প্রবাসের চিঠি: ডরমিটরিতে বিভিন্ন দেশের রান্না

বিদেশে পড়াশোনায় ডরমিটরি জীবনের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় সময় হলো অনেক দেশের রান্না দেখা। আমার মনে হয় পৃথিবীর সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা আর ভারতীয় গিজগিজ করবেই, এতে কোন ভুল নেই।

রাশা বিনতে মহিউদ্দীন, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 10:45 AM
Updated : 14 Jan 2018, 10:52 AM

ক্যাম্পাসের বাসস্টপ, লাইব্রেরি, রান্নাঘর সবখান থেকে হিন্দি, উর্দু আর চীনা কথাবার্তা ভেসে আসে। মাঝরাতেও এদের রান্নাবাড়া চলে।

সেদিন দেখলাম প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর স্নোয়ের ভেতর কতগুলো ভারতীয় তুষার হাতে মাঝরাতেও মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, কিছুটা ফিল্মি। অন্তত ছবি তোলার জন্য এরা খুব কষ্ট সহ্য করে। 

চীনারা প্রচুর নুডলস রান্না করে। আর আজ সত্যিকার চাইনিজ চিকেন রান্না দেখলাম। খুব ভাল লাগছিল দেখতে, গন্ধও ভালো। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের ছেলেমেয়েরা আমাদের মতো ভাত খায়। এরা কেউ কেউ আবার তিনবেলা ভাত খায়। আর উপরের রান্নাঘরে সুগন্ধ বলে দেয় পাকিস্তানি কেউ বিরিয়ানি রান্না করছে। এদের বিরিয়ানির গন্ধ অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়।

এশিয় খাবারে অনেক রকম মসলা থাকে, অনেক দূর থেকেও খাবারের সুগন্ধ পাওয়া যায়। চীনা, বাঙালি, ভারতীয়, পাকিস্তানি, ইন্দোনেশিয় সবাই প্রচুর তেলে ডুবিয়ে ভাজাভুজি করে। এখানে ইউরোপিয়রা খুব স্বাস্থ্য সচেতন বলে তেলে ডুবিয়ে ভাজা খাবার এদের নেই প্রায়। যা আছে তাও ওভেনে সেঁকা। প্রতিবেলা টাটকা সালাদ থাকবেই, বিশেষ করে রাতের খাবারে। এতো এতো সালাদের রেসিপি আর বিলাসী বৈচিত্র্য কেবল জার্মানদেরই দেখেছি।

এরা খুব স্বাস্থ্য সচেতন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক এগ্রিকালচারের ছেলেমেয়েরা খাবার নিয়ে পড়াশোনা করে। এরা এতো খাবার সচেতন যে বারবিকিউ পার্টিতেও নিরামিষাশী। এদের রান্নার কোন গন্ধ নেই, তেমন রং নেই খাবারে। খুব কম সময়ে রান্না করে, একটু নেড়ে নামিয়ে নেয়। আমাদের মতো কষিয়ে ভুনাভুনা করে উল্টেপাল্টে রান্না এদের নেই। এজন্য এদের ওজন ততো বাড়ে না।

মধ্যপ্রাচ্যের শিক্ষার্থীরা আমাদের এশিয়দের মতো খুব তেলে ভাজা, প্রচুর মাংস আর কাবাব খায়। জার্মানির বেশিরভাগ কাবাবের দোকান তুর্কিদের।

আফ্রিকানদের শুকনো মাছের গুড়া রান্না করার সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। এরা সুজি, কাসাভা এসব দিয়ে সেদ্ধ আটা মাখার মতো কিছু একটা বানায়। তারপর শুটকি গুড়ো দিয়ে ভাতের মতো খায়। শুয়োপোকার শুটকি এদের খুব প্রিয়।

এরা দেশে গেলে এসব মাছ আর পোকার শুটকি লাগেজ ভরে নিয়ে আসে। এরা যদি কিছু খেতে বলে খুব বিপদ! আমাকে অনেকবার বলেছে।

একদিন ভারতের আসামের এক ছেলে রান্না করছে। মুরগি আর আম একই চাকু ও চপিং বোর্ড দিয়ে কাটছে। একপাশে মুরগি আরেক পাশে আম। আম তুলে মুখে পুরে দিয়ে আবার মুরগি কাটাকাটি করছে। মা বাঙালি তাই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। আমাকে বাংলাতেই বললো, ‘আম খাবে?’ আমি ‘না ঠিক আছে, অনেক ধন্যবাদ’ বলে রান্নাঘর ছাড়লাম!

এ ভারতীয় ছেলেটাকেই গতকাল রাতে বাথরুম আর রান্নাঘরের দিকে খালি পায়ে বোতল হাতে দৌড়াতে দেখলাম। তার বোতল ভরার আর ধৈর্য নেই, স্যান্ডেল পরারও সময় নেই। এক হাতে বোতল, প্যান্ট গুটানো, দৌড়ের জন্য প্রস্তুত। এ দৃশ্য বর্ণনা করা কঠিন!

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী, হোয়েনহেইম বিশ্ববিদ্যালয়, স্টুটগার্ট, জার্মানি

ই-মেইল: rasha.btv@gmail.com

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!