ইয়ামাগুচির ডায়েরি: জাপানের চা বাগানে

আজ হঠাৎ করেই ইয়ামাগুচির চা বাগানে পরিবারসহ যাওয়ার সুযোগ হয়। বাংলাদেশের চা বাগান আগেই দেখেছি, এবার জাপানের চা বাগান দেখার পালা।

সারোয়ার আহমেদ সালেহীন, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2018, 05:56 AM
Updated : 15 June 2018, 05:56 AM

গত দেড় বছর জাপানে থেকে জাপানিদের স্লিম থাকার রহস্য উন্মোচন করেছি। আর সেটা হলো ওই চা। যদিও অন্যান্য বিষয়ও এর সাথে সম্পর্কিত, তবুও চা বা গ্রিন টি যা ‘ওচা’ নামে বহুল পরিচিত, সেটাই স্লিম হওয়ার অন্যতম মহৌষধ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, জাপানিরা পানির পরিবর্তে এই ওচা পান করে থাকে।

এবার আসল কথায় আসা যাক। ৬৭ বছর বয়সী কোতাও সান অবিবাহিত ভদ্রলোক যিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের এক অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭৫ সাল থেকেই বাংলাদেশের সাথে তার আত্মার বন্ধন। জাইকার একজন স্টাফ হিসেবে তিনি বহু বছর কাজ করেছেন আমাদের দেশে। যমুনা সেতু ও অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করার তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে।

বাংলাদেশের জেডিএস ফেলো যারা ইয়ামাগুচিতে সেই ২০০০ সাল থেকে পড়াশোনা করে গেছেন, তাদের প্রত্যেকের সাথেই তার সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ এখনও অটুট আছে। এটা তিনি নিজে থেকেই রক্ষা করেন শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই। শুধু তাই নয়, তার পকেটে সবসময় বাংলাদেশের মানিব্যাগ ও হাতব্যাগে সব পরিচিত বাংলাদেশিদের ছবির বিশাল অ্যালবাম সংরক্ষিত থাকে।

তো ভদ্রলোক হঠাৎ করে একদিন ফোন করে আমার বাসায় আসতে চাইলে আমি সানন্দে রাজি হই। লাঞ্চ টাইমে তিনি যথাযময়ে উপস্থিত একেবারে লাঞ্চসহ। এখানে বলে রাখা ভালো- জাপানিদের দাওয়াত করলে তারা নিজেদের খাবারসহ আমন্ত্রণকারীর বাসায় এসে থাকেন। এটাই জাপানিদের ঐতিহ্য।

ভদ্রলোককে আমাদের দেশিয় খাবার অফার করায় বেশ খুশি হয়ে আগ্রহ সহকারে পোলাও, মাংস, সবজি, সেমাই- সবকিছুই খেলেন। তার খাওয়া দেখে বোঝা গেল, তিনি বাংলাদেশি খাবারও বেশ পছন্দ করেন। ভদ্রলোক অনেক বাংলা কথাও জানেন এবং অবাক করে দিয়ে বাংলায় বললেন- ‘তরকারি খুব ভালো হয়েছে, খুব সুন্দর।’

বাংলাদেশের অনেক জায়গার নাম এবং কেন বিখ্যাত, সেটাও তিনি জানেন। দুপুরে খাবারের পর হঠাৎ তার সাথে বের হওয়ার কথা বললেন এবং আমাদের নিয়ে কিরারা মেমোরিয়াল পার্ক ও চা বাগানে নিয়ে যান।

জাপানের চা বাগানগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো-বিশাল পাহাড়ী এলাকা জুড়ে এক একটি চা বাগান। চা পাতা ও গাছের আকৃতি বেশ ছোট। পাতাগুলো এতো পরিচ্ছন্ন, দেখলে মনে হবে কিছুক্ষণ আগে পানি দিয়ে কেউ পরিষ্কার করেছে।

জাপানের যে অল্প কিছু জায়গায় চা বাগান আছে, তার বেশিরভাগ ইয়ামাগুচিতে পড়েছে এবং সেগুলোর গুণগত মানও বেশ ভালো বলে কোতাও সান জানালেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের সাথে সাথে এর গুণগত মান রক্ষা করা হয়।

আমাদের দেশের মতো চা এদের বাগানে কোনো বাংলো বাড়ি বা অফিস দেখা যায় না। একেবারেই প্রাকৃতিক পাহাড়ী মনোরম পরিবেশে এখানের চা বাগানে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় যা বেশ ব্যয়বহুল। এ চা পাতা থেকেই তৈরি  ঠাণ্ডা চা (যা ‘ওচা’ নামে পরিচিত) জাপানিরা শীত-গ্রীষ্ম সবসময় পানির পরিবর্তে পান করে থাকে।

জাপানীরা এ চা পাতা থেকে গ্রিন টি ছাড়াও আরও অনেক ধরনের খাবার, যেমন চকলেট,বিস্কুট,কেক,আইসক্রিম,জুস,পাইসহ বহু ধরনের খাবার তৈরি করে থাকে যা জাপানিদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যসম্মতও বটে।

জাপানিদের চা ও চা দিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন খাবার সত্যিই বেশ দারুণ ও স্বাস্থ্যসম্মত যা আমরাও অনুসরণ করতে পরি। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কোতাও সানকে ধন্যবাদ।

লেখক: জেডিএস ফেলো, সিনিয়র সহকারী সচিব, ইয়ামাগুচি ইউনিভার্সিটি, জাপান।

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!