রাশিয়ার চিঠি: গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প

স্কুলে যাওয়ার সময় সাদা অ্যাপ্রোন পড়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের দেখেই মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ থেকে বারো হাজার মাইল দূরে লেলিন-পুতিনের দেশ রাশিয়াতে আগমন।

মো. সাইফুল আলাম, রাশিয়ার মস্কো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2018, 09:30 AM
Updated : 12 Sept 2018, 09:30 AM

পরিবার আর বন্ধুদের ছেড়ে আসতে সত্যি একটু বেশি কষ্ট লাগছিল। তখন ভাবিনি বরফ আর শীতের এই দেশের প্রেমে পড়ে যাব। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, আমার স্বপ্ন বোনার প্রথম কারখানা। এর রুশ নাম ‘রুদেন ইউনিভার্সিটি’। বাংলায় বলা হয় ‘গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়’।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে মস্কো নগরে গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে নাম ছিল ‘প্যাট্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়’।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের ১৬৩ দেশের প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আর বাংলাদেশের আছেন ৭৩ শিক্ষার্থী।

মেডিকেল অনুষদ ছাড়াও রয়েছে প্রকৌশল অনুষদ, ইতিহাস ও দর্শনবিজ্ঞান অনুষদ, কৃষি অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, আইন ও অর্থনীতি অনুষদ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১৪টি হোস্টেল আছে।

রুশ নাগরিকরা মিশুক আর আতিথিয়তা জানে, তার প্রমাণ ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ। শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই পড়াশোনায়ও তাদের থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনেক সাহায্য পায়।

ইউনিভার্সিটি হোস্টেলের পাশে ছোট্ট একটা বন আর বনের ভেতর লেক। লেকের অপরূপ সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে। গ্রীষ্মের সময় সেখানে সবুজের সমারোহ আর শীতের সময় বকের পালকের মতো সাদা সবকিছু। এমনকি লেকের পানিও বরফ হয়ে যায়। এই জায়গাটি শিক্ষার্থীদের সব থেকে পছন্দের জায়গা। 

আমরা এশিয়রা যে ক্রিকেটপ্রেমী সেটা রুশ শিক্ষার্থীরা জানে। প্রতি বছর শীতের বিদায় বেলা, গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা শুরু হয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দিয়ে। সেখানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, আফগানিস্তান অংশ নেয়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ঐতিহ্য জানার জন্য এই টুর্নামেন্ট একটা ভীষণ কার্যকরী পন্থা।

এছাড়াও বছরের পুরোটা সময় ধরে নিজ নিজ দেশের শিক্ষার্থীরা নিজেদের উৎসব উদযাপন করে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজন করে ফুড ফেস্টিভ্যাল, বিজয় দিবস এবং সব জাতীয় দিবস। সবচেয়ে বেশি মর্যাদায় পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ এবং বিজয় দিবস। এ বছর বাংলদেশ ছাত্র সংঠনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি আমরা।

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী, রুদেন ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল শেষ বর্ষ, মস্কো, রাশিয়া

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!