ভিনদেশের মাটিতে বসে বৃহস্পতিবার দিনমান কাজের সামান্য ফুরসতে পপ লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনছি আর চোখের জল মুছছি। বিষয়টি সিরীয় এক সহকর্মীর চোখে পড়ার পর তিনি প্রয়াত শিল্পীর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমি তাকে বাচ্চুর কিছু কনসার্টের ফুটেজ দেখাতেই তিনি গানের ভাষা না বুঝলেও, লিড গিটারের ভাষা বুঝে অভিভূত হয়ে বললেন, ‘হি ইজ আ জিনিয়াস...!’ ওর অ্যাটিচ্যুড দেখে মনে হলো বাংলাদেশেও যে এমন মিউজিক্যাল ট্যালেন্ট থাকতে পারে এটা তার ধারণার বাইরে ছিল।
আইয়ুব বাচ্চুর গাইবার যে ধরনটা আমাকে বেশি আকৃষ্ট করতো তা ছিল, তিনি চাইতেন তার শো বেশি বেশি পার্টিসিপেটরি হোক, দর্শক শ্রোতাদের সাথে তার ইন্টার্যাকশন আমায় মুগ্ধ করতো।
তার গিটার বাজানো, তার গায়কী সব কিছুতেই তিনি ছিলেন- সুপার্ব। স্লো ও কুল ফোক মিউজিকের পাশাপাশি ড্রামের ফাস্ট বিট, গিটারের মূর্চ্ছনায় দর্শকদের মাতাল করে পপ মিউজিককে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব তার অনেকখানি। তার ভরাট উদ্দাম প্রাণশক্তির গলায় সুরের কারুকাজ সব বয়সীদের মুগ্ধ করতো। আইয়ুব বাচ্চুর কোন গানটা হিট ছিলো না বলুন! তাই কোন গানকে আলাদাভাবে অন্যটার চেয়ে বেশি ভাল বলতে পারছি না। এই লিজেন্ড, এই এলআরবি, এই সোলস, মাইলস, আজম খান, জেমসরা আমাদের অমূল্য সম্পদ। এদের কোনও মৃত্যু নেই,ক্ষয় নেই।
আমিরাত প্রবাসীদের যে নিদারুণভাবে নাড়া দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। প্রবাসীদের আলাপচারিতায়, চা খানার টেবিল টকে, বাংলাদেশি অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে, ফেইসবু্কে সর্বত্রই সঙ্গীতানুরাগীদের মাঝে বিরাজ করছে একটা শোকের আবহ। ৭১ টিভির আমিরাত প্রতিনিধি লুতফর রহমানের কথায়, ‘বাংলা গানের জগতে যাদের গানে মন ভাল হয় আইয়ুব বাচ্চু তাদেরই একজন। তিনি গানে খেলতে জানতেন। শ্রোতাদেরও খেলাতেন। ওপারে ভাল থাকুন গানের পাখি...!’
টিভি চ্যানেল নিউজটোয়েন্টিফোর ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন আমিরাতের প্রতিনিধি কামরুল হাসান জনি লিজেন্ডের মৃত্যুর খবরে আবেগতাড়িত কণ্ঠে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “স্কুল শেষ করে কলেজের গণ্ডিতে যখন পা রাখি তখন থেকেই ভক্ত তার। এক সময় গিটার চর্চা করতাম, অন্তত গিটারে তার গানগুলোর সুর তোলার আগ্রহ কখনোই কমেনি। ব্যান্ডে যে কজন শিল্পীর গান শুনে অবসর কাটতো তাদের অন্যতম একজন এই গুণি শিল্পী। অবেলায় তার চলে যাওয়া সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ওপারে ভাল থাকুক, প্রিয় শিল্পী।"
প্রবাসে বসবাসরত কবি, লেখক এবং অনুবাদক মোস্তাকিম রাহী বলেন, “কৈশোরে মনোহর সুরের জালে আমাদের জড়িয়েছিলেন এবি। অতি তারুণ্য পেরিয়ে পরিণত বয়সেও সমান আর্দ্র, আবেগি করে তার প্রতিটা গান। তিনি চলে গেছেন, এই সত্য মানতে কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসার বুদবুদ গলায় এসে দলা পাকাচ্ছে!”
দুবাই প্রবাসী মারচেন্ডাইজার মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “তার লাইভ শো দেখার সৌভাগ্য আমার বেশ কয়েকবার হয়েছে, কী অসাধারণ স্টেজ শো করতেন তিনি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সারা রাত মাতিয়ে রাখতেন দর্শক হৃদয় জয় করে।”
প্রবাসী হাসান বিন আমিন আজমান বললেন, “উইকেন্ডের কাজের ব্যস্ততা ছিল। কিন্তু বাচ্চু ভাই এর বিদায় ব্যস্ততাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। কেন যেন মন থেকেই মানতে পারছিনা। মনে হচ্ছে খুব কাছের আপন কেউ চলে গেল।”
আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ফরহাদ হোসেন বলেন, “ব্যান্ড সঙ্গীতের আকাশের উজ্জ্বল তারকা আইয়ুব বাচ্চু এত অসময়ে খসে যাবেন আমরা ভাবতে পারিনি। ভাল থাকুন এবি...!”
দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন মুহুরী রিপন পপ আইকন আইয়ুব বাচ্চুর অকালে হারিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যখন থেকে গান বুঝি তখন থেকেই তার গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। তার এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়া কিছুতেই মানা যাচ্ছেনা। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। তার মত লিজেন্ডদের মৃত্যু নেই।”
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |