লন্ডনের চিঠি: বাবা-দাদার দেশ নয়, আমার দেশ বলতে শেখানো

১৭৫৭ সনে পলাশীর আমবাগানে বাংলার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো তারপর চলেছে সোয়া দুইশ’ বছরের ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন। এরপর ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তি। ৫২’র ভাষা আন্দোলন ৬৬’র গন অভ্যুত্থান ১৯৭০ এর নিবার্চন। সর্বোপরি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। সব জায়গায় বাঙালির রক্ত ক্ষয়েছে।

মহীউদ্দিন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2017, 03:14 PM
Updated : 17 Dec 2017, 03:14 PM

দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলার বীরসেনানিরা ছিনিয়ে এনেছিলো সেই অস্তমিত সূর্য একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বরে।  

বাংলাদেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠির বসবাস দেশের বাহিরে। এই জনগোষ্ঠি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আর নিজ জীবিকার প্রত্যয় নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে। দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এই অবদান রাখতে গিয়ে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ক্লান্তপরিশ্রান্ত দেহে ও মনে আমরা খুঁজে চলি দেশ ও দেশের খবর। ঘটা করে পালন করা হয়ে উঠে না মহান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস কিংবা আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস। সেই আবেগ আর ভালোবাসা জায়গা থেকে ব্যতিক্রম এক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে ‘আমরাই ৭১’।

পূর্ব লন্ডনের স্ট্রার্টফোর্ড স্টেশনের বাহিরে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে বাংলা ভাষাভাষিরা একত্রিত হয়েছিলেন বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরতে।

ওইদিন জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ‘আমরাই ৭১’ এর পথ যাত্রার শুরু হয়। বাংলাদেশের পাটিসাপ্টা পিঠা আর নকশী পিঠা বিলানোর মধ্য দিয়ে উপস্থিত বাঙালিরা ভিনদেশিদের মাঝে বাংলাদেশে অতীত ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

এ যাত্রার একমাত্র উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সাথে নিজেদের একাত্মা ঘোষণা করা। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বুকে ধারণ করা ও আগলে রাখা। আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দেশ ও দেশের সাংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত করা। তারা যেন ‘দাদুর দেশ’ কিংবা ‘বাবার দেশ’ না বলে, নিজের দেশ হিসেবে আপন করে নেয় বাংলাদেশকে।

আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই তাদের মাঝে বাংলাদেশ ও দেশের ঐতিহ্য কে। বাংলার চিরচেনা রূপ বৈচিত্র্যকে। যেখানে সকাল হয় রঙ ছটা সূর্যের সোনালি আভায়, যেখানে কদম ফুল ঝরে বৃষ্টিতে, যেখানে হাসনেহেনা ফুটে অঝরে, শিমুলের লালে লাল হয়ে উঠে শীতের সকাল।

আম কাঁঠালের গন্ধে মৌ মৌ করে গ্রীষ্মের বাতাস। যেখানে মন কেড়ে নেয় শরতের বিকেলের আকাশ। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে নুপূরে নৃত্যে মেতে উঠে বর্ষা। যে দেশে অতিথি হিসেবে ভিড় জমায় ভিনদেশি পাখিরা। যেখানে সম্প্রীতি আর ভাতৃত্ববোধে মিশে থাকে চিরচেনা সমাজ ব্যবস্থা।

সে দেশটি আমার। প্রিয় স্বদেশ। প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক: লন্ডনে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

ইমেইল: ershad2007@gmail.com

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!