এর মাধ্যমে কাজপাগল জাপানিদের কর্মব্যস্ততারই প্রমাণ মেলে। আর এ ব্যস্ততাই তাদের সব উন্নতির চাবিকাঠি। জাপানিদের নির্লিপ্ততার বিষয়টি আশ্চর্যই বটে, যেখানে নিজেদের দেশ বাছাই পর্বের কঠিন প্রতিযোগিতা পেরিয়ে বিশ্বের সেরা ৩২টি দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই বহু প্রত্যাশিত মঞ্চে পা রেখেছে।
আগামীকাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের নকআউট পর্ব শুরু। এ পর্বে জাপান এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে একমাত্র দেশ হিসেবে খেলছে। অথচ জাপানের কোথাও বিশ্বকাপের চিহ্নমাত্র চোখে পড়লো না। পতাকা নেই, বিলবোর্ডে দলের শুভকামনা নেই, ছেলে-মেয়েদের মিছিল নেই, টিভিতে বলার মতো আলোচনা নেই, জার্সি পরিহিত লোকজন নেই, বড় স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থাও নেই।
এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে জাপানের পদার্পন। যে কেউ জাপানিদের এ বিষয় দেখলে মনে করবেন জাপানে ফুটবল বুঝি তেমন জনপ্রিয় খেলা নয়। বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। যদিও জাপানিদের ফুটবল ঐতিহ্য খুব একটা পুরনো নয়। জাপানে ফুটবলের প্রসার মূলত নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে।
এখানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত ফুটবল খেলা, ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। আর জাপানিদের এ খেলার প্রতি আরও বেশি উৎসাহ দেখা যায় এখানকার স্টেডিয়ামে জাপান লিগের কোনো খেলা দেখলে। লোকজন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে নিয়মিত স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা উপভোগ করে যা আমাদের দেশে এখন বিরল।
১৯৯৩ সালে জাপানে সর্বপ্রথম পেশাদার লিগ বা ‘জে লিগ’ চালু হয়। সে সময় ‘জে লিগ’ বেশ জাকজমকপূর্ণ ছিল। সারা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে ‘জে লিগ’ নিয়ে বিশাল হৈ চৈ পড়েছিল। যদিও জে লিগের আগের সেই জৈলুস এখন নেই, তবুও এশিয় ফুটবলে এর গুরুত্ব অনেক।
জাপান লিগের ছোঁয়ায় জাপান এখন এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ফুটবল শক্তি। ১৯৯৮ সাল থেকে জাপান নিয়মিত বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে খেলছে। তবুও জাপানিদের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে অতিরঞ্জিত করা বা বাড়াবাড়ি করার প্রবণতা একেবারেই নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে যে বাড়াবাড়ি রকমের উৎসাহ, উদ্দীপনা বা পাগলামি দেখা যায় তার ছিটেফোঁটাও জাপানিদের মধ্যে দেখা যায় না। অথচ তাদের দেশ বিশ্বকাপ খেলছে। কোথাও কোনো পতাকা টানানো, রঙ করা বা মিছিল করা বা হৈচৈ করা দেখা যায় না। আর আমাদের মতো ক্রেজি সাপোর্টারের কাছে এসব সত্যিই বড় অদ্ভুত!
বিশ্বকাপে একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারি ম্যাচ জয়ের পর আনন্দ-উত্তেজনায় উন্মাদ হওয়ার পরিবর্তে জাপানি দর্শকরা সেদিন স্টেডিয়াম পরিষ্কার করে দিয়েছিল যা সত্যিই বিরলদৃষ্টান্ত। আর এটাই জাপানিজ ভদ্রতা, এটাই অন্যদের সঙ্গে তাদের ভিন্নতা। কোনোকিছু নিয়েই যারা কোনো বাড়াবাড়ি করে না, বরং নীরবে উপভোগ করে।
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো- অনেক পরিচিত জাপানিকে জিজ্ঞেস করলাম বিশ্বকাপের কথা। এদের অনেকে জানেই না জাপান বিশ্বকাপ খেলছে!
জাপানিদের বিশ্বকাপ নিয়ে এ ধরনের নির্লিপ্ততার বিষয়টি আমাদের মতো ফুটবল পাগল ফ্যানদের জন্য সত্যিই বড় আশ্চর্যজনক।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, জেডিএস ফেলো, ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |