আগ্নেয়গিরির দেশে ভ্রমণ

দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের একটা ইচ্ছা ছিলো অনেকদিনের। ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণে এখন বাংলাদেশিদের ভিসার প্রয়োজন হয় না, তাই এ সুযোগটা নিলাম।

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2019, 03:54 AM
Updated : 17 Jan 2019, 03:55 AM

ইন্দোনেশিয়ায় যা কিছু দেখবো ভ্রমণ তালিকায় একটি ছিলো- আগ্নেয়গিরি দেখা। উত্তর সুমাত্রায় ওরাংওটাং দেখা পর্ব শেষে রওনা হই পরবর্তী বেরাস্তাগি টাউনের উদ্দেশ্যে। বেরাস্তাগিকে বলা হয় ‘আগ্নেয়গিরি টাউন’। ‘ফল-সবজির টাউনও’ বলা হয়ে থাকে।

হোটেল ছাড়ার সময় এক লোক বললেন, সেখানকার ফলের মার্কেটে যেতে যেনো না ভুলি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, খুব ফল পাওয়া যায় বুঝি সেখানে? লোকটি বললেন, নানা জাতের প্রচুর ফল পাওয়া যায়। আরও বললেন, কিছু জাতের ফল তিনি জীবনে প্রথমবার বেরাস্তাগির মার্কেটে দেখেছেন।

বুকিত লাওয়াং থেকে বেরাস্তাগি টাউন চার ঘণ্টার রাস্তা। শেয়ারিং গাড়িতে করে আমরা কয়েকজন। লোকাল বাসে সময় লাগে বেশি। যেতে যেতে মোবাইল ইন্টারনেটে বেরাস্তাগির ফলের মার্কেটটি দেখলাম। সেখান থেকে কিছু ফলমূল কিনে তারপর হোটেলে উঠবো ঠিক করলাম।

আগ্নেয়গিরির এলাকা হওয়াতে এখানে ফলের ও সবজির ফলন হয় ভালো। আগ্নেয়গিরির ছাই প্রাকৃতিক জৈব সার হিসেবে কাজ করে। ফসলাদির জন্য খুবই ভালো আগ্নেয়গিরি ভূমি। টাউনের একটু বাইরে হাঁটলে আপনি দেখতে পাবেন বিশাল বিশাল স্ট্রবেরি ক্ষেত। টাউনের ভেতর দেখা পাবেন স্ট্রবেরি ফেরিওয়ালার।

টাউনের চাহিদা মিটিয়ে ইন্দোনেশিয়ার আরও বিভিন্ন শহরে যায় বেরাস্তাগির ফল ও সবজি। খুব কাছ থেকে আগ্নেয়গিরি দেখার একটা ইচ্ছা ছিলো আমার। বেরাস্তাগিতে দুটো আগ্নেয়গিরি রয়েছে। টাউনের একদম কাছেই মাউন্ট সিবায়াক, অপরটি মাউন্ট সিনাবুং আগ্নেয়গিরি। দুটোই জীবিত আগ্নেয়গিরি। বেরাস্তাগি শহর কেন্দ্র থেকে মাউন্ট সিবায়াকের উড়ন্ত ধোঁয়া দেখলাম। জীবনে প্রথমবার দেখলাম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। সত্যিই অসাধারণ সেই অনুভূতি!

আগ্নেয়গিরির লাভা দেখার একটা ইচ্ছা ছিলো আমার। লাভা ছুঁয়ে দেখারও একটা শখ ছিল মনে। এখানকার এক পিৎজা দোকানের নাম দেখে কিছুক্ষণ হাসলাম। দোকানের নামটি বেশ মজার, ‘লাভা লাভা পিৎজা।’

আগ্নেয়গিরি সিবায়াকের চূড়ার চড়ার অনুমতি রয়েছে। কেউ চাইলে স্থানীয় গাইডের সহযোগিতায় বা আগে ক্লাইম্বিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে নিজে নিজেও চড়তে পারবেন চূড়ার। সিবায়াক আগ্নেয়গিরির শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল একশ চল্লিশ বছর আগে।

আগ্নেয়গিরি সিবায়াকের চূড়ায় জ্বালামুখে একটি ছোটখাটো গর্ত রয়েছে। গর্তে পানি আছে। অত্যন্ত গরম পানি। আর নিচে রয়েছে অসংখ্য হট স্প্রিংস। আপনি এখানে খুব সস্তায় সহজেই হট স্প্রিংস এর অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। হট স্প্রিংস এর পানিতে সালফারসহ আরও বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকায় এ পানিতে শরীর ভিজিয়ে রাখলে নানা উপকার হয়। চর্মরোগ ও শরীরের ব্যথা উপশম হয়।

সিনাবুং আগ্নেয়গিরি বেরাস্তাগি শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে। এটি উচ্চতায় ২ হাজার ৪৬০ মিটার। কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। আর্মি নিয়োজিত রয়েছে। এখানকার জনশূন্যহীন একটি গ্রাম এখন ভূতের গ্রামে পরিণত হয়েছে। ট্যুর বুক করে সেখানে যাওয়া যাবে।

সিনাবুং আগ্নেয়গিরির শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। অগ্ন্যুৎপাতের ধোঁয়া উড়া একটি ছবি হোটেল মালিক আমাকে দেখালে ভয় পেয়ে যাই আমি। তিনি নিজে এই ছবিটি তুলেছেন বললেন।

বেরাস্তাগির গুন্ডালিং নামক একটি উঁচু জায়গা থেকে সিনাবুং আগ্নেয়গিরির ভিউ করা যায়। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে আর আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে এখান থেকে আপনি উড়ন্ত ধোঁয়াসহ সিনাবুং আগ্নেয়গিরি ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন। কিছু প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার আছেন। খুব সস্তায় পর্যটকদের ফটো তুলে দেন।

আগ্নেয়গিরি দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঙ্গে করে আগ্নেয়গিরি টাউন বেরাস্তাগিকে বিদায় জানিয়ে চললাম পরবর্তী গন্তব্য লেক টোবায়। এটি একটি মহাআগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ জুড়ে অবস্থিত বৃহৎ প্রাকৃতিক হ্রদ। লেকটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ গল্প আরেকদিন!

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!