হাঁটতে হাঁটতে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তিও চোখে পড়বে।

অসাধারণ সুন্দর ১৩ শতকের ক্যাথেড্রালও চোখে পড়বে এই বার্সেলোনায়। সাগরাদা ফ্যামিলিয়া ক্যাথেড্রাল হচ্ছে বার্সেলোনার একটি বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। এটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। আর কাজ যেনো কখনো শেষ হয় না।কাতালুনিয়ার জাতীয় মিউজিয়াম না দেখলে আপনি বার্সেলোনা দেখার কথা পুরোপুরি বলতে পারবেন না। এ এক অদ্ভুত নিদর্শন স্থাপত্যকলার। কি এক বিশাল এলাকা নিয়ে এটার আওতা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।

এতো ঘোরাঘুরির পর যখন আপনার মনে হবে বার্সেলোনার কিছু খাবারের স্বাদ নিতে চান তাহলে আর অপেক্ষা করবেন না। আমি বাংলাদেশি মানুষ তাই ভাত না হলে আমার হয় না। তাই এমন কিছু একটা খেতে চাইলামদোকানির কাছে। আমাকে ডিম ওমলেট, কিছু আলুভাজি আর সালাদ দিয়ে দোকানি বললো- দেখো এতে করে তোমার ক্ষুধা মিটবে কিনা।

আমি বললাম তুমি বুঝলে কী করে যে এতে আমার চলবে? দোকানি বললো, আমি অনেক এশিয় লোকদের আপ্যায়ন করি, বুঝতে পারি তারা কী চায়- এ কথা বলেই একটা হাসি দিলো। কারো মন বুঝতে পারার মতো আরকী হতে পারে? আমিও হাসিমুখে খেয়ে দেয়ে বিদায় নিলাম বার্সেলোনার ভালোবাসা বুকে ধারণ করে।

লেখক: পর্যটক ও গবেষক

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!

এই লেখকের অন্যান্য লেখা