বাংলাদেশ এগিয়েছে মনে করছেন প্রবাসী  মার্কিন রাজনীতিক

বাংলাদেশ ঘুরে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে জাগরণ ও ইতিবাচক মনোভাব দেখে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক মার্কিন রাজনীতিবিদ।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2018, 02:49 PM
Updated : 15 Feb 2018, 02:49 PM

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যামশায়ার অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি আবুল বাশার খান বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনার সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রামাঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য আমাকে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা দিয়েছে।”

“প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষের মধ্যেও এক ধরনের জাগরণ দেখেছি। হতাশার তেমন কোন ছাপ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখিনি। সবকিছু আমাকে অভিভূত করেছে।”

বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ায় গ্রামের বাড়ি আবুল বাশারের। ১০ জানুয়ারি স্ত্রী মর্জিয়া হুদা খানকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। একান্তই পারিবারিক সফর ছিল।

২৭ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবুল খান। এবারে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন চার বছর পর। মধ্যবর্তী এ চার বছরের তুলনা করতে গিয়ে এসময়ের বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে রাখছেন আবুল।

একমাস ৬ দিনের বাংলাদেশ সফরে ঢাকা, পর্যটন নগরী কক্সবাজার, খুলনা এবং বরিশালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন বলে জানান এই প্রবাসী রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “এবারের সফরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। রেস্টুরেন্টে বসেছি। রিক্সা-ভ্যানেও ঘুরেছি। মনে হয়েছে স্বপ্ন দেখছি। খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে জেগে উঠার প্রবণতা আমাকে দারুণভাবে আনন্দিত করেছে। কৃষকরাও আগের মত হতাশায় নেই। দিন মজুর, রিক্সাচালকরাও দুইবেলা পেট ভরে খাওয়ার সমস্যায় নেই।

তিনি বলেন, “হোটেল, মোটেল, ছোট-বড়-মাঝারি রেস্টুরেন্টে জমজমাট অবস্থা থেকেই সর্বস্তরের মানুষ যে আর্থিকভাবে কোন সমস্যায় নেই-তা আঁচ করা যায়।”

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে রিপাবলিকান রাজনীতিক আবুল।

চার বছর আগে ধনী-গরীব যে বৈষম্য দেখেছিলেন আবুল, এবারের সফরে সেটাকে অনেক কম মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “নিন্মবিত্তরা মধ্যবিত্তে এবং মধ্যবিত্তরা আরেকটু উঁচুতে উঠেছে বা ওঠার চেষ্টা করছেন। ভিক্ষুক দেখেছি রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক লাইটে। আমার মনে হয়েছে, ওরা স্বভাবদোষে ভিক্ষুকই থাকতে আগ্রহী। অথবা বিশেষ চক্রের কবলে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।”

তবে উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে রাজধানী ঢাকায় যানজট অবসানে সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকা দরকার তা নজরে পড়েনি বলে মন্তব্য করেন মার্কিন এ রাজনীতিক।

তার দৃষ্টিতে, ‘এটি ছিল খুবই পীড়াদায়ক’।

আবুল আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এরকম যানজট অব্যাহত থাকলে বিদেশিরা আগ্রহ হারাবেন এবং দেশের মানুষেরও কর্মদিবসের বড় একটি অংশের অপচয় রোধ সম্ভব হবে না।

তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ইতিবাচক কথাও বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে ভান্ডারিয়া যেতে তেমন কষ্ট হয়নি। যানজটের ধকলও পোহাতে হয়নি। লঞ্চগুলোও দেখেছি বড় আকারের। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে লঞ্চে, ঘাটে- সর্বত্র। বরিশাল থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ভান্ডারিয়া গেছি-যা ছিল কল্পনারও অতীত।”

বাংলাদেশে নিজের এলাকার সংসদ সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন রিপাবলিকান আবুল খান।

তিনি বলেন, “এলাকার মানুষের জন্য তিনি খুবই দরদ দিয়ে কাজ করেন। সামান্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি। উপজেলা সদরে একটি হাট রয়েছে। শনি ও মঙ্গলবার বসে। এই হাটে কোন ইজারাদার নেই অর্থাৎ ক্রেতা-বিক্রেতাকে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। মঞ্জু সাহেব ইজারাদার সম্ভাব্য অর্থ একত্রে পরিশোধ করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এভাবেই সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে কাজ করছেন তিনি।”

“এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নেও অনেক কিছু করেছেন। এজন্যে আমি তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।”

১৯৮১ সালের শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবুল। তিনি এসএসসি করেন ঢাকার মুসলিম গভর্মেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে। নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে এইচএসসি করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী  ছিলেন আবুল খান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব আর অহংকারের অনেক কিছুই রয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মতভেদ পরিহার জরুরি সকল বাংলাদেশি-আমেরিকানের। তাহলেই চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে এবং সেই ধারা এগিয়ে নিতে আমাদেরকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তা দিতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকলে, আমরাও খুশি থাকবো।”

প্রবাসী হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯ বছর ছিলেন আবুল বসবাস করেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে।

২০০০ সাল থেকে পরিবারসহ বাস করছেন নিউ হ্যামশায়ার অঙ্গরাজ্যের সীব্রুক টাউনে। সেখান থেকেই গত কয়েক বছর যাবত স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নির্বাচনী এলাকায় আর কোন বাংলাদেশি নেই। সকলেই শ্বেতাঙ্গ। সবার সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি আবুল।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!