জাপানি স্কুল শিশুদের সঙ্গে সারা দিন

জাপানের ইয়ামাগুচি মিনে সিটির ‘মিনে ইংলিশ ভিলেজের’ আমন্ত্রণে ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা ১১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা করা শিশুদের সঙ্গে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম।

সারোয়ার আহমেদ সালেহীন, জাপানের ইয়ামাগুচি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2018, 09:05 AM
Updated : 13 August 2018, 11:43 AM

সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম নিয়ে স্কুল শিশুদের সঙ্গে বেশ কিছু আনন্দঘন সময় কাটাই যা আমাদের জন্য সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। শুধু আমারই নয়, জাপানি শিশুরাও আমাদের সঙ্গ বেশ উপভোগ করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বেশ কিছু সময় নিয়ে পরিচয় পর্ব চলে। কার কী নাম, কে কোন দেশ থেকে এসেছে, মা-বাবার পেশা কী , জাপানি ভাষা ও নিজ দেশিয় ভাষায় অভিবাদন এবং জাপানে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় পর্বে শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষণীয় খেলাধুলা হয়। শিশুদের ও অংশগ্রহণকারী বিদেশি ছাত্রদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে বুদ্ধিবৃত্তিক এসব খেলা বা ইংরেজিতে শব্দ তৈরি বা ওয়ার্ড মেকিং খেলা হয়। এ পর্বে আমার দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

তৃতীয় পর্বে শিশুদের নিয়ে আরেকটি মজার খেলা রেলগাড়ি বানানো এবং বুদ্ধির প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় যা দিয়ে ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা যাচাই করা হয়। প্রতিটি শিশুকে এসব প্রতিযোগিতায় অত্যন্ত ধৈর্য ও সুশৃঙ্খলভাবে অংশ নিতে দেখা যায়। কোনো ধরনের বাজে প্রতিযোগিতা বা ঝগড়া করতে দেখা যায়নি। ছোট ছোট শিশুদের এমন সুশৃঙ্খল আচরণ আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বটে।

চতুর্থ পর্বে শিশুদের বিশাল মিলনায়তনে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে মাছ ধরা বা ফিশিং গেমের আয়োজন করা হয়। বরশি দিয়ে বিভিন্ন শব্দ তুলে তা দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করা হয়। এসব খেলা শিশুদের মাধ্যমেই করা হয়। আমরা শুধু সঞ্চালক হিসেবে থাকি। চমৎকার এসব শিক্ষণীয় খেলা আয়োজনের মাধ্যমে একদিকে যেমন মেধার বিকাশ ঘটে অন্যদিকে ইংরেজি শেখা ও নিজেদের মধ্যে চমৎকার যোগাযোগ হয়।

পঞ্চম পর্বে শিশুদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাই আমরা। এ পর্বে শিশুরা যার যার বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার আমাদের সঙ্গে খেয়ে থাকে এবং আমাদের দেশিয় খাবার সম্পর্কে ধারণা নেয়, অন্যান্য বিষয় যেমন- আমার কী পছন্দ, কোন খেলা ভালো লাগে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

ষষ্ঠ পর্বটা বেশ চমৎকার ছিল। এ পর্বে প্রত্যেক দলে কাপড়ের ব্যাগ দেওয়া হয় এবং শিশুদের বলা হয় এতে নিজেদের মতো করে ছবি আঁকতে যা পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারী বিদেশিদের অর্থ্যাৎ আমাদের উপহার দেওয়া হবে। আমাদের আশ্চর্য করে দিয়ে শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে আমাদের প্রত্যেকের নিজ দেশের জাতীয় পতাকা, প্রিয় খেলা, প্রিয় ফল, প্রিয় পশু, প্রকৃতি ও নামসহ বিভিন্ন কিছু ব্যাগে অঙ্কন করে আমাদের উপহার দেয়। এসব তথ্য অনুষ্ঠানের শুরুতে কাগজে লিখে আমরা জানিয়েছিলাম। শিশুরা সেসব মনে রেখে অনুষ্ঠানের শেষের এ পর্বে তার প্রতিফলন ঘটায় যা সত্যিই অসাধারণ।

সপ্তম তথা শেষ পর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার দেওয়া, ছবি তোলা ও ‘মোস্ট গর্জিয়াস গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয় যা সত্যিই অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা। এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রতি বছরই আয়োজন করে থাকে ‘মিনে ইংলিশ ভিলেজ’ কর্তৃপক্ষ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- ইংরেজিতে কথা বলতে শিশুরা যে জড়তা অনুভব করে তা দূর করা, যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানো ও বিদেশিদের সঙ্গে মেশার সক্ষমতা অর্জন করা।

জাপানি শিশুরা ভদ্র, বিনয়ী ও মার্জিত। সারাদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সি প্রায় ৫০ জন শিশু অংশ নেয়। কোনো শিশুকেই কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলতা করতে আমরা দেখিনি। জাপানি শিশুদের সঙ্গে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা এবং এ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা বটে।

লেখক: জেডিএস ফেলো, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!