স্পেনে বৈধতার আশায় ‘১০ হাজার’ অবৈধ বাংলাদেশি

স্পেনে ‘অভিবাসন-বান্ধব সরকার’ হিসেবে পরিচিত সোশ্যালিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসায় আশার আলো দেখছেন দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিরা।

সাহাদুল সুহেদ, স্পেনের মাদ্রিদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2018, 10:55 AM
Updated : 22 June 2018, 11:45 AM

গত ১ জুন স্পেনের সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবে ক্ষমতাচ্যুত পপুলার পার্টি প্রধান মারিয়ানো রাখোইর জায়গায় পরদিন ২ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন দেশটির সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রধান পেদ্রো সানচেজ।

দেশটিতে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা নিবন্ধনকৃত মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলার’ সভাপতি ফজলে এলাহি বলেন, “সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে পুরো স্পেনে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি আছেন, তারা স্পেনে বসবাস করার অনুমোদন পাবার অপেক্ষায় আছেন। স্পেনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে এ সরকারের কাছে আমরাও দাবি জানিয়েছি, যাতে অভিবাসীদের সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।”

নতুন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করলে স্পেনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানান ফজলে এলাহি।

স্পেন থেকে প্রকাশিত ‘একুশে পত্রিকার’ সম্পাদক শাহ জামাল আহমেদ বলেন, “গত দেড় যুগ স্পেনের সোশ্যালিস্ট পার্টিকে কাছ থেকে দেখেছি। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় মুনাফাকেন্দ্রিক  পুঁজিবাদী উন্নয়নের চেয়ে শ্রমজীবি মানুষের বেতন-ভাতা এবং নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বেশি বেড়েছে। চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে কর্মহীন মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হয়েছে।”

২০১৬ সালের ২৪ জুন স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ইউরোপা প্রেস’ এ দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ। অবৈধদের বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছিলেন তিনি।

স্পেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ

দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানায়, স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বিগত সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।

দেশ পরিচালনায় সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারও অভিবাসন নীতি নমনীয় করবে- এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা।

ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র স্পেন বরাবরই অভিবাসীদের কাছে পছন্দের একটি দেশ। বিশেষ করে সহজ শর্তে বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকায় এদেশে অভিবাসীরা ভিড় জমান। কারণ এদেশে একটানা তিন বছর বসবাস করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৈধ হওয়া যায়। 

অতীতে দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে স্পেনে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার  অভিবাসী।

প্রধানমন্ত্রী হবার পর সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রধান সানচেজ যে অভিবাসীবান্ধব তার প্রমাণ ইতোমধ্যে রাখতে শুরু করেছেন বলে জানান প্রবাসীরা।

গত ১৭ জুন ভূমধ্যসাগরে ভাসমান তিনটি জাহাজের ৬২৯ জন অভিবাসী স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় ঢুকেছে, যাদেরকে ইতালির সমুদ্র উপকূল রক্ষাবাহিনী ইতালিতে ঢুকতে দেয়নি। এদেরকে প্রাথমিকভাবে এক মাসের ‘রেসিডেন্স পারমিট’ দেওয়া হয়েছে, যা আরো ৪৫ দিন বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে স্পেনের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্পেনের শ্রম, অভিবাসী ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী মাগদালেনা ভালেরিও।

এদিকে সোশ্যালিষ্ট পার্টি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবার পর থেকেই স্পেনে অভিবাসীদের প্রবেশের হার বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী- গত ১২ জুন থেকে ১৮ জুন ২ হাজার ৬২৭ জন অভিবাসী স্পেনে প্রবেশ করেছেন, যা এর আগের সপ্তাহ থেকে ২৫৯ শতাংশ বেশি।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!