প্রবাসীর ভ্রমণ: নিউ ইয়র্ক মানে যুক্তরাষ্ট্র দেখা

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ইচ্ছা কার না জাগে বলুন? বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা-দীক্ষার দিক থেকেও অনেক উন্নত, বহুসংস্কৃতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

দেবাশিস সরকার, অস্ট্রেলিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2018, 07:23 AM
Updated : 24 Dec 2018, 07:25 AM

তাই বলে পুরো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করা আবার চাট্টিখানি কথা নয়। আমি এই লেখায় শুধু নিউ ইয়র্ক ভ্রমণের গল্পই বলবো। আগের লেখাতে বলেছি যে আমি বোস্টন থেকে বাসে করে নিউ ইয়র্ক বেড়াতে যাই। বাসে করে যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লাগে। বিদেশে বেড়ানোর সময় আমি বাসযাত্রা পছন্দ করি। কারণ বাসে যাতায়াত করলে আশপাশে দৃশ্যগুলো সহজেই খুব কাছ থেকে দেখা যায়। তবে বাসে ভ্রমণ করলে আবার অনেক সময়ও লাগে।

যাই হোক, আমার হাই স্কুলে একসঙ্গে পড়া যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী বন্ধু আবুল কালাম আজাদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম মাঝরাতে নিউ ইয়র্কে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও ছুটি নিয়ে আমাকে ২ দিন সময় দিয়েছে সে। আর তার জন্যই এত অল্প সময়ে অনেক কিছু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। নিউ ইয়র্ক মানেই যেন যুক্তরাষ্ট্র, আবার ঠিক উল্টোটাও। বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে নিউ ইয়র্কে। বিশাল এলাকাজুড়ে যেমন পার্ক রয়েছে তেমনি অল্প জায়গার মধ্যে অনেক আকাশচুম্বী বিল্ডিং রয়েছে। বলা হয়ে থাকে প্রায় ৮০০ ভাষাভাষীর মানুষ এই নিউ ইয়র্ক শহরে বসবাস করে। অভিবাসীদেরও স্বর্গরাজ্য এই নিউ ইয়র্ক শহর।

নিউ ইয়র্ক আসা মানেই টাইম স্কয়ারে একবারের জন্য হলেও একটা ঢুঁ মারা। আর এই জায়গাটি হচ্ছে ব্যবসা ও বিনোদনের কেন্দ্র। নিউ ইয়র্ক যেন রাতে ঘুমায় না। সেটা টাইম স্কয়ারে গেলেই বুঝা যায়। টাইম স্কয়ার যেমন তরুণ-তরুণীদের আড্ডার জায়গা তেমনি যারা নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ করতে যান তাদেরও আড্ডার জায়গা। প্রতিবছর কোটি কোটি ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। পুরো টাইম স্কয়ার যেন ডিজিটাল প্লাটফর্ম! হরেক রকমের বিজ্ঞাপনের ব্যস্ত জায়গা।

এত মানুষ দেখে মনে পড়ছিলো আমাদের দেশের নিউ মার্কেটের কথা। এই জায়গায় অনেক বাংলাদেশি লোকজনের ব্যবসা আছে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলেই বুঝতে পারবেন বাংলাদেশি লোকদের বাংলায় হাক-ডাক। রাস্তার পাশে খাবারের দোকান ঠিক আমাদের গুলিস্তানের মতো- ভ্যানের উপর কাচ দিয়ে ঘেরা খাবারের আয়োজন। চাইলে আপনি রুটি ডিম দিয়ে স্যান্ডউইচ খেয়ে নিতে পারেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে নিউ ইয়র্কে বিশ্বের অনেক দেশের খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রামে করে চলে গেলাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার দেখতে। ট্রামে উঠেই বুঝতে পারলাম কত বিচিত্র ধরণের মানুষের বসবাস এই নিউ ইয়র্কে। মানুষের দিকে তাকিয়েই মনে হলো এক বগিতেই যেন ২০ দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছি! আপনাদের নিশ্চয় ৯/১১ এর কথা মনে আছে। ২০০১ সালের ৯/১১ এর বিমান হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সম্মান জানানোর জন্য স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। সেখানে দেয়ালে খোদাই করে মানুষের নাম লেখা আছে। পাশেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ১০৪ তলার ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেটা ভিজিটের সময় একবার বলেছিলেন, ‘আমরা মনে রাখি, নতুন করে গড়ি এবং আরো শক্তিশালী হয়ে ফেরত আসি’। ট্রেড সেন্টার দেখার সময় আমার তাই মনে হয়েছে। কি অদ্ভুত সুন্দর করে আবার গঠন করা হয়েছে!

যাই হোক, চলে গেলাম স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে। নিউ ইয়র্ক বেড়াতে গেলে কি আর স্ট্যাচু অব লিবার্টি না দেখে আসা যায়? আর সেই জায়গায় বসে এককাপ গরম কফি হলে তো কথাই নেই। ছোটবেলা থেকেই তার ছবি দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। কাছে গিয়ে তো আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু স্ট্যাচু অব লিবার্টির পাদদেশে যেতে হলে ফেরি দিয়ে যেতে হয়। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি!

বন্ধু আজাদের সহায়তায় কিছু ছবি তুলে নিলাম। তারপর আশপাশে ঘুরে আজাদের কফি আপ্যায়নের মাধ্যমে দেখে নিলাম স্বপ্নের স্থাপত্যশিল্প, যা শুধু সংগ্রাম আর স্বাধীনতার কথা মনে করিয়ে দেয়। ফ্রান্স থেকে উপহার পাওয়া এই স্ট্যাচু অব লিবার্টি ১৮৮৬ সালে স্থাপন করা হয়। ফেরার পথে ‘এলিস আইল্যান্ড ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন’-এ অভিবাসীদের মূল্যবান ছবি আর সেগুলোর ইতিহাস দেখতে একটু ঢুঁ মেরে চলে আসলাম।

ঘুরতে ঘুরতে ওয়াল স্ট্রিটে গেলাম। ওয়াল স্ট্রিট নিউ ইয়র্কের একটি বিখ্যাত জায়গা বা সড়ক যেখানে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, ফেডারেল রিজাৰ্ভ ব্যাংক কিংবা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল। এখানে বেড়াতে এলে সবাই ব্রোঞ্জের তৈরি ষাঁড়ের সঙ্গে ছবি তোলে, আমিও তুলে রাখলাম। এই ষাঁড় আসলে আর্থিক অবস্থার একধরণের শৈল্পিক উপস্থাপনা, রাতের অন্ধকারে ব্রুকলিন ব্রিজ এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। ব্রিজের আলোকচ্ছটা যখন পানিতে এসে পরে সেই সৌন্দর্য দুই চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা করা যায় না।

নিউ ইয়র্ক আর জাতিসংঘের সদর দপ্তর যেন একসূত্রে গাঁথা। এখানে বছর বছর সারা বিশ্বের নেতারা মিলিত হন বিশ্বের উন্নয়নের পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের জন্য। তাই সদর দপ্তর না ঘুরে আসলে একটা অতৃপ্তি থেকে যায়। একটা ছবি তুলে নিউ ইয়র্ক থেকে বিদায় নিলাম জার্মানির পথে। বলা তো যায় না ভবিষ্যতে হয়তো কোনো একদিন আবার জাতিসংঘে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে!

লেখক: পর্যটক ও গবেষক

ইমেইল: debashisemp@gmail.com

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!