কৃত্রিম প্লাস্টিকের যাত্রা শুরু হয়েছিলো বিংশ শতাব্দীতে। আজ অবধি মানুষের জীবনযাত্রা নমনীয় করার অন্যতম পথিকৃৎ এই ধরনের কৃত্রিম প্লাস্টিক।
যদিও প্লাস্টিক জিনিসটির মূল উপাদান বিভিন্ন পলিমার যৌগ, কিন্তু এটি টেকনোলজিক্যাল শব্দ হওয়ায় এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় অনেক কম। যার জন্য শুরুতেই পলিমারকে ‘প্লাস্টিক’ বলা হয়েছে।
পুরো বিংশ শতাব্দী ধরে নিরলস গবেষণা করে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের পলিমার জাতীয় প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছেন। বলতে গেলে, এইসব কৃত্রিম পলিমার মানুষের জীবনযাত্রা এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে পলিমার যৌগ উদ্ভাবন বিজ্ঞানের জন্য আশীর্বাদ বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে, কৃত্রিমভাবে তৈরি প্রায় সকল উপকারি জিনিসেরই নানাবিধ অপকারী দিকও থাকে। দিন যত যাচ্ছে, আশীর্বাদের পাশাপাশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে পলিমার সামগ্রী।
আমাদের দৈনন্দিন কাজে তিন ধরনের পলিমারের ব্যবহার দেখা যায়। থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার, যাকে আমার সাধারণ প্লাস্টিক বা পলিব্যাগ জাতীয় জিনিসপত্র বলে থাকি। ইলাস্টোমারিক পলিমার, যাকে আমরা রাবার বলে থাকি।
এছাড়া রয়েছে থার্মোসেটিং পলিমার। এর উদাহরণ হিসাবে মেলামাইনের থালাবাসন, আসবাবপত্র, দরজা, জানালা, আঠা বা অ্যাডহেসিভ জাতীয় পলিমারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
যে পলিমার মানুষের আশীর্বাদ ছিল, সেই পলিমারই মানুষের সুস্থ্য ও নিরাপদে বসবাসের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলিমারের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, এটি প্রায় অপচনশীল।
এই অপচশীলতার জন্য প্রকৃতি, নদী-নালা, খালবিল এমনকি মহাসমুদ্রও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পলিমারের যত্রতত্র ব্যবহার মানুষ, প্রকৃতি ও পশুপাখির অন্যতম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে-বিদেশে কিছু বহুল ব্যবহৃত পলিমার, যেগুলো খুব যত্রতত্র ফেলা হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, বাংলাদেশেও ২০০২ সাল থেকে সব ধরনের পলিমার ব্যাগ (পলিইথিলিন) নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। যদিও কাজের কাজে কিছুই হয়নি।
এই রকমই পরিবেশবান্ধব বায়োপলিমার নিয়েই গত সপ্তাহে জার্মানির হালে শহরে হয়ে গেল বেশ বড়সড় একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন। সেখানে বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানি তাদের বায়োপলিমার নিয়ে হাজির হয় জনগণের সামনে।
কলম থেকে শুরু করে রাবারের গ্রিপার, গাড়ির টায়ার, কফি মগ, থালা-বাসন, চামচ, খেলনা ইত্যাদি সবকিছুই প্রাকৃতিক পলিমার বা দ্রুত পচনযোগ্য পলিমার দিয়ে তৈরির চেষ্টা করছে।
কিছু উৎপাদন হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে, আবার কিছু এখনও গবেষণাধীন। আখের ছোবড়া, গাছের বাকল, চিংড়ির খোলস বা ফলের খোসাকে নানা উপায়ে রাসায়নিকভাবে ভেঙ্গে এই বায়োপলিমার তৈরি করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে সকল অতিথির হাতে একটি করে বায়োপলিমারের তৈরি আকর্ষণীয় মোকা কাপ ও পিরিচ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
লেখক: মাহবুব মানিক, বৈজ্ঞানিক গবেষক, মার্সেবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স, জার্মানি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |