নিউ ইয়র্কের আলোচনায় সাংবাদিক নেতারা: হাসিনার নেতৃত্বই দরকার ভবিষ্যতেও

বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে জন্য আরও অনেক বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দরকার বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানের বক্তারা।  

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2018, 02:40 PM
Updated : 4 Oct 2018, 02:40 PM

নিউ ইয়র্কের মুক্তধারার উদ্যোগে রাজনীতি বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়ের লেখা ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তারা।

২৮ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটস এর ইত্যাদি পার্টি হলের দোতলায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বইটির প্রকাশ উপলক্ষ্যে আলোচনা করেন বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশের সংবাদভিত্তিক চ্যানেল একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন বাবু, সাংবাদিক ফারজানা রূপা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম।

গ্রন্থটির লেখক সুভাষ সিংহ রায় এবং মুক্তধারা নিউ ইয়র্কের কর্ণধার বিশ্বজিত সাহাও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নূর।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “সুভাষ সিংহ রায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেকগুলো দলিল একত্র করেছেন। তবে সুভাষ বইটির মধ্য দিয়ে যে কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন তা এই নামকরণে ঠিকভাবে আসেনি। বইটির নামকরণ হওয়া উচিত ছিল- বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে ফিরে পাওয়া।”

সুভাষ সিংহ রায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা না এলে বাংলাদেশ ভেন্টিলেশনে থাকে। জিডিপি কম থাকে। তিনিই বাংলাদেশের ডিফল্ট নেতা। তিনিই বাংলাদেশের জননী, আবার তিনিই বাংলার কন্যা। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে একত্রে সামনে রেখেই রাজনীতি করবে।”

“আরো পনের বছর বাংলাদেশের তাকে প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সবচেয়ে ওয়াকিবহাল। সে কারণে তাকে আমি কখনো জ্ঞান দিতে যাই না। কারণ কে কী করছেন তার খোঁজ তিনি রাখেন। তার বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর কাছেই আছে সবচেয়ে বেশি তথ্য। তার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা তাঁর হতেই তৈরি হবে। তিনিই হবেন বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যমতের মধ্যমণি।”

শ্যামল দত্ত তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতার সূত্র উল্লেখ করে বলেন, “বড় ল্যান্ডস্কেপে যদি দেখা হয় তাতে আজকের বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে যদি এক পক্ষকেই বেছে নিতে হয় তাহলে শেখ হাসিনাকেই বেছে নিতে হবে আমাদের। জাতিসংঘের অধিবেশনে আমরা দেখলাম শেখ হাসিনা যখন প্রবেশ করছেন তখন সভাকক্ষে যেন একটা চঞ্চলতার সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।”

“অন্যান্য নেতাদেরও তো আমরা দেখলাম, কই তাঁদের কাউকে নিয়ে তো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হচ্ছে না। অর্থাৎ তিনি বিশ্বে এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন।”

সুভাষ সিংহ রায়ের ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ বইটি নিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, “শেখ হাসিনার দুটি প্রত্যাবর্তনের কথা এই বইয়ে বলা হয়েছে।  দুটি প্রত্যাবর্তনই মে মাসে। একটি ৭ই মে, অন্যটি ১৭ই মে। আমি এই দুটো প্রত্যাবর্তনেরই সাক্ষী। প্রথম প্রত্যাবর্তনের সময় এয়ারপোর্টের রানওয়েতে মানুষ চলে আসায় বিমান নামতে পারছিল না। তিনি যেদিন ফিরলেন সেদিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ কাঁদছে! বাংলাদেশের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষের চরিত্র এই বইয়ে উন্মোচিত হয়েছে। এ ধরনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণাত্মক বই খুব দরকার।” 

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের গণহত্যার দু:সহ স্মৃতি উল্লেখ করে শ্যামল দত্ত বলেন, “সেই ঘটনাটি বেশি আলোচিত হয় না। সেদিন তাকে লক্ষ করেই গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। সেখানে কাসেম নামে শ্রমিক লীগের এক কর্মী নেত্রীকে আগলে রেখে নিজে মারা যায়, একই জায়গায় পাথরঘাটার স্বপন নামে একটি ছেলে বুকে গুলি নিয়ে নেত্রীকে রক্ষা করেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমা ধাঁচের রাজনীতির বিবেচনা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে দেখলে চলবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক ক্রুয়েল। এর মধ্যেই শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করতে হয়। তাই তাকেই সমর্থন করতে হয় আমাদের। বাংলাদেশ যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার জন্য শেখ হাসিনাকেই কৃতিত্ব দিতে হয়। বাংলাদেশেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জন্য শেখ হাসিনাকেই দরকার।”

বইটি নিয়ে আলোচনার সূত্রে একাত্তর টিভির সাংবাদিক ফারজানা রূপা বলেন, “বইটা পুরো পড়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বুঝতে পেরেছি বইটার মধ্যে এমন অনেক দলিল আছে যা সাংবাদিকদের বার বার কাজে লাগবে। আমরা একাত্তর দেখিনি, পঁচাত্তর দেখিনি। কিন্তু ২০০১ বা ২০০২, ২০০৬ বা ২০০৭-এর রাজনৈতিক ঘটনাবলি সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কাছে থেকে দেখেছি। শেখ হাসিনার মধ্যে রয়েছে নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে কর্মের যোগ।”

শেখ হাসিনার জন্মদিনের কথা স্মরণ করে ও তাকে শুভকামনা জানিয়ে সুভাষ সিংহ রায় বলেন, “বইটিতে এমন অনেক প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের ঘটনাবলির পর তৎকালীন সরকারের বঙ্গবন্ধু বিরোধিতায় নিয়োজিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম আছে যাদের অনেকেই এখন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক।”

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, “জাতিসংঘ থেকে আজ শেখ হাসিনাকে লিডার অব হোপ বা লিডার অব পিস’ নামে অভিহিত করছে। আমরা বাঙালিরা এই গৌরববোধের অংশীদার।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!