যে মসজিদের গায়ে খোদিত আছে পুরো কোরআন

ঘর থেকে শুধু দুই পা ফেলে প্রতিবেশি দেশ সালতানাত অব ওমান, যখনই সুযোগ মেলে সেখান থেকে ঘুরে আসি। এবার নিয়ে ছয়বার যাওয়া হয়েছে পর্বত-সাগর আর সমতল ভূমির ত্রিবেণী সঙ্গমের দেশ ওমানে।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2018, 01:44 PM
Updated : 20 June 2018, 01:44 PM

আমার বর্তমান বসবাসস্থল সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী শহর আবুধাবি থেকে দেশটির রাজধানী মাস্কাটের দূরত্ব আনুমানিক পাঁচশ কিমি। দুবাই থেকে মাস্কাটের সরাসরি বাস সার্ভিস আছে, আমিরতের রেসিডেন্স ভিসাধারীদের ওমানি বর্ডার চেক পয়েন্টে অন-এরাইভাল ভিসা সুবিধা আছে। সে আনুষ্ঠানিকতা সারার সময়সহ ৬/৭ ঘণ্টায় পৌঁছোনো যাবে ওমান। তবে ব্যক্তিগত যানে সময় আরো কম লাগে।

সাঈদ ডাইন্যাস্টির ১৪তম উত্তরাধিকার সুলতান কাবুসের দেশ সালতানাত অব ওমান। আরব নৃপতিদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম কাল ধরে, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সালতানাত অব ওমানের শাসক। সাহারার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মরু ‘রাব আল খালি’ বা ‘এম্পটি কোয়ার্টার’, ওমান উপসাগর আর আরব সাগর এ আরব দেশটিকে অন্য আরব দেশগুলো থেকে পৃথক করে রেখেছে।

মসজিদের ভেতর লেখক

সৌদি আরব আর আমিরাতের পর বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারী দেশ ওমান। এখানে আনুমানিক ৭ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। গেলবার ওমান সফরের সময় বন্ধু দিদারের অনুজ মাস্কাটে থাকা তরুণ ব্যবসায়ী সেলিম আমার গাইড ছিল। সেলিম বলল, এবার আপনাকে একটা আকর্ষণীয় মসজিদে নিয়ে যাবো যার চার দেয়ালে খোদিত আছে পুরো ত্রিশ পারা কোরআন।

বললাম, এমন কিছু একটা দেখার আগ্রহ আমার সবসময়েই আছে, চলো। 

ওমানের রাজধানী শহরের মাতরাহ ও মাস্কাটের মাঝামাঝি আল খুয়েইর মিনিস্ট্রিজ ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত এ মসজিদটি হচ্ছে ‘আল জাওয়াবি মসজিদ’। অদূরেই ওমানের বৃহত্তম মসজিদ ‘সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মস্ক’। ইসলামি স্থাপত্যকলার অপরূপ নিদর্শন সুলতান কাবুস মসজিদে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝাড়বাতি আর হাতে বোনা কার্পেট। দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে ও আভিজাত্যে সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মস্ক অতুলনীয় হলেও তার পাশাপাশি জাওয়াবি মসজিদ এরই মধ্যে ইসলামি উম্মাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ মসজিদের ভেতরের দেয়ালে তাম্রপাত্রে খোদিত থাকা পুরো ত্রিশ পারা কোরআনের জন্য।

মসজিদটির আশপাশে জর্ডান, ইয়েমেন, সৌদি আরব, বাহরাইনের নাম্বার প্লেটের গাড়ি দেখে তার গুরুত্ব বুঝতে আর বাকি রইলো না। এ পুণ্যতীর্থ দর্শনে দেশ-বিদেশ থেকে আসা মুসলমানরা বিমুগ্ধ নয়নে দেখেন নিদর্শনটি। এটি অমুসলিমদের জন্য উম্মুক্ত নয়। ওমানের রাজধানী শহর মাস্কাটের সেরা দশটি আকর্ষণীয় মসজিদের মধ্যে জাওয়াবি মসজিদ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।

১৯৮৫ সালে আল খুয়েইর এর জাওয়াবি পরিবার এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। জাওয়াবি পরিবারের আবদুল মুনেইম আল জাওয়াবি এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। মসজিদের প্রবেশমুখে মর্মর প্রস্তরে সুলতান কাবুসের মহিমা কীর্তন করা হয়েছে এবং এতে আরও বলা হয়েছে যে ওমানের মুসলমানদের জন্য এ মসজিদটি জাওয়াবি পরিবারের একটি উপহার। ভূমি থেকে ২৫-৩০ ধাপ সিঁড়ি  বেয়ে মসজিদটিতে উঠতে হয়। মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে তিনটি সুউচ্চ প্রবেশদ্বার রয়েছে।

এর ভেতরের গম্বুজটি দেখতে একটি উল্টানো পদ্ম যেন। গম্বুজের ভেতরের অংশ প্রাচ্যের নকশাদার পাথরের কাজ আর ২২ ক্যারেট সোনাখচিত আরবি ক্যালিগ্রাফির আকর্ষণীয় নকশার  কাজ আছে।  গোলাপি রঙের মার্বেল পাথরে মসজিদের বাইরের দিক তৈরি। এর প্রবেশ তোরণগুলোতেও দেওয়া হয়েছে কোরানিক নকশা। মসজিদের দেয়ালের এক এক অংশে দাঁড়িয়ে পুণ্যার্থীরা দেয়ালের গায়ে চোখ রেখে কোরআন তেলওয়াত করছেন, আমরাও করলাম, সেরে নিলাম আছরের নামাজও।

মসজিদের মিনারটি অনেক উঁচু এবং বহু দূর থেকে তা দেখা যায়। আল জাওয়াবি মসজিদের  লাগোয়া স্থাপনাটি হলো লঙ্গরখানা। এখানে প্রায়ই সন্ধ্যার পরে দর্শনার্থী ও মুসাফিরদের জন্য তাবারুকের ব্যবস্থা করা হয়, যদিও এতে ধনী-গরীব সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। বড় বড় থাল বা ‘সাহান কাবির’ এর চারপাশে গোলাকারে চার/পাঁচ জনের এক একটি গ্রুপ আরব‍-রীতিতে এখানে একসঙ্গে খেতে বসেন। কথিত আছে যে এখানকার তাবারুক বহু অসুখ-বিসুখ হতে শাফাহ দেয়। অনেকেই সপরিবারে এসে সুশৃঙ্খল পরিবেশে সে তাবারুক নেন।

ফেরার তাড়া ছিল, তাই অন্য কোনদিন এখানে বসে ‘সাহান কাবির’ এ তাবারুক নেওয়ার ইচ্ছে রেখে ফিরলাম ‘রুই’, যেখানে আমার একটা অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করার কথা।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!