কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ

আমার মতো হয়তো অনেকেরই স্বপ্ন অক্সফোর্ড কিংবা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখার। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো আমার।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2018, 06:42 AM
Updated : 20 Sept 2018, 11:07 AM

সেদিন খুব উত্তেজনা কাজ করছিল, কখন বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখতে পাব। আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। যেহেতু সবারই জানা লন্ডনের যান্ত্রিক জীবনযাপন সম্পর্কে, কিন্তু তারপরও মানুষ সমস্ত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে নেয় ঐতিহাসিক জায়গাগুলো উপভোগ করার।

গত মাসে অক্সফোর্ড থেকে ঘুরে আসার পর ঠিক তখনই আমরা আবার সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম, পরবর্তীতে সময় ও ছুটি ম্যানেজ করে কেমব্রিজে বেড়াতে যাব। আর কেমব্রিজে যাওয়া মানে প্রথম টার্গেটই হলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখার, যা আমার মতো অনেকেরই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

শহরে ঢোকা মাত্র চোখে পড়লো অনেক কিছু। যেমন- এই শহরে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং সেই সাথে সবচেয়ে যে জিনিসটি বেশি চোখে পড়েছে, তা হলো এই শহরে সাইকেলের প্রচলন বেশি। ছোট-বড় সকলেই সাইকেলে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে। আর তাছাড়া সাইকেলের ব্যবহার ব্যাপক হওয়াতে এই শহরে পরিবেশ দূষণ খুবই কম লন্ডনের তুলনায়।
কেমব্রিজ শহরে ঢোকার সাথে সাথে অক্সফোর্ডের কথা মনে পড়ে গেল। কারণ, অক্সফোর্ডের মতো এই কেমব্রিজ শহরটিও খুবই পরিষ্কার-পরিছন্ন, যা চোখে পড়ার মতো। আর তাছাড়া রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সমস্ত দালানকোঠা পর্যন্ত সব কিছুতে যেন ইতিহাস কথা বলছে।
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। আর এই পুরো শহরটি জুড়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বাড়ি ও ভবন, যা ঐতিহাসিক  গুরুত্ব বহন করছে এবং সেই সাথে পর্যটকদেরও দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। কারুকার্যখচিত এই সমস্ত ক্যাথেড্রাল, কলেজভবন ও মিউজিয়ামগুলো যেন ইতিহাস আর ঐতিহ্য তুলে ধরছে প্রতি মুহূর্তে।  
১২০৯ সালে অক্সফোর্ডের কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি স্থানীয় লোকদের সাথে বিবাদের জের ধরে শহর ছেড়ে চলে যান এবং তখনই তারা সবাই ক্যামব্রিজ শহরে এসে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এটিই পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, এই কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে একত্রে অনেক সময় ‘অক্সব্রিজ’ নামে ডাকা হয় এবং একে অপরের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্ববিদ্যালয় দুইটি বহু শতাব্দী ধরে ইংরেজ সমাজ ও সংস্কৃতির অংশ। এছাড়াও গাইডের মাধ্যমে জানতে পেলাম, এই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিদের একটি বিশেষণে অভিহিত করা হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যান্টাব্রিজিয়ান’।  

বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন থেকে শুরু করে ফ্রান্সিস বেকন, ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন, পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুসহ অনেক জগদ্বিখ্যাত মানুষ এ বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের কোর্স রয়েছে। যেমন- আন্ডারগ্রাজুয়েশন থেকে শুরু করে পোস্টগ্রাজুয়েশন, পার্ট টাইম কোর্স, এক্সিকিউটিভ ট্রেনিং ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ট্রেনিং।

গাইডের মাধ্যমে জানতে পেলাম, আর্টস ফ্যাকাল্টির অধীনে রয়েছে মোট ২০টি বিভাগ আর সায়েন্স ফ্যাকাল্টির অধীনে রয়েছে মোট নয়টি বিভাগ। এছাড়াও কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত লাইব্রেরি এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একশ’টির বেশি গ্রন্থাগার রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেই মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ।

তবে যতক্ষণ পর্যন্ত কেমব্রিজে ছিলাম, পুরো মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য ও তার আশেপাশের পরিবেশ। তাছাড়া আমি অনেকের কাছেই শুনেছি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দেখা মানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দেখা। কারণ, দুটোরই গঠন ও সৌন্দর্য প্রায় একই রকম এবং কথাটি যে আসলেই সত্য, তা জায়গাটিতে গিয়েই প্রমাণ পেলাম। আসলেই অন্যরকম। এক অদ্ভুত পরিবেশ, যা ফিরে নিয়ে যাবে সেই ছাত্রজীবনে।   

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!