বিশ্বায়নের যুগে প্রবাসীদের ঈদ

সেই কত বছর বাড়িতে ঈদ করা হয় না। বাস্তবতার কাছে হার মেনে দেশের বাইরে ঈদ এখন নিত্যসঙ্গী।

মো.ফজলুল করিম, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2018, 06:16 AM
Updated : 17 June 2018, 06:16 AM

বন্ধু ও স্বজনদের দেশে রেখে অন্য দেশে ঈদ করার মধ্যে একটা শুষ্ক আনন্দ পাওয়া যায়, তবে উষ্ণ আমাজের ঈদ বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। সকাল বেলা মায়ের ডাকাডাকিতে পরিচ্ছন্ন হয়ে ঈদের নামাজে পড়তে যাওয়ার আনন্দ যে কেমন, তা বাইরে এসে কি পাওয়া যায়?

বাইরের দেশে প্রথম বাধা হলো ভিন্ন সংস্কৃতি। যদি তাদের সংস্কৃতিতে ‘ঈদ’ শব্দটিই না থাকে, তাহলে ঈদের উৎসব তৈরি হবে কি করে? তবুও কি ঘটা করে আমরা সবাই ঈদ করি মুখে একটা নকল হাসি নিয়ে। মজা করার শত চেষ্টা করেও আসল মজা বোধহয় খুঁজে পাই না।

এবার জাপানে ঈদের পরদিনই অফিসের দুয়ারে আসতে হলো। অনেকে তো ঈদের ছুটি পায়নি। তারা কোন মতে ঈদের নামাজ পড়তে পেরেছে বা অনেকের ভাগ্যে তাও জোটেনি।

বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে কেম্পানির কাছ থেকে ছুটি নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তারা বিরস বদনে দেশে পরিবারের সাথে ফোন করেই হয়তো ঈদ উদযাপন করেছে। বিদেশে শ্রমিকদের ঈদ উদযাপনের চিত্র আসলে এরকমই।

দেশের মানুষ ভাবে, বাইরে যারা থাকেন তারা বোধহয় বিরাট সুখে থাকেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, তাদের চিন্তাধারা পুরো এই প্রবাসী মানুষগুলোর জীবন যাপনের বিপরীত। শুধুমাত্র জীবনযাপনের ভালো সুযোগ-সুবিধা, আয়-উপার্জন ছাড়া, বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির মানুষের আর কিছুই নাই। প্রবাসী মানুষগুলোর মানসিক দুঃখ-বেদনা আসলে দূরে থেকে বোঝা অসম্ভব।

তবুও বিশ্বায়নের এ যুগে মানুষের অভিবাসী হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলছে। এর একটা বড় কারণ বোধ হয় দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ, বেকার সমস্যা, আরও ভালো কিছু করবার ইচ্ছা- যা দেশে বসে সম্ভব নয়।

তাছাড়া প্রযুক্তি আবেগকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মানুষের দেশের প্রতি ভলোবাসাও হয়তো আগের চেয়ে কমে গেছে। পুরো বিশ্বকেই অনেকে নিজের দেশ মনে করে।

তবে যেমনই হোক, দেশের বাইরে ঈদ কখনই আরামপ্রদ নয়। একটা হাহাকারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঈদের বিশেষ দিন। পেছনে ডাকে কতো অতীত স্মৃতি। দেখেও না দেখার ভান করে জীবনের আহ্বানে এগিয়ে চলে জীবন। এটাই জীবন!

লেখক: মো.ফজলুল করিম, পিএইচ.ডি., শিক্ষক ও গবেষক, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!