শেয়াল বলেছে আঙুর টক, জাপানিরা বলছে মিষ্টি

যতদূর চোখ যায় শুধু আঙুর ফলের বাগান! পাহাড়-সমতল যেদিকেই তাকান নানা বর্ণের নানা স্বাদের আঙুর ফল দেখতে পাবেন। এ যেন এক আঙুর ফলের রাজ্য।

মাহবুব মাসুম, জাপানের ইয়ামানাসি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2018, 09:23 AM
Updated : 30 Sept 2018, 09:23 AM

ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জাপানের ইয়ামানাসি জেলায় এ ফলের চাষ করে আসছে। জাপান সরকারের দেয়া তথ্যে জানা যায় দেশের ৫০ ভাগ আঙুর ফল এই ইয়ামানাসিতে উৎপাদন হয়।

সারা বছর আঙুর ফল পাওয়া গেলেও জুলাই থেকে নভেম্বর মাস হলো এ ফলের মূল মৌসুম। এ সময়টাতে বাগান মালিকরা আঙুর ফল তুলতে খুব ব্যস্ত সময় পার করেন।

প্রতিদিন এ জেলার হাজার হাজার টন আঙুর চলে যাচ্ছে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যিক জুস ফ্যাক্টরি ও বিভিন্ন নামিদামি ওয়াইন ফ্যাক্টরিতে। এছাড়া সারাদেশের সাধারণ বাজার বা সুপারশপে যাচ্ছে।

নানা স্বাদের আঙুর ফল খেতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসেন এই ইয়ামানাসি জেলায়। এ জন্য ইয়ামানাসি জেলা পর্যটন কর্তৃপক্ষ নানা সেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এখানে যে শুধু আঙুর ফলের বাগান তা নয়। এ জেলায় আরো দুটি ফলের ব্যাপক চাষ হয়। একটি হচ্ছে মুমু বা পিচ ফল, অন্যটি হচ্ছে নাশি বা নাশপাতি ফল। ফলের জন্য বিখ্যাত এ জেলাটি একবার ঘুরে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে কি পরিমান ফল উৎপাদন হচ্ছে এখানে।

মনে পড়ে ঈশপের সেই গল্প ‘শেয়াল ও আঙুর ফল’। সেই যে শেয়াল লাফ দিয়ে আঙুরের থোকা নাগালে পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। বারবার সে লাফ দিতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই আঙুরের নাগাল পেল না। বিরক্ত হয়ে বলে উঠল, ছি আঙুর ফল কি কেউ খায়! এমন টক ফল নাইবা খেলাম। এই বলে শেয়াল বনের দিকে চলে গেলো।

কিন্তু ইয়ামানাসিতে আঙুর খাওয়ার জন্য লাফ দিতে হবে না। জাপানিরা মাইলের পর মাইল চাষ করে রেখেছে আঙুরের বাগান। আসলে চেষ্টা আর পরিশ্রম থাকলে সবই সম্ভব। তবে খেয়াল করলাম- আঙুর, পিচ বা নাশপাতি যে ফলই হোক না কেন, অনেক বাগান রয়েছে এসব ফল কখনই সংগ্রহ করা হয় না। হয়ত বাগান রেখে তারা দেশ বা বিদেশে নিজের কাজে ব্যস্ত তাই সংগ্রহ করে না। ফলগুলো পেকে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আবার অনেক বাগানের ফলন একটু কম হয়েছে, তাই পুরো বাগানের ফল আর সংগ্রহ করেনি চাষী। এছাড়া যেসকল বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলোতেও কিছু ফল রেখে দেয়া হয়েছে যা আর কখনই সংগ্রহ করা হবে না। এভাবে নষ্ট হচ্ছে অসংখ্য ফলফলাদি। এছাড়া ফল যদি কখনো পেকে মাটিতে পরে সেই ফল জাপানিরা কখনই সংগ্রহ করেন না।

যাই হোক, আপনি বেড়াতে চাইলে আসতে পারেন সত্যি দেখার মত একটা জেলা- জাপানের ইয়ামানাসি। চারদিকে সাজানো-গোছানো পাহাড় আর পর্বতমালা। সবকিছুই যেন নিজের মতো করে প্রযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে জাপান।

টোকিও থেকে বাসে বা ট্রেনে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পথ। কখনো পাহাড় কখনো পর্বতের নিচ দিয়ে, আবার কখনো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বিশাল রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।

জাপানে গ্রাম আর শহর সব একই রকম। একই সুযোগ সুবিধা। হোটেল-মোটেলের কোনো অভাব নেই। গাড়ির দেশে রাস্তারও কোনো অভাব নেই। এতো সাজানো-গোছানো যে দেখলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

কত শত বছরে এসব তৈরি করেছে এখানকার মানুষ! কে জানে! আসলে জাপানে যা দেখি তাতেই অবাক হই। এর পেছনে অবশ্য রয়েছে তাদের সততা-আন্তরিকতা আর কঠোর পরিশ্রম।

লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!