চার ঋতুর দেশ জার্মানিতে বসন্ত

চার ঋতুর দেশ জার্মানি। মাত্র চারটি ঋতুর দেশকে ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বলা ঠিক হবে না হয়তো।

মাহবুব মানিক, জার্মানির হালে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2018, 07:34 AM
Updated : 28 April 2018, 07:34 AM

ঋতু বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের তুলনায় জার্মানি খুবই পানসে বলা যায়। বারো মাসে জার্মানিতে আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি ঋতুর দেখা মেলে- শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম আর  হেমন্ত।

বছর শুরু হয় শীত দিয়ে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি, দুই মাস শীতকাল। সাথে যোগ দেয় দিনপঞ্জিতে সবচেয়ে পিছে থাকা মাসটি, মানে ডিসেম্বর। সুতরাং ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই তিন মাস মিলিয়ে শীতকাল।

জার্মানির শীত ঋতুকে বলা হয় দুমড়ে-মুচড়ে যাবার ঋতু। স্থানভেদে হিমাঙ্কের নিচে চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত নামতে পারে। পশু-পাখি থেকে শুরু করে মানুষ, এমনকি গাছপালা কাঁপিয়ে জমিয়ে স্থির করে দেওয়া শীত!

প্রকৃতি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় যেন এ সময়। খাল-বিল, পুকুর সব জমে বরফ হয়ে যায় এ সময়। সাঁতরে বেড়ানো রাজহাঁস আর পানকৌড়ির দল তখন গোল্লাছুট খেলে জমাট বাঁধা পুকুরে।

শীতের তীব্রতা কমে এলে শুরু হয় বসন্ত। মার্চ, এপ্রিল এবং মে- এই তিনটি মাস গণনা করা হয় বসন্ত ঋতু হিসেবে। কথিত আছে,  ইউরোপের বসন্ত একবার যে দেখেছে, সে তার জীবনে প্রকৃতির সেরা রূপটি দেখে ফেলেছে। প্রকৃতি যে এত সুন্দর হতে পারে, ইউরোপের বসন্ত না দেখলে বোঝার উপায় নাই!

এখন বসন্তের মাঝামাঝি চলছে। ইউরোপ তথা জার্মানি এখন ফুলের বাগিচা। নানান রকম ফুল। চেনা-অচেনা হাজারও ফুলের সমাহার। জার্মানিকে এখন সবুজ প্রকৃতি বলার চেয়ে লাল-নীল-বেগুনী প্রকৃতি বলতেও মানুষ দ্বিধা করবে না। চারদিকে শীতের তীব্রতার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা গাছগুলোতে এখন পাতার থেকে ফুল বেশি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই ফুল। আমার চোখে অবশ্য সবই প্রায় বুনো ফুল। নাম-ধাম জানা নেই।
জুন, জুলাই ও আগস্ট- এই তিনটি মাস যদিও জার্মানিতে থাকা হয়, তারপরেও মনে হবে যেন বাংলাদেশেই আছি। এমন শীতের দেশে গরমের দাপট যে এতো ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেই জিনিসটা না অনুভব করলে বোঝার উপায় নাই। চারপাশে তখন ভ্যাপসা গরম আর মাঝে মাঝে ঝড়ো বৃষ্টি। মুহুর্মুহু বজ্রপাত আর দুনিয়া কাঁপানো ঝড় বাংলাদেশের কালবৈশাখীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
তপ্ত রোদে সাদা মানুষগুলোকে গরমে হাসফাঁস করতে দেখলে আফসোসই হয়। অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। গরমে হাসফাঁস করা চৈত্রের দুপুরে বটগাছ তলায় বাঁশের বেঞ্চে বালিশ মাথায় দিয়ে শুয়ে যে সুখ মেলে, তা যেন সারা জীবনের অধরা সুখ!
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর আর  নভেম্বর- এই তিন মাস হচ্ছে হেমন্তকাল। বাংলাদেশে হেমন্তে চলে নবান্নের উৎসব। জার্মানিতে কোথায় কোনো কৃষক নবান্নের উৎসব করে কিনা, এ খবর আমার রাখা হয় না। ব্যস্ত জীবনে এতো সময়ও মেলে না।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, জার্মানির গাছে গাছে তখন আগুনঝরা পাতা। শীতের প্রস্তুতিতে গাছের পাতাগুলো ঝরে যাবার পূর্বে সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রঙ ধারণ করে। কাঁচা হলুদ, পাকা হলুদ, লালচে হলুদ, টকটকে লাল, হালকা বাদামী, গাঢ় বাদামী- যার সবই প্রায় আগুনের রঙ। কোনোটা লালচে আগুন, বাদামী আগুন, আবার কোনোটা নীলাভ আগুন কিংবা দাবানলের মতো আগুন।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নভেম্বর মাসটি হেমন্তের অন্তর্ভুক্ত, তবুও নভেম্বরের শুরুতেই মোটামুটি শীতের কাঁপন শুরু হয়ে যায়। গুটিয়ে যায় প্রকৃতি, গুটিয়ে যায় পশু-পাখি। মানুষও গুটিয়ে যেতো, শুধুমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষ বারো মাসই কর্মক্ষম থাকতে পারে। গুটিয়ে গেলে চলে না। এগিয়ে যাওয়া দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে যে, যাতে কেউ ছুঁতে না পারে।

লেখক: মাহবুব মানিক, বৈজ্ঞানিক গবেষক, মার্সেবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সাইন্স, জার্মানি

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!