কানেকটিকাটে ‘নজরুল চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাট’-এ ‘নজরুল চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 04:59 AM
Updated : 14 Dec 2017, 05:03 AM

স্থানীয় সময় শনিবার নিউ ইয়র্কে ‘ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাট’-এর নজরুল এনডাউমেন্ট কমিটি, নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স কমিটি ও নজরুল একাডেমি সম্মিলিতভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

নজরুল চেয়ার প্রতিষ্ঠার এ আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও নজরুল একাডেমির সভাপতি সৈয়দ টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। 

উদ্যোক্তারা জানান, নজরুল চেয়ার প্রতিষ্ঠায় দুই মিলিয়ন তথা ১৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অনুষ্ঠানে সংগৃহীত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৫০ ডলার। এছাড়া আরও কিছু অর্থের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলোচনায় অংশ নেন ‘কাজী নজরুল ইসলাম চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা নজরুল গবেষক গুলশান আরা কাজী, কাজী শাহজাহান বেলাল, উত্তর আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল এনডাউমেন্ট কমিটির অন্যতম সদস্য ও প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কাজী নজরুলের চেতনা ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বিশ্ব শান্তির জন্য নজরুল চর্চা জরুরী। যদিও কাজটি সহজ নয়।”

মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, “বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ১৯২টি দেশের প্রতিনিধির কাছে কবি নজরুলকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাদের সহযোগিতা কামনা করবো। এজন্য আমরা সবাই মিলে জাতিসংঘে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারি।”

কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল সমগ্র বিশ্বের সম্পদ। তাকে তুলে ধরা মানেই বাংলাদেশকে তুলে ধরা।”

গুলশান আরা কাজী বলেন, “বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে শুরু আমাদের ঐতিহাসিক যাত্রা পথের নতুন মাইল ফলক। কেননা, এই বিজয়ের মাসেই আমরা কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুল চেয়ার প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু করেছি।

নজরুল গবেষক গুলশান আরা বলেন, “নজরুল সকল বাঙালির গর্বের ধন। তাই তার নামে কিছু করতে গেলে কোনও প্রতিবন্ধকতাই বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। আমাদের ভিশন-মিশন হচ্ছে নজরুলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।”

কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কাজী বেলাল বলেন, “সবার সাহায্য পেলে কাজী নজরুল ইসলাম চেয়ার প্রতিষ্ঠা কোনো সমস্যা হবে না। ১৯৮৫ সালে প্রবাসে কবি নজরুলকে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নজরুল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।”

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কবি নজরুলকে পরিচিত করা মানেই বিশ্বের কাছে আমাদেরকে পরিচিত করা। তার আদর্শ বাস্তবায়িত হলে বিশ্বে শান্তি আসবে। ১৯৯০ সালে নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। দিনে দিনে নজরুল ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেই আমরা কবি নজরুলকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার সাহস পাচ্ছি।”

ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, “বাংলাদেশের সাথে নতুন করে যোগাযোগ করইে নজরুল কনফারেন্স কমিটির সাথে পরিচয় হয়। আর সেই সূত্র ধরেই নজরুল চেয়ার প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু করতে চাই। আজ  নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের হৃদয় পেয়েছি। কবি নজরুলের জন্য যা করার তাই করবো, যেখানে যাওয়ার যাবো। তার টানে আমরা স্বপ্ন দেখছি, কবি নজরুলকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।”

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুল একাডেমির শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন শাহ আলম দুলাল ও মতলব আলী।

যক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে ‘ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র নর্থরিজ ক্যাম্পাসে ২০০২ সাল থেকে ‘নজরুল লেকচার’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছরের লেকচার অনুষ্ঠিত হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ‘দ্য পাসেনা রুম’-এ।

ক্লাসের স্পিকার ছিলেন কানেকটিকাট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট নজরুল গবেষক সুফিয়া উদ্দিন। তিনি নজরুল সাহিত্যকর্ম ও সংগ্রামী জীবন নিয়ে লেকচার দেন।

এখানেও ‘নজরুল চেয়ার’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে গঠিত ‘নজরুল এনডাউমেন্ট কমিটি’ নিরলসভাবে কাজ করছে। প্রবাসীদের সংগঠন ‘তরঙ্গ অব ক্যালিফোর্নিয়া’র এ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট অথরিটি।

‘তরঙ্গ অব ক্যালিফোর্নিয়া’র প্রেসিডেন্ট শিপার চৌধুরী বলেন, “ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ‘নজরুল চেয়ার’ স্থাপনের জন্য নজরুল এনডাউমেন্ট ফান্ডে চার লাখ ডলার থাকতে হবে। ইতোমধ্যে এক লাখ ডলার সংগ্রহ হয়ে গেছে।”

বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে এই ফান্ডে কেউ অংশ নিতে চাইলে তরঙ্গের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেছেন শিপার চৌধুরী। তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে লস এঞ্জেলেসে আগামী বছরের মে মাসে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলেও জানান তিনি।

শিপার এ সময় উল্লেখ করেন, শমসের মোবিন চৌধুরী ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে এই এনডাউমেন্ট কমিটির এক অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে ৫০ হাজার ডলার প্রদানের অঙ্গিকার করেন। তিনি একটি চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে চিঠি যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর এখন পর্যন্ত সে অর্থ পাওয়া যায়নি। লস এঞ্জেলেসের কন্সাল জেনারেলের মাধ্যমেও বহু দেন-দরবার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!