বেগুনী ল্যাভেন্ডার বাগানে একদিন

ফেসবুকে এক বান্ধবীর প্রোফাইলে ল্যাভেন্ডার বাগানের ছবি দেখলাম, তাও আবার ইংল্যান্ডে। আর তর সইলো না অপেক্ষা করার।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2018, 06:47 AM
Updated : 12 Sept 2018, 09:30 AM

সমস্ত তথ্য ও খবর নিয়ে পরিকল্পনা করে ফেললাম, সেই বেগুনী ফুলের বাগানে যাওয়ার। মানে ল্যাভেন্ডারের ফুলের রাজ্যে। ল্যাভেন্ডার শব্দটি বা এর গন্ধের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। কারণ ছোটবেলা থেকেই দেখছি বা ব্যবহার করছি ল্যাভেন্ডার পাউডার, ক্রিম, সাবান ও পারফিউম।

আমার কখনোই ধারণা ছিলো না যে এই বেগুনী ফুল থেকে এত কিছু তৈরি করা যায়। আর তাছাড়া আমাদের দেশে ল্যাভেন্ডারের চাষ করা হতো না বলে এই ফুল সম্বন্ধে খুব একটা আমরা পরিচিত নই।   

লন্ডন থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয় এই মেফিল্ড ল্যাভেন্ডার বাগানটি, মাত্র ১৫ মাইল দূরত্ব। গাড়িতে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট কিংবা ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট। শুধু যে প্রাইভেট গাড়িতে যাওয়া যায় তা নয়, আপনি ট্রেনেও যেতে পারবেন।

ইংল্যান্ডে এমন অনেকগুলো ল্যাভেন্ডার বাগান বা খামার রয়েছে, যেমন- মেফিল্ড ল্যাভেন্ডার, ভক্সহল পার্ক, হিচিন ল্যাভেন্ডার, কিউ গার্ডেন, কেনিংটন পার্ক ও কেনটিশ ল্যাভেন্ডার। যেহেতু মেফিল্ড ল্যাভেন্ডার খামারটি লন্ডন থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়, সেজন্য সবাই প্রথমেই মেফিল্ডেই যায় ল্যাভেন্ডারের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।     

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, খুব কাছাকাছি আসার পর আমরা ঠিকমতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারছিলাম না ওই দিন। কিন্তু ওই মুহূর্তে আমাদেরকে সাহায্য করলো ল্যাভেন্ডারের গন্ধটি। মাত্র দুই মিনিট দুরত্ব থাকার পরও আমরা বাগানটি বের করতে পারছিলাম না, কিন্তু একমাত্র সেই ল্যাভেন্ডারের গন্ধের মাধ্যমে পৌঁছে গেলাম মেফিল্ডের বেগুনী ফুলের বাগান বা খামারে।

টিকেটের দাম খুব একটা বেশি নয়, জন প্রতি মাত্র দুই পাউন্ড করে। তবে ১৬ বছরের নিচে যারা, তাদের জন্য ফ্রি। যেই খামারের ভেতরে ঢুকলাম, অমনি দেখতে পেলাম এক বিশাল জায়গা জুড়ে বেগুনী ফুলের সমারোহ। সেখানে চারদিকে বেগুনী রঙ খেলা করছে। ওই মুহূর্তে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিলো, উপরে নীল আসমান আর জমিনে বেগুনী রঙের মিশ্রণ দেখে।

ল্যাভেন্ডারের গন্ধ ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মন ভরে উপভোগ করলাম পুরো বাগানটির অপরূপ সৌন্দর্য। বাগান বা খামারটিতে আসার আগে ছবিতে যেই রকম দেখেছি, ঠিক সেই রকমই দেখতেই। মনে হচ্ছে, কেউ যেন রঙ-তুলি দিয়ে এঁকে রেখেছে এই পুরো ল্যাভেন্ডার বাগানটি।

মূলত গ্রীষ্মকালেই ল্যাভেন্ডারের চাষ করা হয় এবং প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এই খামারটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। এই খামারটি ২৫ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত এবং পর্যটকদের জন্য খোলা হয় প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩০ সেটেম্বর পর্যন্ত, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত।  

এই খামারটির ভেতরে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যেমন- ক্যাফে  থেকে শুরু করে গিফট্ শপ, কার পার্কিং ও টয়লেট। এমনকি পুরো বাগানটি ঘুরে দেখার জন্য ট্র্যাক্টর ভাড়া নেওয়া যায়। এই ক্যাফেতে কফির পাশাপাশি আপনি ল্যাভেন্ডের চা খেতে পারবেন।

আর তার সাথে যে শপটি রয়েছে, সেখানে বিক্রি করা হয় ল্যাভেন্ডার দিয়ে তৈরি দ্রব্যসামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী, যা দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। এমনকি এই খামারে ল্যাভেন্ডারের গাছ ও চারা বিক্রি করা হয়, তবে খুব একটা বেশি দাম নয় চারা ও গাছগুলোর। গাছগুলোর মূল্য তিন পাউন্ড থেকে শুরু করে দশ পাউন্ডের মধ্যে।

এমনকি গাইডের মাধ্যমে জানতে পেলাম, এই বাগানটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন মাস। কারণ তখনই ল্যাভেন্ডার ফুলগুলো পরিপূর্ণভাবে ফোটে। যার কারণে পুরো বাগানটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে।

ইংল্যান্ডে শুধু একটি নয়, আরও অনেকগুলো ল্যাভেন্ডার বাগান রয়েছে। কিন্তু এটা লন্ডনের খুব কাছাকাছি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এই বাগানটিতে বেড়াতে যায়। এজন্য আবার সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম, আগামী বছর ঠিক এই সময়ে অন্য আরেকটি ল্যাভেন্ডার বাগান উপভোগ করব।

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!