পরে জেনেছি এ ছাতাকে ইংরেজিতে ‘অয়েল পেপার আমব্রেলা’ বলে। যদি ভুল না করে থাকি, ‘অয়েল পেপার আমব্রেলা’ বাংলায় হবে ‘তেলপত্রের ছাতা’। তাই হওয়ার কথা, তাই না?
চীনে আসার আগে ভেবেছিলাম চীনের রাস্তায় কিংবা অন্দরে বইয়ের পাতায় দেখা সেইসব নারীরা ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু এসে দেখি ভিন্ন ব্যাপার-স্যাপার। সেইসব নকশা করা লম্বা কাপড় চীনা নারীদের শরীর থেকে বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চীনা নারীরাও ছোট ছোট পোশাক আপন করে নিয়েছে।
সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ‘ইও-ঝি-স্যান’ কিংবা ‘তেলপত্রের ছাতা’। শুধু বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে কিংবা কিছু বিয়েতে যারা এখনও নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে পছন্দ করেন, তাদের ক্ষেত্রে বাহারি এ ছাতার দেখা পাওয়া যায়।
এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, যা আধুনিক ছাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। তবে ভালো খবর হচ্ছে, এর কারিগররা আবার নতুন উদ্যামে ফিরে আসছেন। চীন তথা বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়ছে, উপহার-সামগ্রী হিসেবে আবার নতুন করে সমাদৃত হচ্ছে।
যাই হোক, বর্তমানে অল্প কয়েক জায়গায় এ ছাতা তৈরি হয় এবং তার মধ্যে সিচুয়ানের লুঝৌ শহরের ফেনসুই এলাকা একটা। সম্প্রতি আমার এক চীনা বন্ধু আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এ ছাতার কারখানা দেখার জন্য। বেশ ভালো লাগল। আমরা শুধু ছাতা আর এর সৌন্দর্যকেই দেখি, কিন্তু এর পেছনে কি নিরন্তর পরিশ্রম, সাধনা আর দক্ষতার দরকার তা না দেখলে বুঝতাম না। আরো বুঝলাম, যে দামে বাজারে ছাতা বিক্রি হয়, তা নিতান্তই অযৌক্তিক নয়।
কারখানার মালিক সাহেব আমাকে পেয়ে খুশি হলেন। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখালেন। সেদিন আবার একটা স্কুলের অনুষ্ঠান ছিল। ছাতায় নকশা করা আর ছাতা বানানোর দীক্ষা। ফুলের মতো সুন্দর শিশুরা একাগ্র মনে ছবি এঁকে সুন্দর সব ছাতা বানাচ্ছে, দেখতেই ভালো লাগে।
চীনারা বরাবরই সৌন্দর্যপ্রিয় জাতি। এদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে খুব বেশি ফুল, পাখি, নদী, ঝরনা ইত্যাদি মিশে আছে। তারই রূপ এরা তেলপত্রের ছাতায় ফুটিয়ে তোলে।
লেখক: চীন প্রবাসী
ইমেইলঃ asadkhanbmj@yahoo.com
ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |