প্রবাসীর চিঠি: কোরিয়ার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট

প্রযুক্তির দিক দিয়ে এশিয়ার মধ্যে প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে কোরিয়া অন্যতম। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তা ও পরিবহন সুবিধা মিলিয়ে সব শ্রেণির মানুষই পরিবহন সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট।

দুলাল চন্দ্র, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2018, 05:15 AM
Updated : 18 Jan 2018, 04:58 AM

বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তির মুখোমুখি হন ট্রান্সপোর্ট বা পরিবহন যোগাযোগ ক্ষেত্রে। আমি আগে মনে করতাম, ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য শহরগুলোতে মানুষ অন্তত শহরের মধ্যে যোগাযোগে দুর্ভোগ থেকে মুক্ত আছেন। কিন্তু দিনকে দিন সে ধারণাটাও ভুল হতে চলেছে।

যাহোক, দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রান্সপোর্ট নিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম। কোরিয়ার ট্রান্সপোর্টে আধুনিক প্রযুক্তির সমাহারে এমনভাবে সমন্বয় করা হয়েছে, যা দেখে আমার মনে হয়েছে- এরকম একটা পদ্ধতি বাংলাদেশে করতে পারলে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেতেন।

প্রথমে বলি বাসের কথা। সিটি বাসগুলো তিনটি ক্যাটাগরির। লাল, সবুজ ও হলুদ। লাল রঙের বাসগুলো যে রুটে চলে, সে রুটের কেবল বড় বড় স্টেশনগুলোতে থামবে বাস। আর চলবেও দ্রুত। সবুজ বাসগুলো সবগুলো স্টেশনে থামবে। তবে লালগুলোর মতো বাসের সিটগুলো অতোটা আরামপ্রদ নয়।

আর হলুদ বাসগুলো হলো বাংলাদেশের মিনিবাস টাইপের। বসার ব্যবস্থা মোটামুটি সবুজ বাসগুলোর মতো হলেও গতি আর বাসরুটের দূরত্বে এগুলো সবুজের থেকে অনেক পেছনে। বলা যেতে পারে, হলুদ বাসগুলো একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরু রাস্তায় চলতে পারে, যা শহরের বড় রাস্তায় এসে মিশে গেছে।

এবার বলি বাসের ভাড়া নিয়ে। তার আগে বলে নেই, এখানে বাসে কেবল চালক ছাড়া কোনো হেল্পার বা ভাড়া নেওয়ার সুপারভাইজার থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলতে হয় সবাইকে। ফলে, বাসে বা গাড়িতে চালকের আসনটা হলো বামদিকে।

বাসের ড্রাইভারের আসনের তিনদিকেই কাঁচের জানালা বা দেয়াল, আর একদিকে (যেদিক দিয়ে যাত্রীরা বাসে ওঠে সেইদিকে) খোলা, যেখানে একটা হাইটেক অথচ ছোট; বলা যায়, একটা ল্যাপটপ কম্পিউটারের অর্ধেক সমান মেশিন সেট করা আছে।

সেই মেশিনটার পাশে আরেকটি একটু বড় মেশিন সেট করা থাকে যেখানে সরাসরি টাকা বা পয়সা দিলে বা ফেললে চালক একটা বাটন টিপে দেখতে পাবেন, কতো টাকা দিয়েছে।

সবগুলো বাসের দুটো দরজা। চালকের কাছের দরজা দিয়ে বাসে ওঠা আর বাসের মাঝখানে আরেকটা সেটা দিয়ে নামা। নামার দরজার কাছেও আরেকটা ছোট মেশিন বসানো আছে। যারা বাসে চলাচল করেন, বলা চলে তাদের শতকরা ৯৮ ভাগ লোকেরই পরিবহন কার্ড আছে।

এই কার্ডটি প্রথমে একবার কিনতে হয়। দাম তিন ডলার। তবে অনেকে কার্ডটির নম্বর তার স্মার্ট ফোনে অথবা ডিজিটাল হাতঘড়ি, হাতের বেসটেল, চাবির রিং, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, ছাত্রদের স্টুডেন্ট কার্ড, সিনিয়র সিটিজেন কার্ড ইত্যাদি বিভিন্ন ডিভাইসে বা কার্ডে সেট করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আর পরিবহন কার্ড আলাদা করে বহন করতে হয় না।

এ পরিবহন কার্ড বাসে উঠার সময় ছোট মেশিনে স্পর্শ করলে কার্ডের যে টাকা ছিলো, তা থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া কেটে নেবে। সাথে সাথে যাত্রী দেখতে পাবেন, টাকা কেটে নেবার পর তার অবশিষ্ট কতো টাকা রইলো।

যখন কার্ডটি স্পর্শ করবে, মেশিনটা শব্দ করে কিছু বলবে। তা বাসের ভেতরের সবাই শুনতে পাবেন। ড্রাইভারও শুনতে ও দেখতে পাবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, মেশিনটা এরকম বলে- ‘আপনার কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে’ অথবা ‘বাসে ওঠার জন্য ধন্যবাদ’ বা ‘আপনাকে স্বাগতম’।

যদি বাস কার্ডে কোনো টাকা না থাকে বা পর্যাপ্ত টাকা না থাকে, তবে অন্যকথা বলবে, যা শুনে ড্রাইভার ওই লোককে বলবে- নগদ টাকা পাশের বড় মেশিনে ফেলার জন্য। বড় এই টাকা জমা দেবার মেশিনটা এমন যে ড্রাইভার তার সিটে বসে থেকেই যাত্রীদের ভাঙতি টাকা বা অতিরিক্ত টাকাটা ফেরত দিতে পারেন।

মেশিনটার নিচ দিয়ে সেটা বের হয়ে আসে। বাসে ওঠে কার্ড টাচ করা বা মেশিনে টাকা দেওয়ার কাজটা করতে খুব কম সময় লাগে, ফলে যাত্রীরা লাইন দিয়ে সেটা করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেন না। আবার সেটা নিয়ে যে একটা হুড়োহুড়ি লেগে যাওয়া, তাও হয় না। কারণ একজন যাত্রীও মনে করেন না যে তারা ভাড়া না দিয়ে যাবেন। যারা ছাত্র বা শিশু, তাদের কার্ডগুলোই সেভাবে সেট করা আছে যাতে কম টাকা বা ডিসকাউন্ট পায়।

কিন্তু সেটা নিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করার পরিস্থিতি তৈরি হয় না। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় বাসের হেল্পার বা সুপারভাইজারদের ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি, কোনো কোনো সময় সেটা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাওয়া নিত্যদিনের এক স্বাভাবিক ঘটনা, যা ওই বাসের অন্যান্য যাত্রীদের জন্য মানবিক পীড়া হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, ছোট শিশুরা যখন এগুলো দেখে, তাদের মধ্যে ভীতি জমে এবং বার বার দেখার ফলে সে নিজেও বড় হয়ে একসময় মারমুখী আচরণ করার সাহস করতে দ্বিধা করে না। 

আমি বলব, এটা উঠতি বাবা বা কোমলমতি যুবকদের সমস্যা নয়। সমস্যা হলো আমাদের পারিপার্শ্বিকতা। আমরাই তাদেরকে সেভাবে তৈরি করছি। এর ফলশ্রুতিতে হয়তো দিন দিন বড়দের প্রতি আমাদের সম্মানবোধ অনেকটা কমে যাচ্ছে।

যাহোক, আমি শিশু মনোবিজ্ঞানী নই। শিশু মনোবিজ্ঞানীরা এসব গবেষণা করেন কিনা আমি জানি না। তবে আমার সহকর্মীদের কাছে শুনেছি কোরিয়াতে এরকম গবেষণা হয়।

আবারো ফিরে যাই বাসে। বাসে কার্ড টাচ করার পর সিটে বসার ব্যবস্থা আছে। তবে সিটের তুলনায় দাঁড়িয়ে থাকার ব্যস্ততা বেশি। তবে দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য অনেক ঝুলন্ত ফিতা আছে। বাসে বসার সিলগুলোর রঙও বিভিন্ন।

গোলাপি রংয়ের সিটগুলো বয়স্ক নারী, গর্ভবর্তী বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এরকম নারীদের জন্য। আর আছে হলুদ রংয়ের সিট, যেগুলো ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ বা নারীদের জন্য অথবা আট বছরের নিচের শিশুদের জন্য। বাকি সিটগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।

বাসগুলো কেবল নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াবে, যেখানে যাত্রীরা নামবে ও উঠবে। কোনো অবস্থাতেই বাসস্ট্যান্ড ছাড়া অন্য জায়গায় লোক উঠানামার ব্যবস্থা ও পরিবেশ নেই। বাসের ভেতরের দেয়ালে বিভিন্ন জায়গায় লাল রঙয়ের বাটন আছে। সেখানে টিপলে তার আলো জ্বলে উঠবে ও একটা শব্দ হবে যা ড্রাইভারের কাছে একটা সংকেত হিসেবে যাবে। তা দেখে ড্রাইভার বুঝতে পারবেন, পরবর্তী স্ট্যান্ডে যাত্রী নামবেন।

একদিকে বাস চলছে আর ভেতরে একটু পর পর অটোমেটিক অ্যানাউন্স হচ্ছে- এখন বাসটি অমুক স্টেশনে থামবে আর পরবর্তী স্টেশন হলো অমুক। ফলে যাত্রীরা সেটা শুনে নামার প্রস্তুতি নেন। নামার সময় বাস কার্ডটি আবার নামার দরজার কাছে যে মেশিন সেট করা আছে, তাতে টাচ করতে হবে।

এই মেশিনটি নির্ণয় করবে যাত্রীদের মোট ভাড়া অর্থাৎ যেখানে বাসে উঠে টাচ করেছিল, সেখান থেকে নামা পর্যন্ত ভাড়া। উঠার সময় সর্বনিম্ন বাস ভাড়া কেটে নিচ্ছে। কিন্তু নামা পর্যন্ত যদি ভাড়া বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত টাকাটা নামার সময় টাচ করলেই কেটে নেবে। সাথে সাথে যাত্রী তার কার্ডে অবশিষ্ট কত টাকা রইল সেটা দেখতে পাবেন।

এবার মজার বিষয় হলো যে বাস থেকে যাত্রী নামলো, উদাহরণস্বরূপ বলা যাক ৭২ নং বাস থেকে নামলো। ওই বাসস্ট্যান্ড থেকে ৭২ নং ছাড়া অন্য যে কোনো নম্বরের বাসে উঠলে ওই যাত্রীর জন্য সর্বনিম্ন যে ভাড়া বাসে উঠার সময় কাটবে, সেটা আর লাগবে না। ফলে ওইখান থেকে অন্য নম্বরের বাসে অন্য রুটে যেতে কেবল ওই স্ট্যান্ড থেকে যতদূরের স্ট্যান্ডে যাবে, সেই টাকাটুকু কাটবে। অনেক সময় কাছাকাছি বা অতিরিক্ত কোনো টাকাই কাটে না।

মোট কথা, এক বাস থেকে অন্য বাস, এক রুট থেকে অন্য রুট, সবকিছু একসঙ্গে হয়ে হিসাব করে মেশিন কার্ড থেকে টাকা কেটে নেবে। তবে প্রথম বাস থেকে নেমে দ্বিতীয় বাসে উঠতে যদি সময় তিরিশ মিনিটের বেশি হয়ে যায়, তবে দ্বিতীয় বাসে উঠার সময় আবার সর্বনিম্ন ভাড়া কাটবে। অর্থাৎ আবার শুরু থেকে হিসাব করবে। এজন্য কোরিয়ান লোকজন কোনো একটা স্ট্যান্ডে নেমে আশপাশের কোনো দোকানে শপিং করেন খুব দ্রুত, যাতে তিরিশ মিনিটের আগেই অন্য বাসে উঠতে পারেন। এতে করে তারা খুব অল্প ভাড়া দিয়ে অন্য কোনো এলাকায় বা শপিং-এর জন্য যেতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো, বাসে ওঠার সময় ড্রাইভারের সামনে কার্ড টাচ করতে হয়, কিন্তু নামার সময় কার্ড টাচ কেউ করলো কি করল না সেটা দেখার কেউ নেই। তবে যদি কোনো যাত্রী কার্ড টাচ না করেন, তবে ওই কার্ড থেকে ওই বাসের সর্বশেষ স্ট্যান্ড পর্যন্ত যত ভাড়া হয়, তত টাকা অটোমেটিক কেটে যাবে। অথবা প্রথম বাস থেকে নেমে দ্বিতীয় বাসে ওঠার সময় আবার নতুন করে ভাড়া কাটা শুরু হবে। ফলে প্রতিটি যাত্রী তাদের নিজের প্রয়োজনে নিজের টাকা যেন কম কাটে সেজন্য নামার সময় অবশ্যই টাচ করবে।

এ পদ্ধতির কার্ড ও ভাড়ার সমন্বয় লাল, সবুজ ও হলুদ- সব ধরনের বাসেই সম্ভব। আর প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে গেলে যাত্রী দেখতে পাবেন, কোন বাস কত মিনিট পর এ স্ট্যান্ডে আসবে। কারণ, প্রতিটি স্ট্যান্ডে একটা মেশিন ও টিভি স্ক্রিন আছে, তাতে সব সময় আপডেট হচ্ছে। সেটা দেখে যাত্রী বাস নাম্বার পছন্দ করতে পারেন।

আর প্রতিটা বাস তাদের রুটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন কোন স্ট্যান্ডে দাঁড়াবে, তাও খুব সুন্দর করে লেখা আছে। ওই রুটের তীর চিহ্ন দেখে যাত্রী বুঝতে পারবেন, কোন স্ট্যান্ড বা জায়গা কোন দিকে। আবার বাসস্ট্যান্ডে ওই স্ট্যান্ডের নাম এবং পরবর্তী ও পূর্ববর্তী স্ট্যান্ডের নাম ও তীর চিহ্ন দিয়ে লেখা আছে। আর ৮-১০ জন লোক বসতে পারেন, এরকম বেঞ্চ সেট করা আছে।

এতো গেলো কেবল বাসের কথা। কোরিয়ার সিউল ও তার আশপাশের শহরগুলোতে সাবওয়ে ট্রেন আছে। এ ট্রেনগুলো মাটির নিচ দিয়ে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাটির উপর দিয়েও চলে। ওই একই পরিবহন কার্ড এ ট্রেনেও ব্যবহার করা যাবে। ট্রেনের প্লাটফর্মে ঢোকার জায়গায় গেট আছে। গেটে কার্ড টাচ করলেই গেট খুলে যাবে এবং কেবল একজন লোক ঢুকলেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে। বড় বড় স্টেশনে ঢোকা ও বের হবার জন্য এরকম অনেক গেট থাকে।

আমার তো মনে হয়, কোথাও কোথাও পঞ্চাশটার মতো গেট থাকে। প্রতিটা গেটে একটা করে মেশিন যা একটা বাসে ড্রাইভারের কাছে থাকা সেই মেশিনটার মতো কাজ করে। ফলে যাত্রী বাস থেকে নেমে ট্রেনে অথবা ট্রেন থেকে নেমে বাসে উঠলে সেটা যদি তিরিশ মিনিটের মধ্যে হয়, তাহলে ফ্রি। আর তিরিশ মিনিটের বেশি হলে আবার নতুন করে হিসাব শুরু হয়। তবে ট্রেনে কেউ কার্ড ছাড়া নগদ টাকা দিয়ে যেতে পারবেন না।

এজন্য নতুন লোক বা বিদেশি হলে স্টেশনে ওয়ানওয়ে টিকিট নেওয়ার মেশিন আছে। সেখানে গন্তব্য সেট করে টাকা ঢোকালেই টিকিট বের হয়ে আসবে। এ ভেনডিং মেশিনগুলো কোরিয়ান, ইংরেজি, জাপানিজ ও চাইনিজ ভাষায় সমানভাবে কাজ করে। শুধু শুরুতে ভাষা নির্বাচন করে নিতে হবে। প্রতিটা ট্রেন স্টেশনে ট্রেন লাইনের ম্যাপ দেওয়া আছে। ম্যাপগুলোর অনেক প্রিন্ট কপি বা লিফলেট রাখা আছে। যাত্রী ইচ্ছা করলেই তার ব্যাগে দুই-একটা  ম্যাপ নিতে পারেন, কোনো টাকা লাগবে না।

যদি কোনো যাত্রী কীভাবে টিকিট কাটতে হবে বুঝতে না পারেন, তাহলে পাশেই হেল্প ডেস্ক বলে একটা লাল বাটন আছে। ওটা চাপলেই স্টেশনের কেউ আপনার কাছে ছুটে আসবে সহায়তা করার জন্য। বাসের নম্বরের মতো স্ট্রেনেরও লাইন নাম্বার আছে যা বিভিন্ন রঙ দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে পুরো ট্রেন নেটওয়ার্কে চিহ্নিত করা আছে। বাসের মতো ট্রেনেও বলছে, ট্রেনটি এখন কোন স্টেশনে আসছে, পরবর্তী স্টেশন কী- তাও বলে দিচ্ছে। সাথে সাথে প্রতিটা ট্রেনের কামরায় কমপক্ষে চার-পাঁচটা মনিটরে লেখা উঠছে।

এই মনিটরে কোরিয়ান ও ইংরেজি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাপানিজ ও চাইনিজ ভাষায় লেখা উঠছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ট্রেন যদি কোনো বড় স্টেশনে থাকে, সেখানে হয়তো তিন-চারটা লাইনের ট্রেনও থামে, তাহলে ঘোষণায় বলছে ‘আপনি যদি অত নম্বর লাইনে অমুক জায়গায় যেতে চান, তাহলে এখানে নেমে অত নাম্বার লাইনের অমুক রংয়ের ট্রেনে উঠুন।’

মোটকথা, এ পুরো বিষয়টা অনেক জটিল মনে হলেও একেবারেই জটিল নয়। বরং দেশি-বিদেশি যে কেউ এমনটি কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেও তার ভ্রমণ শেষ করতে পারেন বা তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন।

একেকটা স্টেশনে চার-পাঁচটা থেকে শুরু করে দশ-বারোটা পর্যন্ত বের হওয়ার গেট থাকে। আর কার্ড চার্জ করার জন্য রয়েছে মেশিন। আবার বাংলাদেশের মোবাইলের ফ্লেক্সিলোডের মতো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, এরকম দোকানে চার্জ করা যায়।

বাংলাদেশ এখন আর শুধু বাংলাদেশ নেই। তার আগে একটা ডিজিটাল শব্দ যোগ হয়েছে। কিন্তু সে কি কেবল মানুষের হাতে একটা করে মোবাইল আর তার সঙ্গে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ?

ডিজিটালের বড় রকমের সুবিধা মানুষ অনুভব করতে পারতো যদি কোরিয়ার মতো একটা যোগাযোগ বা পরিবহন নেটওয়ার্ক ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতো। আমার ডিজিটাল জ্ঞান তেমন নেই, তবে এটুকু বুঝি, কোরিয়ার মতো সহজ উপযোগী একটা পরিবহন নেটওয়ার্ক চালু করা তেমন কঠিন নয়।

লেখক: পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হার্টকালচারাল অ্যান্ড হার্বাল সায়েন্স, রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ওয়ানজু, কোরিয়া।

ইমেইল: dchandrajp@gmail.com

এই লেখকের আরও লেখা-

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!