ল্যুভর পরিক্রমা ও মমি কাহিনী

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল অপার রহস্যঘেরা পিরামিড ও মমি। ইতিহাসে-সাহিত্যের বইগুলোতে মিশরীয় সভ্যতা কৃষ্টি সম্পর্কে পড়তে পড়তে এর প্রতি বেশ আগ্রহ জন্মে আমার।

আমাতুন নূর, জার্মানির বন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2018, 03:44 AM
Updated : 19 May 2018, 03:54 AM

সৈয়দ মুজতাবা আলীর ভ্রমণের বইটিতে মিশরের সেই চমৎকার বর্ণনা আমার ভ্রমণপিপাসু মনকে বার বার আপ্লুত করেছে। প্রবাসে মিশরীয় অনেক বন্ধুদের কাছে পিরামিড ও মমি সম্পর্কে অনেকবার জেনেছি। এজন্য  মমি দেখার প্রবল আগ্রহ ছিল আমার। স্বপ্নের ল্যুভর জাদুঘরে এসে মমি দেখবার সাধ আমার পূর্ণ হল।

ল্যুভরের অলিগলি দীর্ঘক্ষণ ঘুরে অনেককে জিজ্ঞাসা করেও যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন এক ইথিওপিয়ান নিরাপত্তারক্ষীকে খুব আগ্রহভরে প্রশ্ন করলাম, মমিটা কোনদিকে? তখন নিরাপত্তারক্ষীটি স্মিত হেসে জবাব দিল, আমিই মমি! বলেই সে সজোরে হো হো করে হেসে উঠল।
লোকটির রসবোধে মুগ্ধ হয়ে আমরাও হাসলাম। এরপর সে তথ্য নির্দেশিকা ভালোমতো দেখিয়ে দিল। মিশরীয় সভ্যতার দিকে ধীরে ধীরে আমরা আবিষ্কার করলাম দেয়াল লিখনসহ অপূর্ব সব কারুকার্যখচিত কফিনগুলো, যাতে তৎকালীন ফারাওদের মৃতদেহ মমি বানিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। এছাড়া ফারাওদের মাথায় পরিধেয় অদ্ভুত দর্শন সব মুখোশ ও সুন্দর সুন্দর সব মূর্তিও দেখলাম।
অবশেষে আমরা এসে উপস্থিত হলাম বহুল প্রতীক্ষিত মমির সামনে। মমিটি খুব সম্ভবত ১৬-১৭ বছরের বাচ্চার হবে। কারণ, ইতিহাস অনুসারে তৎকালীন যুগের মানুষেরা বেশ লম্বা  চওড়া হতো। কিন্তু এই মমিটি অতো বিশাল ছিল না। মমিটি দেখার সাথে সাথে কেমন একটা গা গোলানোর অনুভূতি হল কেন জানি না!

কিছুটা ঘিয়া রঙের কাপড় দিয়ে সুচারুভাবে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রাখা মনুষ্য অবয়বের যে  বস্তুটি একটি কাঁচের বাক্সে শোয়ানো ছিল, সেটিই আসলে মমি। কাপড়টাতে লেগেছিল রাসায়নিক কোনো পদার্থের ছোপ ছোপ দাগ।

মমি কথাটি আরবি শব্দ ‘মামিয়া’ থেকে এসেছে, যার অর্থ মোম। মূলত মোম দিয়ে মৃতদেহকে আবৃত করা হতো, সেজন্য এর নামকরণ করা হয় মমি। প্রাচীন মিশরীয়রা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিল। মৃত্যুর কিছুদিন পর আত্মা আবার দেহে ফিরে আসে, এই বিশ্বাস থেকে তারা মৃতদেহ সংরক্ষণের পক্ষপাতি ছিল। আর এই ধারণা থেকে তারা মমি বানানো শুরু করে। মিশরীয়রা শুধু মানুষ নয়, তাদের প্রিয় প্রাণী যেমন- কুকুর, বিড়াল এদের মৃতদেহকেও মমি বানিয়ে রাখতো।
মমি তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রথমে মৃতদেহ থেকে জলীয় অংশগুলো বের করে পুরো শরীরটাকে জলশুন্য করা হতো। তারপর এক ধরনের লবণ দিয়ে আবৃত করে সাতদিন একটি আবদ্ধ ঘরে রাখা হতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ দিয়ে অবশেষে সাদা রঙের লিলেন জাতীয় কাপড় দিয়ে পুরো শরীরকে সুচারুরূপে পেঁচানো হতো।
পুরো পক্রিয়াটিতে ৭০ দিনের মতো সময় লাগতো বলে জানা যায়। সাধারণত ধর্মীয় পুরোহিতরা এই কাজটি করতেন। এরপর একটি কাঠের কফিনে মমিটি রেখে উপরে তাদের মুখায়য়ব অথবা কোনো প্রাণীর মুখায়ব তৈরি করে বসানো হতো। বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে আধুনিক রুশের নির্মাতা ভলশেভিক বিপ্লবের জনক লেলিনের মৃতদেহকে মমি বানিয়ে রাখা আছে সে দেশের জাদুঘরে।
লেখিকা: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: amatun25@gmail.com

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!