লেবাননে গৃহকর্তার নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন মমতাজ

জীবিকার প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে এসে গৃহকর্তার নির্যাতনে শেষ পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এক বাংলাদেশি নারী।

জহির রায়হান, লেবানন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2018, 10:22 AM
Updated : 21 June 2018, 10:22 AM

তার নাম মমতাজ খাতুন (৩৬)। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানিয়াকান্দি গ্রামে, স্বামীর নাম মো. ডাবলু মিয়া।

চলতি মাসের ১৩ তারিখ তাকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের রফিক হারিরি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ২৫০৯ নাম্বার কক্ষে চিকিৎসাধীন আছেন।

এর আগে গত ৭ জুন রিনা আক্তার নামে আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি নারী মমতাজের অসুস্থতার কথা এ প্রতিবেদককে জানান। প্রতিবেদক বিষয়টি দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারকে জানালে তিনি মমতাজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “আসলে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা বাংলাদেশে যেমন ব্যয়বহুল তেমনি লেবাননে আরও ব্যয়বহুল। আমরা আশা করছি, পূর্ণ চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং সুস্থ হওয়ার পর আমরা তাকে বাংলাদেশে তার পরিবার পরিজনের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।”

চিকিৎসা বাবদ এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ বলে জানা গেছে। আর এ সম্পূর্ণ টাকার দায়িত্ব নিয়েছেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মমতাজ খাতুন জীবিকার তাগিদে ২০১৪ সালে গৃহপরিচারিকার কাজে লেবাননে আসেন।

প্রবাসী নারী রিনা আক্তার জানান, গৃহকর্তার শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে মমতাজ পালিয়ে অবৈধ হয়ে যান। অবৈধ হয়ে ঠিকঠাকভাবে কাজ করলেও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার স্বামী হৃদরোগে মারা যান, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বছর বয়সী একটি ছেলে মারা যায় এবং ঠিক ২০ দিনের মাথায় একটি বোনও মারা যায়।

গৃহকর্তার নির্যাতন, তারপরে আর্থিক টানাপোড়ন ও একসঙ্গে এতগুলো আঘাত সহ্য করতে না পেরে মমতাজ মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলে ধারণা আরেক প্রবাসী নারী সামিয়ার।

মমতাজ খাতুনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি নারী রিনা আক্তার, সামিরা ও এ প্রতিবেদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

লেবাননে বাংলাদেশি নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মোতালেব বলেন, “মমতাজ ছাড়াও গত দুই বছরে আমরা আরও ৫/৭ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এ ধরনের সমস্যায় যদি কেউ পড়েন তখন যেন দ্রুত দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। আমরা সবসময়ই অসহায় প্রবাসী রোগীদের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!