তরঙ্গা জুতে যেতে চাইলে আপনি ড্রাইভ করেও যেতে পারেন, আবার ফেরিতেও যেতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে ফেরিতে যাওয়ার। সার্কুলার কিয়েতে ট্রেনে এসে সেখান থেকে আপনি ফেরিতে চড়ে বসলে মিনিট পনেরোর মধ্যেই আপনি তরঙ্গা জু’র ঘাটে পৌঁছে যাবেন।
ফেরি থেকে নেমেই আপনাকে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার স্কাই সাফারিতে করে আপনি পৌঁছে যাবেন তরঙ্গা জু’র মূল প্রবেশদ্বারে। তারপর আপনাকে সেখান থেকে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতে হবে।
ঢোকার মুখেই তরঙ্গা জু’র সেবকেরা আপনার হাতে একটা এ-থ্রি আকারের কাগজে তরঙ্গা জু’র একটা ম্যাপ দিয়ে দিবে। সেটাতে খুবই পরিষ্কারভাবে দিক-নির্দেশনা থাকে। তাই আপনি সহজেই ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আপনি ম্যাপের দেখানো জায়গা অনুসারে আপনার দেখার পরিকল্পনাটা করে ফেলতে পারেন।
আর হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত লাগলে জু’র ভেতরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ছোট ট্রেনের ব্যবস্থাও আছে। তবে তার জন্য আপনাকে আরও কিছু বাড়তি ডলার গুণতে হবে। আর বেড়ানো শুরু করার আগে যখন পরিকল্পনা করবেন, তখন একইসাথে একটু সময়টা দেখে নিলে ভালো হয়।
সিলের শো’টা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। একটা ছোট স্টেডিয়ামের মতো জায়গাতে বসার বাবস্থা। আর তার কেন্দ্রে একটা ডিম্বাকৃতির চৌবাচ্চার মধ্যে নীল রঙের পানি। উপরে নীল রঙের চাঁদোয়া থাকার কারণেই হয়তো চৌবাচ্চার পানিকে নীল দেখায়। বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষক এসে সিলের খেলাটা দেখান। একে একে সিলগুলো এসে প্রশিক্ষকের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন রকমের কসরৎ করে দেখায়। যেটা একইসাথে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলকে সমান আনন্দ দেয়।
দুইটা ব্যাপার এখানে মনে রাখা জরুরি। বসার জায়গার স্থান সীমিত, তাই এটা দেখতে চাইলে আগে থেকেই লাইনে দাঁড়াতে হবে। আর বসার সময় নিচের দিকে চৌবাচ্চার কাছাকাছি না বসাই ভালো, যদি না আপনার কাছে বাড়তি পোশাক থাকে। কারণ সিলের পাখনার ঝাপটায় আপনার ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এখানে চিল, কাকাতুয়া, ঈগল- প্রায় সব ধরনের পাখির দেখা মিলবে। খেলার শেষে আপনি চাইলে বাচ্চা পাখিগুলোর সাথে ছবিও তুলতে পারেন। তাছাড়াও আপনি সামান্য কয়েক ডলার দান করে বাচ্চাদের জন্য নিতে পারেন আকর্ষণীয় সুভ্যেনির।
এছাড়াও এখানে বাংলাদেশের গোয়ালঘরের আদলে রয়েছে খামার, যেখানে ছাগল থেকে শুরু করে শুকরেরও দেখা মিলবে। চাষাবাদের সমস্ত উপকরণ এখানে দেখতে পাওয়া যাবে। কোনটা কী কাজে লাগবে, সেই বিবরণও রয়েছে।
তরঙ্গা জু’তে একেবারে মাকড়শা থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত সকল প্রাণীই আছে। একদিকে যেমন আছে বিভিন্ন প্রকারের সরীসৃপ, আবার অন্যদিকে আছে সিলের মতো জলজ প্রাণীও। আর রয়েছে বাংলাদেশের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারও। তাছাড়াও রয়েছে পেঙ্গুইন।
ঘুরতে ঘুরতে আপনার যদি ক্ষুধা পেয়ে যায়, তাহলে তরঙ্গা জু’র ভেতরের ফুড মার্কেট থেকে খাবার কিনে খেতে পারেন। আর বেড়ানোর শেষে স্মারক হিসেবে কিছু কিনতে চাইলে জু’র ভেতরের দোকানগুলো থেকে কিনে নিতে পারেন।
ঘোরাঘুরি শেষ করে আবার আপনি দিন শেষে ফেরার পথে পা বাড়ালে আমার পরামর্শ থাকবে ফেরিতে করে ফেরার। কারণ, আবারও আপনি স্কাই সাফারিতে চড়ার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে দূর থেকে পাখির চোখে সিডনি শহরটাকে দেখতে পারবেন, যা আপনার দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তিকে কিছুটা হলেও লাঘব করবে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
মেইল: yaqub_buet@yahoo.com
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |