অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা

অবশেষে অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে নিলাম এই স্বপ্নটি পূরণ করার জন্য। আমার মতো অনেকেরই যুক্তরাজ্যে আসার পর লক্ষ্য থাকে হয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখার।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2018, 12:50 PM
Updated : 14 August 2018, 01:43 PM

কিন্তু এক দিনের ট্যুর ছিলো বলে খুব একটা ভালো করে অক্সফোর্ড শহরটা ঘুরে দেখা হয়নি, তবে মিস করিনি এই পুরাতন ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখার, যা কিনা অনেকদিনের স্বপ্ন ছিলো। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষ এক নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চেনে তা হলো এই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যা কিনা উচ্চশিক্ষার স্থান ও জ্ঞানচর্চার শেকড় বলে বিখ্যাত।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকেই দেখতে পেলাম প্রাচীন নকশা ও কারুকার্য খচিত প্রতিটি ভবন, যা কিনা প্রকাশ করে শিক্ষা ও জ্ঞানের বিশালতা। এমনকি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নকশাকরা ভবন বা দেয়াল পুরাতন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বহন করছে। যেটি প্রথমেই চোখে পরবে সেটি হলো গোটা ক্যাম্পাস বা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে রয়েছে ফুলের বাগান।

এছাড়াও রয়েছে বোটানিক্যাল পার্ক ও জেনেটিক পার্ক। এই অপরূপ সৌন্দর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই পর্যটকদের মন কেড়ে নিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। এমনকি এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিছন্নতাও কিন্তু এই অপরূপ সৌন্দর্যের অর্ন্তভুক্ত।   

পুরো অক্সফোর্ড শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক ভবন যে ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবন। আর সবচেয়ে আর্কষণীয় ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে শেলডোনিয়ান স্কুল, ক্রাইস্ট চার্চ ক্যাথেড্রাল, রেডক্লিফ ক্যামেরা ও বিভিন্ন এক্সামিনেশন স্কুলগুলো। এছাড়াও রয়েছে অনেকগুলো জাদুঘর যার মধ্যে ‘অ্যাশমোলিয়ান জাদুঘর’ হচ্ছে সবচেয়ে পুরাতন। তবে সময় স্বল্পতার কারনে সবগুলো জাদুঘর একসঙ্গে আমরা দেখতে পারিনি।  

খ্যাতির চূড়ায় যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান তার শুরুর ইতিহাসটি এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কোথাও লেখা নেই। তবে এই ট্যুরের মাধ্যমে যতটুকু আমি জানতে পেরেছি তাই আমি এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছি। অক্সফোর্ড শহরে অবস্থিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষাভাষী জগতের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়।

অনেকের ধারণা, এগরোশ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা বারোশ শতাব্দীর প্রথমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা হয় এবং সবারই জানা এই বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১১৬৭ সালে যখন রাজা দ্বিতীয় হেনরি ইংরেজ ছাত্রদের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন ঠিক তখনই এই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিৎসা বিষয় ও দর্শন বিভাগ ছিল। এমনকি প্রথমদিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের কোনো ভবন ছিল না, ভাড়া করা হল অথবা চার্চে ক্লাস নেওয়া হতো। ১৩৫৫ সালে রাজার এক আদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্সফোর্ড শহরে স্থান দেওয়া হয়। ১৮৮৭ সালে প্রথম মহিলা কলেজ ‘লেডি মার্গারেট হল’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ শতকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির আরো সংস্কার করা হয়।

সঙ্গে বিজ্ঞানের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি করা হয় ও অনেকগুলো নতুন বিভাগ খোলা হয়। এই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঊনচল্লিশটি কলেজ এবং সাতটি ‘পার্মানেট প্রাইভেট হল’ (পিপিএল) এর সমন্বয়ে গঠিত এবং এদের প্রতিটি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। আবাসিক সুবিধা ছাড়াও এই কলেজগুলোতে ছাত্রদের ক্লাস নেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা, গবেষণাগার এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পরিচালনা করে।

এছাড়া প্রতিটি কলেজে একটি ডাইনিং হল, প্রার্থনা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, তিনটি কমনরুম এবং ২০০ থেকে ৪০০ ছাত্রের থাকার স্থানও রয়েছে। আরো জানতে পেলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনিটিই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকাশনি। 

তবে এক কথায় বলতে পারি ঐতিহ্য ও শিক্ষা বিস্তারের ভূমিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়। সময় স্বল্পতার কারনে পুরো অক্সফোর্ড শহরকে দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অপরূপ সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছিলো প্রতিটি মুহূর্তে।        

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন